ত্বায়েফের বিখ্যাত ছাক্বীফ গোত্রের এই প্রতিনিধিদল ৯ম হিজরীর রামাযান মাসে মদীনায় আসে। এগারো মাস আগে ত্বায়েফ দুর্গ হ’তে অবরোধ উঠিয়ে ফিরে আসার সময় তাদের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করার জন্য সাথীদের দাবীর বিপরীতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হেদায়াতের দো‘আ করে বলেছিলেন।اللَّهُمَّ اهْدِ ثَقِيفًا وَأْتِ بِهِمْ ‘হে আললাহ! তুমি ছাক্বীফদের হেদায়াত করো ও তাদেরকে এনে দাও’।[1] আল্লাহ তাঁর রাসূল-এর দো‘আ কবুল করেছিলেন এবং তিনি ত্বায়েফ থেকে ফিরে মক্কায় ওমরাহ করে ৮ম হিজরীর ২৪শে যুলক্বা‘দাহ মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই ছাক্বীফ গোত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ওরওয়া বিন মাসঊদ ছাক্বাফী পথিমধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে ইসলাম কবুল করেন’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১৭)। তাঁর দশজন স্ত্রী ছিল। মুসলমান হওয়ার পর রাসূল (ছাঃ)-এর হুকুমে চার জনকে রেখে বাকীদের তালাক দেন। ইতিপূর্বে হোদায়বিয়া সন্ধির প্রাক্কালে তিনি কুরায়েশদের পক্ষে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে দূতিয়ালি করেন। ইনি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত মুগীরাহ বিন শো‘বা (রাঃ)-এর চাচা ছিলেন। যিনি আগেই ইসলাম কবুল করেছিলেন।
ওরওয়া ফিরে এসে নিজ সম্প্রদায়ের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। বহু লোক তাঁর দাওয়াতে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। একদিন তিনি বাড়িতে নিজ কক্ষে ছালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক দুষ্টমতি তাকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ে মারে। তাতে তিনি শহীদ হয়ে যান (আল-ইছাবাহ, ‘উরওয়া ক্রমিক ৫৫৩০)।
কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর দাওয়াত সকলের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই ‘আব্দে ইয়ালীল(عَبْدُ يالِيل بن عمرو) এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ৯ম হিজরীর রামাযান মাসে মদীনায় পৌঁছে। এই দলে ছয় জন সদস্য ছিলেন। যাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন পরবর্তীকালে খ্যাতনামা ছাহাবী ও হযরত ওমরের সময়ে প্রথম ভারত অভিযানকারী বিজয়ী সেনাপতি ওছমান বিন আবুল ‘আছ ছাক্বাফী। এঁরা মদীনায় পৌঁছলে রাসূল (ছাঃ)-এর হুকুমে মুগীরা বিন শো‘বা এঁদের আপ্যায়ন ও আতিথেয়তার দায়িত্বে নিয়োজিত হন।
উল্লেখ্য যে, প্রতিনিধি দলের নেতা ‘আব্দে ইয়ালীল ছিলেন সেই ব্যক্তি, যার নিকটে ১০ম নববী বর্ষের শাওয়াল মোতাবেক ৬১৯ খৃষ্টাব্দের মে/জুন মাসের প্রচন্ড খরতাপের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কেবলমাত্র যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে মক্কা থেকে ৯০ কি.মি. বা ৬০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে এসে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। বিনিময়ে তিনি ত্বায়েফের কিশোর ছোকরাদেরকে তাঁর পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিলেন। তারা তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে তিন মাইল পর্যন্ত পিছু ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। দীর্ঘ এক যুগ পরে ত্বায়েফের সেই দুর্ধর্ষ নেতাই আজ রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে হেদায়াতের ভিখারী। আল্লাহর কি অপূর্ব মহিমা!
