নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে হোনায়েন যুদ্ধের পর থেকে ৯ম ও ১০ম হিজরী সনকে আমরা ‘প্রতিনিধি দলসমূহের আগমন বছর’(عَامُ الْوُفُود) হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। মূলতঃ ৮ম হিজরীর রামাযান মাসে মক্কা বিজয়ের পর চারিদিকে ইসলাম কবুলের ঢেউ ওঠে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভের জন্য সমগ্র আরব জাহান যেন মক্কা বিজয়ের অপেক্ষায় ছিল। কেননা তারা বলত,اتْرُكُوهُ وَقَوْمَهُ، فَإِنَّهُ إِنْ ظَهَرَ عَلَيْهِمْ فَهُوَ نَبِىٌّ صَادِقٌ ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর কওমকে ছেড়ে দাও। কেননা যদি তিনি তাদের (অর্থাৎ কুরায়েশদের) উপরে জয়লাভ করেন, তাহ’লে তিনি সত্য নবী’।[1] অতঃপর যখন তিনি মক্কা জয় করলেন এবং কুরায়েশ নেতারা ইসলাম কবুল করলেন, এমনকি হোনায়েন যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হয়ে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করলেন, তখন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন গোত্রের পক্ষ হ’তে দলে দলে প্রতিনিধি দল মদীনায় আসতে শুরু করল এবং ইসলাম কবুল করে ধন্য হ’ল। ফলে দেখা গেল যে, মক্কা বিজয়ের মাত্র নয় মাসের মাথায় ৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূক অভিযানের সময় ৩০,০০০ ফৌজ জমা হয়ে গেল। তার এক বছর পর ১০ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ চবিবশ হাযার বা ত্রিশ হাযার মুসলমান আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সাথী হ’লেন।[2] দু’দিন আগেও যারা লাত, মানাত, ‘উয্যা, হোবলের নামে জয়ধ্বনি করত ও তাদের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন নযর-নেয়ায নিয়ে তাদের অসীলায় পরকালে মুক্তি লাভের জন্য সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ত, আজ তাদের লাববায়েক আল্লাহুম্মা লাববায়েক, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে গগন-পবন মুখরিত হয়ে উঠলো।

[1]. বুখারী হা/৪৩০২; মিশকাত হা/১১২৬, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ইমামত’ অনুচ্ছেদ; আর-রাহীক্ব ৪৩৫ পৃঃ।

[2]. মির‘আত, শরহ মিশকাত ‘মানাসিক’ অধ্যায়, হা/২৫৬৯-এর আলোচনা।