শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি

বিপদ দেখলে মানুষ মানত করে। ধারণা করে হয়তো বা এতে তার বিপদ কেটে যাবে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানত মানুষের কর্মের কোনো পরিবর্তন এনে দিতে পারে না। সে জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ يَأْتِي ابْنَ آدَمَ النَّذْرُ بِشَيْءٍ لَمْ يَكُنْ قُدِّرَ لَهُ، وَلَكِنْ يُلْقِيهِ النَّذْرُ إِلَى القَدَرِ قَدْ قُدِّرَ لَهُ، فَيَسْتَخْرِجُ اللَّهُ بِهِ مِنَ البَخِيلِ، فَيُؤْتِي عَلَيْهِ مَا لَمْ يَكُنْ يُؤْتِي عَلَيْهِ مِنْ قَبْلُ»

‘‘মানত বনী আদমের জন্য এমন কিছু বয়ে আনতে পারে না যা আামি তার তাকদীরে রাখি নি, বরং মানত তাকে তার জন্য তাকদীরে যা নির্ধারণ করা আছে সেটার উপর নিয়ে রাখে। ফলে এর দ্বারা আল্লাহ কেবল কৃপণের কিছু সম্পদ তার হাত ছাড়া করেন। তখন তার কাছে এমন কিছু আসে যা পূর্বে আসত না”[1]

ইমাম তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে : ‘‘তোমরা মানত করো না কেননা; তা তাকদীরের কোনো পরিবর্তন করতে পারে না...।’’[2]

এ জন্যেই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে মানত করার জন্য কোনো নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেন নি। তবে যেহেতু মানতের মাধ্যমে সম্মানের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তা এমন কারো নামে করতে হয় যিনি মানুষের বিপদাপদ দূরীকরণের মালিক। এ দু’টি বিষয় বিবেচনায় আনলে মানতকে আল্লাহর উপাসনায় পরিণত করার জন্য তাতে মোট দু’টি শর্ত পূর্ণ হতে হবেঃ

এক. তা কেবল আল্লাহ তা‘আলার সম্মানার্থে কেবল তাঁরই নামে এবং কেবল তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে।

দুই. পূর্বে বর্ণিত যাহহাক রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের মর্মানুযায়ী তা জাহেল লোকদের ওরস ও শির্ক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান মাযার ও মুকাম থেকে মুক্ত হতে হবে।

যারা মানত সঠিক হওয়ার জন্য এ দু’টি শর্তের কথা বিবেচনায় না এনে বিভিন্ন মাযার ও কবরে মানত করে, তারা মানতটি পূর্ণ করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে থাকলেও মূলত তাদের মানতের দ্বারা মাযার ও কবরস্থ সে অলি ও দরবেশের সম্মানই প্রদর্শিত হয়ে থাকে এবং মাযার ও কবরস্থ অলির নিকটেই তারা বিপদ দূরীকরণের জন্য তাদের আবদার করে থাকে। তারা যদি প্রকৃতপক্ষে তাদের বিপদ দূরীকরণের কথা আল্লাহর নিকটেই চেয়ে থাকতো, তা হলে কোনো অবস্থাতেই তারা কোনো মাযার বা কবরে মানত করতো না।

মানত আল্লাহর পছন্দনীয় কোনো উপাসনার মাধ্যম না হয়ে থাকলেও যেহেতু এর দ্বারা আল্লাহর সম্মান প্রদর্শিত হয়, সে জন্য মানতের শর্তানুযায়ী কেউ তা করলে সে মানত পূর্ণ করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায় এবং এ জাতীয় মানত পূর্ণ করা আল্লাহ তা‘আলার দৃষ্টিতে মু’মিনদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত হয়ে থাকে। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন :

﴿ يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ﴾ [الانسان: ٧]

‘‘তারা (মু‘মিনগণ) মানত পূর্ণ করে।’’[3]

>
[1].বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আইমান ওয়ান নুজুর, বাব : মানত পূর্ণ করা; ৪/৮/২৫৩; মুসলিম, প্রাগুক্ত; ভাগ্য অধ্যায়, পরিচ্ছেদ নং- (২), ৩/১২৬১।

[2]. ইমাম তিরমিযী, প্রাগুক্ত; ৪/১১২; নাসাই, প্রাগুক্ত; শপথ ও মানত অধ্যায় পরিচ্ছেদ: মানতের দ্বারা কৃপনের সম্পদ বের করে নেওয়া হয়; ৪/৭/১৬।

[3]. আল-কুরআন, সূরা দহর : ৭।