৯ম হিজরীর রজব মাসে হাবশার সম্রাট প্রথম নাজাশীর মৃত্যুর পরে নতুন নাজাশীর নিকটে এই পত্র পাঠানো হয়। ‘আমর বিন উমাইয়া যামরী (রাঃ)-এর মাধ্যমে প্রেরিত উক্ত পত্রের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ:
هَذَا كِتَابُ مُحَمَّدٍ رَسُوْلِ اللهِ إِلَى النَّجَاشِيِّ الْأَصْحَمِ عَظِيْمِ الْحَبَشِ سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، وَآمَنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ، وَشَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَمْ يَتَّخِذْ صَاحِبَةً وَلاَ وَلَدًا، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَدْعُوْكَ بِدُعَاءِ اللهِ، فَإِنِّي أَنَا رَسُوْلُ اللهِ، فَأَسْلِمْ تَسْلَمْ، (يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ) فَإِنْ أَبَيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ النَّصَارَى مِنْ قَوْمِكَ-
‘এটি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ-এর পক্ষ হ’তে প্রেরিত পত্র হাবশার সম্রাট আছহামা নাজাশীর নিকটে। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-এর উপরে ঈমান আনেন এবং সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেন না। আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
আমি আপনাকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর আপনি ইসলাম কবুল করুন। নিরাপদ থাকুন। (আল্লাহ বলেন, হে নবী!) ‘তুমি বল, হে কিতাবধারীগণ! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান। আর তা এই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু ইবাদত করব না এবং আমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না। আর আল্লাহ ব্যতীত আমরা কাউকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করব না। এরপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদের বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলমান’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)। অতঃপর যদি আপনি দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন, তাহ’লে আপনার উপরে আপনার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পাপ বর্তাবে’।[1]
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটি বায়হাক্বী হাবশায় হিজরত প্রসঙ্গে এনেছেন এবং নাজাশীর নাম ‘আছহামা’ বলেছেন, যা ভুল। কেননা এই পত্রে সূরা আলে ইমরানের ৬৪ আয়াতটি উল্লেখ রয়েছে। যা মদীনায় নাযিল হয়। যুহরী বলেন, আহলে কিতাব রাজা-বাদশাহদের নিকট প্রেরিত সকল পত্রে উক্ত আয়াতটি উল্লেখিত ছিল। অতএব এই পত্রটি প্রেরিত হয়েছিল প্রথম নাজাশীর মৃত্যুর পরে নতুন নাজাশীর নিকটে। রাবীর ভুলে ‘আছহামা’ নামটি যোগ হয়েছে মাত্র (আল-বিদায়াহ ৩/৮৩)। একই কথা বলেছেন, ইবনু হাযম ও ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ)। ইবনু হাযম বলেন, শেষের নাজাশী ইসলাম কবুল করেননি’ (যাদুল মা‘আদ ১/১১৭, ৩/৬০৩)। প্রথম নাজাশী মুসলমান ছিলেন। যিনি ৯ম হিজরীর রজব মাসে ইন্তেকাল করেন (আল-ইছাবাহ, আছহামা ক্রমিক ৪৭৩)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে সাথে নিয়ে বাক্বী‘ গারক্বাদের মুছাল্লায় গিয়ে তার গায়েবানা জানাযা পড়েন। আমরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হই এবং তিনি চার তাকবীরে ছালাত আদায় করেন।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খায়বর যুদ্ধ শেষে সেখানে গিয়ে ইসলাম কবুল করেন (আল-ইছাবাহ, আবু হুরায়রা ক্রমিক ১০৬৭৪)। জানাযায় তাঁর উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, নাজাশী ৭ম হিজরীর পরে মারা গেছেন। অতএব সুহায়লী, ইবনু কাছীর, ইবনু হাজার প্রমুখ বিদ্বানগণের বক্তব্য অনুযায়ী উপরোক্ত চিঠি ৯ম হিজরীর রজব মাসে নাজাশীর মৃত্যুর পর নতুন নাজাশীর নিকট তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে বা যুদ্ধ থেকে ফেরার পর রামাযান মাসে প্রেরিত হয় বলে নিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান হয়। যদিও ওয়াক্বেদী, ত্বাবারী প্রমুখ জীবনীকারগণ এটিকে ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে প্রেরিত বলেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৫৪)। ইবনুল ক্বাইয়িম ও মুবারকপুরী উভয়ে চিঠিটি এক নম্বরে এনেছেন এবং ৬টি চিঠিকে ৬জন পত্র বাহকের মাধ্যমে ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে একই দিনে প্রেরিত বলেছেন।[3] যা বাস্তবতার সাথে অমিল। সেকারণ পূর্বাপর বিবেচনায় আমরা পত্রটিকে শেষে আনলাম। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
উল্লেখ্য যে, পত্রবাহক ‘আমর বিন উমাইয়া যামরী মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (৪০-৬০ হিঃ) মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। আবু নু‘আইম বলেন, তিনি ৬০ হিজরীর পূর্বে মারা যান (আল-ইছাবাহ, ‘আমর বিন উমাইয়া, ক্রমিক ৫৭৬৯)।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৩৪; বুখারী হা/১২৪৫; মুসলিম হা/৯৫১।
[3]. যাদুল মা‘আদ ১/১১৬, ৩/৬০১; আর-রাহীক্ব ৩৫০-৫১ পৃঃ।