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ প্রতিনিধি দলের জন্য মসজিদে নববীর কাছাকাছি তাঁবুর ব্যবস্থা করতে বললেন। যাতে তারা সেখান থেকে মসজিদে ছালাতের দৃশ্য দেখতে পায় ও কুরআন শুনতে পায়।
রাসূল (ছাঃ)-এর এই দূরদর্শী ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কাজ হ’ল। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের অন্তরে ইসলাম প্রভাব বিস্তার করল। ‘আব্দে ইয়ালীলের নেতৃত্বে তারা একদিন এসে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ইসলামের বায়‘আত গ্রহণ করল। তবে অত্যন্ত হুঁশিয়ার নেতা হিসাবে এবং স্বীয় মূর্খ সম্প্রদায়কে বুঝানোর স্বার্থে বায়‘আতের পূর্বে নিজ সম্প্রদায়ের লালিত রীতি-নীতি ও মন-মানসিকতার আলোকে বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, যাতে পরবর্তীতে কোন প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ না থাকে এবং লোকেরা বলতে না পারে যে, কোনরূপ আলোচনা ছাড়াই তারা মুসলমান হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে তাদের প্রশ্নোত্তর সমূহ নিম্নে বর্ণিত হ’ল।-
১ম : আমাদেরকে ছালাত পরিত্যাগের অনুমতি দেওয়া হৌক! কারণ তারা এর মধ্যে নিজেদের হীনতা দেখেছিল।
জওয়াব : তিনি বললেন,لاَ خَيْرَ فِى دِينٍ لاَ رُكُوعَ فِيهِ ‘ঐ দ্বীনে কোন কল্যাণ নেই, যার মধ্যে ছালাত নেই’।[2]
২য় : আমাদেরকে জিহাদ ও যাকাত থেকে মুক্ত রাখা হৌক!
জওয়াব : রাসূল (ছাঃ) এটিকে আপাততঃ মেনে নিলেন। ছাহাবায়ে কেরামকে বললেন,سَيَتَصَدَّقُونَ وَيُجَاهِدُونَ إِذَا أَسْلَمُوا ‘সত্বর ওরা ছাদাক্বা দিবে ও জিহাদ করবে, যখন ওরা ইসলাম কবুল করবে’।[3]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ‘আব্দে ইয়ালীলের আরও কিছু বিষয়ের উপরে কথোপকথন উদ্ধৃত করেছেন। যেমন-
৩য় : আমাদের লোকেরা অধিকাংশ সময় কার্যোপলক্ষে বাইরে থাকে। সেকারণ তাদের জন্য ব্যভিচারের অনুমতি আবশ্যক।
জওয়াব : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা বনু ইস্রাঈল ৩২ আয়াতটি পাঠ করে শুনান এবং এটি নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান।
৪র্থ : আমাদের সকল অর্থ-সম্পদই সূদের অন্তর্ভুক্ত। অতএব সূদী কারবারের অনুমতি দেওয়া হৌক।
জওয়াব : তিনি তাদেরকে সূরা বাক্বারাহ ২৭৮ আয়াত শুনিয়ে বলেন, আসল টাকাই কেবল তোমরা পাবে এবং সূদের অর্থ ছেড়ে দিতে হবে।
৫ম : আমাদেরকে মদ্যপানের সুযোগ অব্যাহত রাখা হৌক। কেননা আমাদের লোকেরা এতে এমনভাবে অভ্যস্ত যে, তারা তা ছাড়তেই পারবে না।
জওয়াব : রাসূল (ছাঃ) তাকে সূরা মায়েদাহ ৯০ আয়াতটি পাঠ করে শুনান এবং একে সিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই বলে জানান। কথাগুলি শুনে ‘আব্দে ইয়ালীল তাঁবুতে ফিরে গেলেন এবং রাতে সঙ্গীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। পরের দিন এসে পুনরায় রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে কথাবার্তা শুরু করলেন।
৬ষ্ঠ : আমরা আপনার সব কথা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমাদের উপাস্য দেবী ‘রববাহ’ (ربَّه) সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
