নবীদের কাহিনী নবী চরিত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ছেড়ে যাওয়া দুই আলোকস্তম্ভ (المنارتان المتروكتان)

বিদায় হজ্জের ভাষণসমূহের এক স্থানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘আমি তোমাদের মাঝে ছেড়ে যাচ্ছি দু’টি বস্ত্ত। যতদিন তোমরা এ দু’টি বস্ত্ত অাঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নাহ’।[1] তিনি বলেন,الأَنْبِيَاءُ لَمْ يَرِثُوا دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَإِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ ‘নবীগণ কোন দীনার ও দিরহাম ছেড়ে যান না। ছেড়ে যান কেবল ইল্ম’।[2] আর শেষনবী (ছাঃ)-এর ছেড়ে যাওয়া সেই ইল্ম হ’ল কুরআন ও হাদীছ। দীনার ও দিরহামের ক্ষয় আছে, লয় আছে। কিন্তু ইল্মের কোন ক্ষয় নেই লয় নেই। ইল্ম চির জীবন্ত। যে ঘরে হাদীছের পঠন-পাঠন হয়, সে ঘরে যেন স্বয়ং শেষনবী (ছাঃ) কথা বলেন। যেমন ইমাম তিরমিযী স্বীয় হাদীছগ্রন্থ সম্পর্কে বলেন, مَنْ كَانَ فِي بَيْتِهِ هَذَا الْكِتَابُ فَكَأَنَّمَا فِي بَيْتِهِ نَبِيٌّ يَتَكَلَّمُ ‘যার ঘরে এই কিতাব থাকে, তার গৃহে যেন স্বয়ং নবী কথা বলেন’।[3] যিনি হাদীছ বর্ণনা করেন, স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী তার মুখ দিয়ে বের হয়।

যিনি হাদীছ অনুযায়ী আমল করেন, তিনি স্বয়ং নবীর আনুগত্য করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হাদীছকে অগ্রাহ্য করে, সে স্বয়ং নবীকে অগ্রাহ্য করে। আল্লাহ বলেন, فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ ‘অতএব যারা রাসূল-এর আদেশ-নিষেধের বিরোধিতা করবে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রেফতার করবে এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে’ (নূর ২৪/৬৩)। শুধু তাই নয় তার সমস্ত আমল আল্লাহর নিকটে বাতিল বলে গণ্য হবে (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জগদ্বাসীকে জান্নাতের প্রতি আল্লাহর পক্ষ হ’তে আহবানকারী (الدَّاعِى) হলেন মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের অবাধ্যতা করল, সে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ হলেন مُحَمَّدٌ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ ‘মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী মানদন্ড’।[4] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَلاَ إِنِّى أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘জেনে রেখ, আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি এবং তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত (অর্থাৎ হাদীছ)।[5]

عَنْ أَبِىْ رَافِعٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيْهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِى مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُوْلُ لاَ أَدْرِى مَا وَجَدْنَا فِى كِتَابِ اللهِ اتَّبَعْنَاهُ ، رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاؤُدَ وَالتِّرْمِذِىُّ-

‘আবু রাফে‘ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে, আমি এসব কিছু জানিনা। যা আল্লাহর কিতাবে পাব, তারই আমরা অনুসরণ করব’।[6]

কুরআন ও হাদীছ হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া দুই অনন্য উত্তরাধিকার, দুই জীবন্ত মু‘জেযা। যা মানবজাতির জন্য চিরন্তন মুক্তির দিশা। অতএব ইহকালে ও পরকালে সফলকাম হওয়ার জন্য সর্বাবস্থায় সেদিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!

[1]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৮৬।

[2]. আহমাদ হা/২১৭৬৩; তিরমিযী হা/২৬৮২; আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২।

[3]. শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি.), তাযকেরাতুল হুফফায ২/৬৩৪ পৃঃ ক্রমিক সংখ্যা ৬৫৮; সুনান তিরমিযী, তাহকীক : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (বৈরূত : ১ম সংস্করণ, ১৪০৮/১৯৮৭) পৃঃ ৩।

[4]. বুখারী হা/৭২৮১; মিশকাত হা/১৪৪।

[5]. আবুদাঊদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩।

[6]. আবুদাঊদ হা/৪৬০৫; তিরমিযী হা/২৬৬৩; মিশকাত হা/১৬২।