নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায়কারী নিয়োগ (توظيف العمال لجلب الصدقات)

নবগঠিত মাদানী রাষ্ট্রের আর্থিক ভিত মযবুত করার জন্য এবং ফরয যাকাত ও অন্যান্য ছাদাক্বা সমূহ সুশৃংখলভাবে আদায় ও বণ্টনের জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কেন্দ্রীয়ভাবে রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দান করেন। ৯ম হিজরী সনের মুহাররম মাস থেকে এই সকল নিয়োগ কার্যকর হয়। এতদুদ্দেশ্যে তিনি রাষ্ট্রের অধীন ১৬টি অঞ্চল ও গোত্রের জন্য ১৬ জন রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।[1] উল্লেখ্য যে, ২য় হিজরীর রামাযান মাসে ছিয়াম ফরয হয় এবং শাওয়াল মাসে যাকাত ফরয হয়। নিম্নে যাকাত আদায়কারীসহ রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব অঞ্চল সমূহের বিবরণ প্রদত্ত হ’ল।-

কর্মকর্তা

অঞ্চল/গোত্র

উয়ায়না বিন হিছন

বনু তামীম

বুরাইদা বিন হুছাইব আল-আসলামী

আসলাম ও গেফার

‘আববাদ বিন বিশ্র আশহালী

সুলায়েম ও মুযায়না

রাফে‘ বিন মাকীছ (رَافِع بن مَكِيث)

জুহায়না

আমর ইবনুল ‘আছ

বনু ফাযারাহ

যাহহাক বিন সুফিয়ান

বনু কেলাব

বুসর বিন সুফিয়ান আল-কা‘বী

বনু কা‘ব

ইবনুল লুৎবিয়াহ আল-আযদী

বনু যুবিয়ান

মুহাজির বিন আবু উমাইয়া (তাদের উপস্থিতিতেই এখানে ভন্ডনবী আসওয়াদ ‘আনাসীর আবির্ভাব ঘটে)

ছান‘আ শহর

১০

যিয়াদ বিন লাবীদ

হাযরামাউত

১১

‘আদী বিন হাতেম

বনু ত্বাঈ ও বনু আসাদ

১২

মালেক বিন নুওয়াইরাহ

বনু হানযালা

১৩

যিবরিক্বান বিন বদর

বনু সা‘দের একটি অংশে

১৪

ক্বায়েস বিন ‘আছেম

বনু সা‘দের আরেকটি অংশে

১৫

‘আলা ইবনুল হাযরামী

বাহরায়েন

১৬

আলী ইবনু আবী ত্বালেব

নাজরান (ছাদাক্বা ও জিযিয়া উভয়টি আদায়ের জন্য)

এ সময় কোন কোন গোত্র জিযিয়া ও ছাদাক্বা দিতে অস্বীকার করে। এমনকি অন্যকে দিতে বাধা প্রদান করে। এমনি একটি গোত্র ছিল বনু তামীম। ৯ম হিজরীর মুহাররম মাসে উক্ত গোত্রের জন্য দায়িত্বশীল রাজস্ব কর্মকর্তা উয়ায়না বিন হিছন মুহাজির ও আনছারদের বাইরে ৫০ জনের একটি অশ্বারোহী দল নিয়ে এদের উপরে আকস্মিক হামলা চালালে সবাই পালিয়ে যায়। তাদের ১১ জন পুরুষ, ২১ জন মহিলা ও ৩০ জন শিশু বন্দী হয়ে মদীনায় নীত হয় এবং রামলা বিনতুল হারেছ-এর গৃহে তাদের রাখা হয়। পরদিন বনু তামীমের আক্বরা বিন হাবেস সহ কয়েকজন নেতা বন্দীমুক্তির জন্য মদীনায় আসেন। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে উত্তম উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন এবং তাদের বন্দীদের ফেরৎ দেন’।[2] (বিস্তারিত দ্রঃ প্রতিনিধি দল ক্রমিক ৯)

