নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে জাদু (سحر النبى صـ)

হত্যা প্রচেষ্টা ছাড়াও তাঁকে জাদু করে পাগল বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে ষড়যন্ত্রকারীরা। ইহূদীদের মিত্র বনু যুরায়েক্ব গোত্রের লাবীদ বিন আ‘ছাম(لَبِيدُ بن أَعْصَم) নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েদের মাধ্যমে এই জাদু করে। প্রথমে সে রাসূল (ছাঃ)-এর বাসার কাজের ছেলের মাধ্যমে কয়েকটি চুলসহ রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যবহৃত চিরুনীটি সংগ্রহ করে। অতঃপর তার কন্যাদের দ্বারা উক্ত চুলে ১১টি জাদুর ফুঁক দিয়ে ১১টি গিরা দেয় ও তার মধ্যে ১১টি সুঁচ ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর চুল ও সুঁচ সমেত চিরুনীটি একটি খেজুরের শুকনা কাঁদির আবরণীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ‘যারওয়ান’(بِئْرُ ذَرْوَانَ) কূয়ার তলায় একটি বড় পাথরের নীচে চাপা দিয়ে রাখে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, উক্ত জাদুর প্রভাবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মাঝে মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়তেন। যে কাজ করেননি, তা করেছেন বলে মনে করতেন। একরাতে স্বপ্নে দু’জন ফেরেশতা এসে নিজেদের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাঁকে জাদুর বিষয়ে অবহিত করেন এবং সেটি কোথায় আছে বলে দেন। ফলে পরদিন আলী, যুবায়ের ও ‘আম্মার বিন ইয়াসিরসহ একদল ছাহাবী গিয়ে উক্ত কূয়া সেঁচে পাথরের নীচ থেকে খেজুরের কাঁদির খোসাসহ চিরুনীটি বের করে আনেন। ঐ সময় সূরা ফালাক্ব ও নাস নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ দুই সূরার ১১টি আয়াতের প্রতিটি পাঠ শেষে এক একটি গিরা খুলতে থাকেন। অবশেষে সব গিরা খুলে গেলে তিনি স্বস্তি লাভ করেন।

লোকেরা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করে বলেন,أَمَّا أَنَا فَقَدْ شَفَانِى اللهُ وَخَشِيتُ أَنْ يُثِيرَ ذَلِكَ عَلَى النَّاسِ شَرًّا ‘আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করেছেন (এটাই যথেষ্ট)। লোকদের মধ্যে মন্দ ছড়িয়ে পড়ুক, এটা আমি চাই না’।[1]

[1]. বুখারী হা/৬৩৯১; আহমাদ হা/২৪৬৯৪; বায়হাক্বী দালায়েল হা/২৫১০; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নাস অবলম্বনে।