নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

ইবনু কাছীর বলেন, ছফর মাসের দু’একদিন বাকী থাকতে অথবা রবীউল আউয়াল মাসের প্রথম দিন অসুখের সূচনা হয় (আল-বিদায়াহ ৫/২২৪)। এদিন মধ্যরাতে রাসূল (ছাঃ) স্বীয় গোলাম আবু মুওয়াইহিবাহ(أَبُو مُوَيْهِبَةَ) কে সাথে নিয়ে বাক্বী‘ গোরস্থানে গমন করেন ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর প্রচন্ড মাথাব্যথার মাধ্যমে অসুখের সূচনা হয়। যা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল’ (আহমাদ হা/১৬০৪০)।[1] আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন যেদিন তাঁর অসুখ শুরু হয়। তখন আমি বললাম, হায় মাথাব্যথা!... তিনি বললেন, আমারও প্রচন্ড মাথাব্যথা। অতঃপর তিনি বললেন, ادْعُو إِلَىَّ أَبَاكِ وَأَخَاكِ حَتَّى أَكْتُبَ لأَبِى بَكْرٍ كِتَاباً فَإِنِّى أَخَافُ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ وَيَتَمَنَّى مُتَمَنِّى أَنَا أَوْلَى. وَيَأْبَى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلاَّ أَبَا بَكْرٍ ‘তুমি তোমার পিতা ও ভাইকে আমার নিকটে ডেকে আনো। যাতে আমি আবুবকরের জন্য একটি কাগজ লিখে দিতে পারি। কেননা আমি ভয় পাচ্ছি যে, কোন ব্যক্তি বলবে বা কোন উচ্চাভিলাষী আকাংখা করবে যে, আমিই যোগ্য। অথচ আল্লাহ ও মুমিনগণ আবুবকর ব্যতীত অন্য সবাইকে প্রত্যাখ্যান করে’।[2] অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে থাকা অবস্থাতেই মাথাব্যথা শুরু হয় এবং একথাও প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) অসুখের শুরুর দিনেই আবুবকর (রাঃ)-এর নামে খিলাফত লিখে দিতে চেয়েছিলেন।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তাঁর দেহের উপর হাত রাখলাম। তখন তাঁর লেপের উপরেও তাপ অনুভূত হচ্ছিল। শরীর এত গরম ছিল যে, হাত পুড়ে যাচ্ছিল। এতে আমি বিস্ময়বোধ করলে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّا كَذَلِكَ يُضَعَّفُ لَنَا الْبَلاَءُ وَيُضَعَّفُ لَنَا الأَجْرُ. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَىُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلاَءً قَالَ : الأَنْبِيَاءُ. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ : ثُمَّ الصَّالِحُونَ، إِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيُبْتَلَى بِالْفَقْرِ حَتَّى مَا يَجِدُ أَحَدُهُمْ إِلاَّ الْعَبَاءَةَ يُحَوِّيهَا، وَإِنْ كَانَ أَحَدُهُمْ لَيَفْرَحُ بِالْبَلاَءِ كَمَا يَفْرَحُ أَحَدُكُمْ بِالرَّخَاءِ- رواه إبن ماجه-

‘এভাবে আমাদের কষ্ট দ্বিগুণ হয় এবং আমাদের পুরস্কারও দ্বিগুণ হয়। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত কারা? তিনি বললেন, নবীগণ। আমি বললাম, তারপর কারা? তিনি বললেন, নেককার ব্যক্তিগণ। এমনকি তাদের কেউ দারিদ্রে্যর কষাঘাতে এমনভাবে জর্জরিত হবে যে, পোষাক হিসাবে মাথার ‘আবা’ (الْعَبَاءَةُ) ছাড়া কিছুই পাবে না। তাদের কেউ বিপদে পড়লে এমন খুশী হবে, যেমন তোমাদের কেউ প্রাচুর্য পেলে খুশী হয়ে থাক’।[3]

তাঁর মোট অসুখের সময়কাল ছিল ১৩ অথবা ১৪ দিন। যার মধ্যে অধিকাংশ দিন তিনি মসজিদে এসে জামা‘আতে ইমামতি করেন। শেষের দিকে বৃহস্পতিবার এশা থেকে সোমবার ফজর পর্যন্ত ১৭ ওয়াক্ত ছালাতে আবুবকর (রাঃ) ইমামতি করেন।

[1]. আহমাদ হা/১৬০৪০; মুহাক্কিক শু‘আয়েব আরনাঊত্ব বলেন, হাদীছ ছহীহ। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন ওমর আল-‘আবলীর অপরিচিতির কারণে সনদ যঈফ। আলবানী, যঈফাহ হা/৬৪৪৭। মুবারকপুরী সূত্র বিহীনভাবে ২৯শে ছফর সোমবার বাক্বী‘ গোরস্থানে একটি জানাযায় অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে অসুখের সূচনা হয় বলেছেন’ (আর-রাহীক্ব ৪৬৪-৬৫ পৃঃ)। যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

[2]. আহমাদ হা/২৫১৫৬; ছহীহাহ হা/৬৯০; মুসলিম হা/২৩৮৭।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/৪০২৪; ছহীহাহ হা/১৪৪।