যে আরবী ভাষাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, সেই ভাষাতেই কুরআন সর্বত্র পঠিত হয়। খ্রিষ্টানরা বাইবেলের কথিত অনুবাদ পাঠ করে থাকে। তাও পাঠকারীর সংখ্যা অতি নগণ্য। যেকারণে বিশিষ্ট ইভানজেলিষ্ট জর্জ গ্যালাপের মতে, ‘আমেরিকানরা হ’ল বাইবেল অন্ধ জাতি’ (দৈনিক আমার দেশ)। অর্থাৎ আসল বাইবেল সম্পর্কে তারা অন্ধ। যা কখনোই তারা দেখেনি। বস্ত্ততঃ তওরাত, যবূর, ইনজীল প্রভৃতি ইলাহী গ্রন্থ যে ভাষায় নাযিল হয়েছিল, সেই ভাষা বা বর্ণমালা এমনকি বেদ, যিন্দাবেস্তা প্রভৃতির ভাষা ও বর্ণমালা এবং সেসবের ভাষাভাষী কোন মানুষের অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে নেই। পক্ষান্তরে আরবী ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কোটি কোটি এবং তা ক্রমবর্ধমান। আরবী বর্তমানে জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে বরিত।
উল্লেখ্য যে, হিব্রু (الْعِبْرَانِى) যা তওরাতের ভাষা ছিল, খালেদী (خَالِدِي) যা মসীহ ঈসার ভাষা ছিল, দুররাই (دُرَّي) যা যিন্দাবিস্তার ভাষা ছিল, সংস্কৃত (سَنْسكِرِت) যা বেদ-এর ভাষা ছিল, তা পৃথিবীর কোন দেশ এমনকি কোন যেলা বা মহল্লাতেও জনগণের মুখের ভাষা হিসাবে এখন চালু নেই। আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঐসব ভাষা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেখে দেওয়া হয়েছে আরবী ভাষাকে। যা কুরআন-হাদীছের স্বার্থে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবন্ত থাকবে। উল্লেখ্য যে, বাইবেলের যে ‘নতুন নিয়ম’ (New Testament) পাওয়া যায়, তাতে লেখা আছে Translated out of the original Greek known as the authorised version (মূল গ্রীক থেকে অনূদিত। যা অনুমোদিত ভাষান্তর হিসাবে পরিচিত)। এতে বুঝা যায় যে, বাইবেলের আরও version আছে। যা কোন কারণ বশতঃ অনুমোদিত হয়নি। দ্বিতীয়তঃ বর্তমান বাইবেল গ্রীক ভাষা থেকে অনূদিত। কিন্তু প্রশ্ন হ’ল ঈসা (আঃ) তো গ্রীসের বাসিন্দা ছিলেন না। তার মাতৃভাষাও গ্রীক ছিল না। তিনি ফিলিস্তীনে জন্ম গ্রহণ করেন ও নিজ এলাকায় প্রচলিত খালেদী ভাষায় তিন বছর ধর্ম প্রচার করেন। তাহ’লে ইনজীলের মূল ভাষা গ্রীক হ’ল কিভাবে?
আধুনিক সেক্যুলারিজমের কুপ্রভাব কুরআনের প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি। কেননা কুরআনের ভাষা সরাসরি আল্লাহর ভাষা। এটি হ’ল জান্নাতের ভাষা। কুরআনের প্রতিটি বাক্য, শব্দ ও বর্ণ আল্লাহর নূরে আলোকিত। যা বিশ্বাসী মুসলমানের হৃদয় জগতকে আলোকিত করে। জাহেলিয়াতের গাঢ় অন্ধকার দূরীভূত করে। বিষাদিত অন্তরকে আমোদিত করে। জর্জরিত অন্তরকে সুশীতল করে। মুমিনের হৃদয়ে কুরআনের প্রভাব তাই অতুলনীয় ও অনির্বচনীয়। যার প্রতি হরফে মুসলমান কমপক্ষে দশটি করে নেকী পায়। যা তার পরকালকে সমৃদ্ধ করে। মানছূরপুরীর হিসাব মতে কুরআনের সর্বমোট হরফের সংখ্যা ৩,৪৬,৯৯৮টি (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৭৬)। বিশিষ্ট কুরআন গবেষক কনস্ট্যান্স প্যাডউইক তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘কুরআন তার অনুসারীদের অন্তরে জাগ্রত। তাদের কাছে এটি নিছক কিছু শব্দ বা কথামালা নয়। এগুলি আল্লাহর নূরে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার জ্বালানী’ (দৈনিক আমার দেশ)। তুরস্কের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শাসক কামাল পাশা অতি উৎসাহী হয়ে আরবী আযান বাতিল করে তুর্কী আযান চালু করেন। পরে জনরোষে পড়ে পুনরায় আরবী আযান চালু করতে বাধ্য হন।