জওয়াব : রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা ওটাকে গুঁড়িয়ে দিবে। একথা শুনে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হায় হায় করে উঠে বলল, দেবী একথা জানতে পারলে আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে। তাদের এই অবস্থা দেখে ওমর ফারূক (রাঃ) আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। বলে উঠলেন, হে ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল![4]مَا أَجْهَلَك إنَّمَا الرَّبَّةُ حَجَرٌ ‘তুমি কত বড় মূর্খ! ‘রববাহ’ তো একটা পাথর ছাড়া কিছুই নয়’? ‘আব্দে ইয়ালীল ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ওমর! আমরা তোমার সঙ্গে কথা বলতে আসিনি। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে অনুরোধ করলেন যে, দেবীমূর্তি ভাঙ্গার দায়িত্বটা আপনি গ্রহণ করুন’। রাসূল (ছাঃ) তাতে রাযী হলেন এবং বললেন, ঠিক আছে আমি ওটা ভাঙ্গার জন্য লোক পাঠাব’। প্রতিনিধি দলের জনৈক সদস্য বললেন, আপনার লোককে আমাদের সাথে পাঠাবেন না। বরং পরে পাঠাবেন।
সীরাহ ছহীহাহর লেখক আরও কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। যেমন তারা বলেছিল আমাদের দেশ খুবই ঠান্ডা। অতএব আমাদের ওযূ করার কষ্ট থেকে রেহাই দেওয়া হৌক। আমাদেরকে ‘নাবীয’ (খেজুর পচা মদ) বানানোর অনুমতি দেওয়া হৌক এবং আমাদের পলাতক দাস আবু বাকরাহ ছাক্বাফীকে ফেরত দেওয়া হৌক। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদের এসব দাবী নাকচ করে দেন। এছাড়াও তারা কুরআনের সূরা, পারা ইত্যাদির তারতীব সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু কোনটাই গ্রহণ করা হয়নি। অবশেষে তারা মসজিদে নববীর পার্শ্বে দীর্ঘ অবস্থানের ফলে এবং ছাহাবীগণের সাথে মেলামেশার ফলে দ্রুত ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনকি তারা রামাযানের অবশিষ্ট ছিয়ামগুলি পালন করে (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১৯)।
এইভাবে বিস্তারিত আলোচনা শেষে তারা সবাই ইসলাম কবুল করল। অতঃপর ১৫ দিন পর বিদায়কালে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য একজন ইমাম নিযুক্ত করে দিন। তখন তিনি ওছমান বিন আবুল ‘আছ ছাক্বাফীকে তাদের ইমাম ও নেতা নিযুক্ত করে দেন। কেননা দলের মধ্যে তিনিই রাসূল (ছাঃ) ও আবুবকর (রাঃ)-এর নিকটে কুরআন ও শরী‘আতের বিধান সমূহ বেশী শিখেছিলেন। যদিও বয়সে ছিলেন সবার ছোট। বয়োকনিষ্ঠ হ’লেও তিনি অত্যন্ত যোগ্য নেতা প্রমাণিত হন। ১১ হিজরীতে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ধর্মত্যাগের হিড়িক পড়ে গেলে ছাক্বীফ গোত্র ধর্মত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে। তখন তিনি স্বীয় গোত্রকে ডেকে বলেন,كُنتم آخِرَ الناسِ إسلامًا فلا تَكُونوا أوَّلَهُم اِرْتِدادًا ‘তোমরা সবার শেষে ইসলাম গ্রহণ করেছ। অতঃপর সবার আগে ইসলাম ত্যাগী হয়ো না’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৫৪৪৫)। তার একথা শুনে সবাই ফিরে আসে।
ইসলাম কবুল করার পর ত্বায়েফ ফিরে যাবার পথে প্রতিনিধিদল নিজ সম্প্রদায়ের নিকটে নিজেদের ইসলাম কবুলের কথা গোপন রাখার ব্যাপারে একমত হ’লেন। যাতে লোকেদের মন-মানসিকতা পরখ করে নেয়া যায়। অতঃপর তারা বাড়ীতে পৌঁছে গেলে লোকজন জমা হয়ে গেল এবং মদীনার খবর জানতে চাইল। তারা বললেন, মুহাম্মাদ তাদেরকে বলেছেন যে, তোমরা ইসলাম কবুল কর। ব্যভিচার, মদ্যপান, সূদখোরী ছেড়ে দাও। নইলে যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্তত হও’। একথা শুনে লোকদের মধ্যে জাহেলিয়াত মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো এবং ‘আমরাও যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্তত’ বলে হুংকার