শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি
তৃতীয় প্রকার : উপাসনাগত শির্ক (الشرك في العبادات)

মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা হলো সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক। মানুষের জীবনের প্রতি অপর মানুষ এবং চন্দ্র, সূর্য, আগুন, পানি, পাথর, বৃক্ষ, পশু ও পাখি ইত্যাদির যতবড় অবদানই থাকুক না কেন- এরা সবাই মানুষের মতই আল্লাহর সৃষ্টি। কোন সৃষ্টি যখন মানুষের স্রষ্টা নয় তখন মানুষের প্রতি সৃষ্টির অবদান বা উপকার যা-ই থাকুক না কেন, কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সমান হতে পারে না। কেননা, মানুষের জীবনের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার যে অবদান রয়েছে এর সাথে অপর কারো অবদানের কোনো তুলনা হতে পারে না। মানুষের প্রতি আল্লাহর অবদানের দাবী হচ্ছে, তারা কারো উপাসনা করলে কেবল তাঁরই উপাসনা করবে। অন্য কারো নয়। তিনি তাদের সৃষ্টি করার ফলে তাদের উপর তাঁর যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হলো: তারা একমাত্র তাঁরই উপাসনা করবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«حَقُّ اللهِ عَلَى الْعبَادِ أَنْ يَعْبُدُوا اللهَ وَلاَيُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا»

“বান্দাদের উপর আল্লাহ তা‘আলার অধিকার হলো তারা যেন কেবল আল্লাহরই উপাসনা করে এবং তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক না করে।’’[1] যারা আল্লাহর এ অধিকারে অপর কাউকে শরীক করে, আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা সৃষ্টি আর স্রষ্টাকে এক করে নিল। সে জন্য তিনি তাদের এ হীনতম কর্মের সমালোচনা করে বলেছেন,

﴿ أَفَمَن يَخۡلُقُ كَمَن لَّا يَخۡلُقُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ١٧ ﴾ [النحل: ١٧]

“তবে কি যিনি সৃষ্টি করেন তিনি তাদের মতই হয়ে গেলেন যারা সৃষ্টি করে না, এর পরেও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’’[2]

আল্লাহ যখন মানুষের উপাসনা প্রাপ্তিকেই তাঁর কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে সাব্যস্ত করে নিয়েছেন, তখন উপাসনার মাধ্যমে অপর কোন সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শন করা যাবে না। আল্লাহ মানুষের উপর তাদের উপাসনা পাবার অধিকার সংরক্ষণ করেন বলেই তিনি তাদের প্রতি তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এককভাবে তাঁরই উপাসনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١ ﴾ [البقرة: ٢١]

“হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের সেই রবের উপাসনা কর যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, আশা করা যায় এতে তোমরা পরহেজগার হতে পারবে।’’[3] আবার তাঁর উপাসনার ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করে বলেছেন,

﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ ﴾ [النساء: ٣٦]

“তোমরা এককভাবে আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না।’’[4]আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করার অর্থ হচ্ছে- তাঁর রুবুবিয়্যাতের বৈশিষ্ট্যসমূহে কাউকে শরীক না করা এবং কোনো মানুষ বা অন্য কোন বস্তুর অবদান ও উপকারিতার প্রতি লক্ষ্য করে তাকে মর্যাদা ও সম্মান দিতে গিয়ে এমন কোন কাজ না করা, যা সে মানুষ বা সে বস্তুকে উপাস্যে পরিণত করে।

>
[1].এ হাদীসটি মা‘আজ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। দেখুন : মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং ৪৯।

[2]. আল-কুরআন, সূরা নাহাল : ২১।

[3]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাহ : ২১।

[4]. আল-কুরআন, সূরা নিসা : ৩৬।