জনৈক রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনুল লুৎবিয়াহ(إِبْنُ اللُّتْبِيَّة) ছাদাক্বা আদায় করতে গিয়ে নিজের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয্দ গোত্রের ইবনুল লুৎবিয়াহকে ছাদাক্বা আদায়ের দায়িত্বশীল হিসাবে নিয়োগ দান করেন। অতঃপর যখন তিনি ফিরে আসেন, তখন বলেন,هَذَا لَكُمْ، وَهَذَا أُهْدِىَ لِىْ ‘এটি তোমাদের জন্য এবং এটি আমাকে হাদিয়া প্রদান করা হয়েছে’। একথা শুনতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে যান এবং হামদ ও ছানার পরে বলেন,فَمَا بَالُ الْعَامِلِ نَسْتَعْمِلُهُ؟ فَيَأْتِينَا فَيَقُولُ هَذَا مِنْ عَمَلِكُمْ وَهَذَا أُهْدِىَ لِى ‘আদায়কারীর কি হয়েছে? যাকে আমরা নিয়োগ দিলাম। অতঃপর সে আমাদের কাছে এল আর বলল, এটি তোমাদের এবং এটি আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে’।فَهَلاَّ جَلَسَ فِى بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ أُمِّهِ، فَيَنْظُرَ يُهْدَى لَهُ أَمْ لاَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلاَّ جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ ‘তাহ’লে কেন সে তার পিতা বা মাতার গৃহে বসে থাকেনা? অতঃপর সে দেখুক তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি না? যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, তোমাদের যে কেউ আদায়কৃত মাল থেকে যতটুকু গ্রহণ করবে, ততটুকু ক্বিয়ামতের দিন তাকে স্বীয় স্কন্ধে বহন করে নিয়ে উঠতে হবে। যদি তা উট হয়, গরু হয় বা ছাগল হয়’। অতঃপর তিনি তাঁর দু’হাত উঁচু করলেন। এমতাবস্থায় আমরা তাঁর দুই বগলের সাদা অংশ দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি তিনবার বলেন,اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ ‘হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিলাম?’ (বুখারী হা/২৫৯৭, ৬৬৩৬; মুসলিম হা/১৮৩২)

[শিক্ষণীয় : (১) জনগণের প্রয়োজনে ও রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন একান্তভাবেই যরূরী। সেকারণ কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল ফান্ডে ছাদাক্বা প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যুদ্ধ করা জায়েয। (২) বায়তুল মাল আদায়কারী ও হিসাব সংরক্ষণকারীর জন্য তাকে প্রদত্ত বেতন-ভাতার বাইরে কোনরূপ হাদিয়া গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।]

[1]. আর-রাহীক্ব ৪২৪-২৫ পৃঃ; ওয়াক্বেদী ৩/৯৭৩; ইবনু হিশাম ২/৬০০; ইবনু সা‘দ ২/১২১; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৪৫।

ইবনুল ক্বাইয়িম ও মুবারকপুরী ইয়াযীদ ইবনুল হুছাইন লিখেছেন। কিন্তু ওয়াক্বেদী ও ইবনু সা‘দ বুরাইদা বিন হুছাইব আল-আসলামী লিখেছেন। ইয়াযীদ ইবনুল হুছাইন নামে ‘আসলাম’ গোত্রের কাউকে না পাওয়ায় আমরা বুরাইদা বিন হুছাইব আল-আসলামী নামটিকেই অগ্রাধিকার দিলাম। যিনি ‘আসলাম’ গোত্রের নেতা ছিলেন (আল-ইছাবাহ, বুরাইদা ক্রমিক ৬৩২)।

[2]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা হুজুরাত ৪-৫ আয়াত; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৪৬; ইবনু হিশাম ২/৫৬২, ৫৬৭; তিরমিযী হা/৩২৬৭।