ছাড়ল। প্রতিনিধিদল বললেন, ঠিক আছে। তোমরা যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নাও এবং দুর্গ মেরামতে লেগে যাও। লোকেরা চলে গেল এবং দু’দিন বেশ তোড়জোড় চলল। কিন্তু তৃতীয় দিন তারা এসে বলতে শুরু করল, মুহাম্মাদের সঙ্গে আমরা কিভাবে লড়ব। সারা আরব তার কাছে নতি স্বীকার করেছে। অতএবإِرْجِعُوا إلَيْه فَأَعْطُوْهُ مَا سَأَلَ ‘তার কাছে ফিরে যাও এবং তিনি যা চান কবুল করে নাও’। এভাবে আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দিলেন।
এতক্ষণে প্রতিনিধিদল প্রকৃত তথ্যসমূহ প্রকাশ করে দিল এবং লোকেরা সবকিছু শুনে ইসলাম কবুল করে নিল (যাদুল মা‘আদ ৩/৫২৩)।
মূর্তিভাঙ্গা(هَدْمُ اللاة أو ربة) :
কয়েকদিন পরেই রাসূল (ছাঃ) আবু সুফিয়ান বিন হারব-এর নেতৃত্বে মুগীরাহ বিন শো‘বা সহ একটি দল প্রেরণ করেন ছাকবীফ গোত্রের দেবীমূর্তি ‘রববাহ’ ভেঙ্গে ফেলার জন্য। যা ‘লাত’ (لات) নামে প্রসিদ্ধ (ইবনু হিশাম ২/৫৪১)। মূর্তি ভাঙ্গার কথা শুনে বনু ছাক্বীফের নারীরা তার চারপাশে জমা হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় মুগীরা (রাঃ) তাঁর সাথীদের বললেন,وَاللهِ لَأَضْحِكَنَّكُمْ مِنْ ثَقِيفٍ ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে ছাক্বীফদের ব্যাপারে হাসাবো’। অতঃপর তিনি মূর্তির প্রতি গদা নিক্ষেপ করতে গিয়ে নিজেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাত-পা ছুড়তে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে ছাক্বীফের লোকেরা হায় হায় করে উঠে বলল,أَبْعَدَ اللهُ الْمُغِيرَةَ قَتَلَتْهُ الرَّبَّةُ ‘আল্লাহ মুগীরাকে ধবংস করুন! দেবী ওকে শেষ করে দিয়েছে’। একথা শুনে মুগীরা লাফিয়ে উঠিয়ে দাঁড়ালেন এবং ছাক্বীফদের উদ্দেশ্যে বললেন,قَبَّحَكُمُ اللهُ يَا مَعْشَرَ ثَقِيفٍ إنَّمَا هِيَ لَكَاعُ حِجَارَةٍ وَمَدَرٍ فَاقْبَلُوا عَافِيَةَ اللهِ وَاعْبُدُوهُ ‘আল্লাহ তোমাদের মন্দ করুন হে ছাক্বীফগণ! এটা তো পাথর ও মাটির একটা মূর্তি ছাড়া কিছুই নয়। তোমরা আল্লাহর মার্জনা গ্রহণ কর এবং তাঁর ইবাদত কর’।
অতঃপর তিনি মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দিলেন এবং ভিত সমেত মন্দির গৃহটি নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। সেখানে রক্ষিত মূল্যবান পোষাকাদি ও অলংকার সমূহ উঠিয়ে তিনি মদীনায় নিয়ে আসেন। রাসূল (ছাঃ) সেগুলিকে ঐদিনই বণ্টন করে দেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন।[5]
[শিক্ষণীয় : অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নিলেও মানুষ স্বভাবতঃ দৃশ্যমান কোন ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি বা বস্ত্তর প্রতি শ্রদ্ধা ও পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করতে বেশী আগ্রহশীল। এর ফলে আল্লাহ গৌণ হয়ে যান এবং মূর্তি মুখ্য হয়। এটা স্পষ্ট শিরক। বর্তমান যুগে মুসলমানেরা কবরপূজা, ছবি ও প্রতিকৃতি পূজা, স্থান পূজা ও স্মৃতিসৌধ পূজার দিকে ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছে। অথচ এগুলি শুনতেও পায় না, দেখতেও পায় না, একেবারেই ক্ষমতাহীন। তবুও এর প্রতি কোন কোন মানুষের আবেগ এত বেশী যে, ভক্তরা এজন্য তাদের জান-মাল ব্যয় করতেও দ্বিধা করে না। আর এই অন্ধ আবেগ সৃষ্টি করে শয়তান। যাতে মহা শক্তিধর আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষের ঠিকানা হয় জাহান্নাম। অতএব শয়তানের ধোঁকা থেকে ঈমানদারগণ সাবধান!]
[2]. ইবনু হিশাম ২/৫৪০; সনদ যঈফ, যঈফুল জামে‘ হা/৪৭১১; আহমাদ হা/১৭৯৪২। বর্ণনাটির সকল সূত্রই বিশুদ্ধ। কেবল ওছমান বিন আবুল ‘আছ থেকে হাসানের শ্রবণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে’ -আরনাঊত্ব।
[3]. আবুদাঊদ হা/৩০২৫, সনদ ছহীহ। উপরোক্ত বিষয়ের মধ্যে নও মুসলিমদের জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এ কৌশল সকল যুগেই প্রযোজ্য। তবে অবশ্যই তাঁকে যোগ্য ও দূরদর্শী আলেম হ’তে হবে। যে কেউ যখন-তখন যেকোন স্থানে এ কৌশল গ্রহণ করতে পারবে না। মানছূরপুরী ‘দাওয়াতে ইসলাম’ নামক গ্রন্থের ৪৬২ পৃষ্ঠার বরাতে একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন যে, ‘একবার রাশিয়ার জার (সম্রাট) ইসলাম কবুলের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যান। কেননা তিনি মূর্তিপূজার প্রতি বিতৃষ্ণ ছিলেন। তবে তিনি মদ্যপানের অভ্যাস ছাড়তে রাযী হননি। কিন্তু মুসলমান আলেম মহোদয় উক্ত শর্ত মানতে অস্বীকার করেন। ফলে তিনি মুসলমান না হয়ে খ্রিষ্টান হয়ে যান। যদি উক্ত আলেম রাসূল (ছাঃ)-এর অত্র হাদীছটি জানতেন, তাহ’লে আজ রাশিয়ার জারের বদৌলতে হয়ত পুরা রাশিয়াকেই আমরা মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে পেতাম’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/১৭৭ টীকা দ্রঃ)।
[4]. হাদীছে ابْنُ عَبْدِ يَالِيلَএসেছে। কিন্তু জীবনীকারগণ عَبْدُ يَالِيلَ বলেছেন (ফাৎহুল বারী হা/৩২৩১-এর আলোচনা দ্রঃ)।
[5]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫২১-২৪; আল-বিদায়াহ ৫/৩৩-৩৪; ইবনু হিশাম ২/৫৩৭-৪২; আর-রাহীক্ব ৪৪৮-৪৯ পৃঃ।
এখানে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তারা ত্বায়েফে পৌছে গেলেন, তখন মুগীরাহ বিন শো‘বাহ আবু সুফিয়ান বিন হারব-কে আগে বাড়তে বললেন। আবু সুফিয়ান তাতে অস্বীকার করে বললেন, তুমি তোমার সম্প্রদায়ের নিকট প্রবেশ কর। এ বলে তিনি তার মাল-সামানসহ যুল-হাদাম নামক স্থানে বসে গেলেন’ (ইবনু হিশাম ২/৫৪১)। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৯০৬)। ইবনুল ক্বাইয়িম এখানে এই সফরের আমীর হিসাবে খালেদ বিন অলীদের কথা বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৫২৩; আর-রাহীক্ব ৪৪৯ পৃঃ)।