নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
বনু কুরায়যা যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ (بعض الأمور المهمة فى غزوة بنى قريظة)

১. ইহূদী মহিলার হাতে শহীদ হ’লেন যিনি(اسةشهاد المسلم بيد يهودية) :

অবরোধকালে বনু কুরায়যার জনৈকা মহিলা যাঁতার পাট নিক্ষেপ করে ছাহাবী খাল্লাদ বিন সুওয়াইদকে হত্যা করে। এর বদলা স্বরূপ পরে উক্ত মহিলাকে হত্যা করা হয়। খাল্লাদ ছিলেন এই যুদ্ধে একমাত্র শহীদ। তিনি বদর, ওহোদ, খন্দক ও বনু কুরায়যার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার মাথা কঠিনভাবে চূর্ণ হওয়ার কারণে লোকেরা ধারণা করত যে, রাসূল (ছাঃ) তার সম্পর্কে বলেন,إنَّ لَهُ لَأَجْرَ شَهِيدَيْنِ ‘তিনি দুই শহীদের সমান নেকী পাবেন’।[1]

২. আহত সা‘দ বিন মু‘আযের প্রার্থনা(دعاء سعد بن معاذ الجريح) :

উভয় পক্ষে তীর নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আউস নেতা সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) তীর বিদ্ধ হন। এতে তাঁর হাতের মূল শিরা কর্তিত হয়। যাতে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মৃত্যুর আশংকা করেন। ফলে তিনি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন এই মর্মে যে,

اللَّهُمَّ .. فَإِنْ كَانَ بَقِىَ مِنْ حَرْبِ قُرَيْشٍ شَىْءٌ، فَأَبْقِنِى لَهُ حَتَّى أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، وَإِنْ كُنْتَ وَضَعْتَ الْحَرْبَ فَافْجُرْهَا، وَاجْعَلْ مَوْتَتِى فِيهَا

‘হে আল্লাহ!... যদি কুরায়েশদের সঙ্গে যুদ্ধ এখনো বাকী থাকে, তাহ’লে তুমি আমাকে সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখো, যাতে আমি তোমার জন্য তাদের সাথে জিহাদ করতে পারি। আর যদি তুমি যুদ্ধ চালু রাখ, তা’হলে আমার এই যখম প্রবাহিত করে দাও এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটিয়ে দাও’ (বুখারী হা/৪১২২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দো‘আর শেষাংশে তিনি বলেন,

اللَّهُمَّ لاَ تُخْرِجْ نَفْسِى حَتَّى تُقِرَّ عَيْنِى مِنْ بَنِى قُرَيْظَةَ. فَاسْتَمْسَكَ عِرْقُهُ فَمَا قَطَرَ قَطْرَةً حَتَّى نَزَلُوا عَلَى حُكْمِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَحَكَمَ أَنْ يُقْتَلَ رِجَالُهُمْ وَيُسْتَحْيَى نِسَاؤُهُمْ يَسْتَعِينُ بِهِنَّ الْمُسْلِمُونَ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- «أَصَبْتَ حُكْمَ اللهِ فِيهِمْ». وَكَانُوا أَرْبَعَمِائَةٍ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَتْلِهِمُ انْفَتَقَ عِرْقُهُ فَمَاتَ

‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জান বের করো না, যে পর্যন্ত না বনু কুরায়যার ব্যাপারে আমার চক্ষু শীতল হয়। ফলে তার রক্তস্রোত বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর একটি ফোঁটাও আর পড়েনি, যতক্ষণ না তারা সা‘দ-এর ফায়ছালার উপরে রাযী হয়ে যায়। তখন রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে এই খবর পাঠান। অতঃপর তিনি (এসে) সিদ্ধান্ত দেন যে, তাদের পুরুষদের হত্যা করা হবে এবং নারীদের বাঁচিয়ে রাখা হবে। যাদেরকে মুসলমানরা ব্যবহার করবে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী সঠিক ফায়ছালা করেছ। তারা ছিল ৪০০ জন। অতঃপর যখন তাদের হত্যা করা শেষ হয়ে গেল, তখন তার রক্তস্রোত প্রবাহিত হ’ল এবং তিনি মৃত্যুবরণ করলেন’।[2]

৩. ‘তোমরা তোমাদের (অসুস্থ) নেতাকে এগিয়ে আনো’(قوموا إلى سيدكم) :

বন্দী বনু কুরায়যার মিত্র আউস গোত্রের নেতারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বারবার অনুরোধ করতে লাগল যেন তাদের প্রতি বনু ক্বায়নুক্বার ইহূদীদের ন্যায় সদাচরণ করা হয়। অর্থাৎ সবকিছু নিয়ে মদীনা থেকে জীবিত বের হয়ে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়। বনু ক্বায়নুক্বা ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমাদেরই এক ব্যক্তি এ বিষয়ে ফায়ছালা করুন। তারা রাযী হ’ল। তখন তিনি আউস গোত্রের নেতা সা‘দ বিন মু‘আযের উপরে এর দায়িত্ব দিলেন। তাতে তারা খুব খুশী হ’ল। অতঃপর সা‘দ বিন মু‘আযকে মদীনা থেকে গাধার পিঠে বসিয়ে সেখানে আনা হ’ল। তিনি খন্দকের যুদ্ধে আহত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। সেকারণ তিনি বনু কুরায়যার যুদ্ধে আসতে পারেননি। সা‘দ কাছে এসে পৌঁছলে রাসূল (ছাঃ) বললেন,قُومُوا إلَى سَيِّدِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের (অসুস্থ) নেতাকে এগিয়ে আনো’। অতঃপর তাঁকে গাধার পিঠ থেকে নামিয়ে আনা হ’ল। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, হে সা‘দ!إنَّ هَؤُلاَءِ الْقَوْمَ قَدْ نَزَلُوْا عَلَى حُكْمِكَ ‘ঐসব লোকেরা তোমার ফায়ছালার উপরে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছে’। সা‘দ বললেন,وَحُكْمِي نَافِذٌ عَلَيْهِمْ؟ ‘আমার ফায়ছালা কি তাদের উপরে প্রযোজ্য হবে? তারা বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকালেন। তখন তিনিও বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি ফায়ছালা দেন এই মর্মে যে, এদের পুরুষদের হত্যা করা হবে, নারী ও শিশুদের বন্দী করা হবে এবং মাল-সম্পদ সব বন্টিত হবে’।[3] এ ফায়ছালা শুনে রাসূল (ছাঃ) বলে ওঠেন,لَقَدْ حَكَمْتَ فِيْهِمْ بِحُكْمِ اللهِ أَوْ بِحُكْمِ الْمَلِكِ ‘নিশ্চয় তুমি আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী অথবা ফেরেশতার ফায়ছালা অনুযায়ী ফায়ছালা করেছ’।[4] এই ফায়ছালা যে কত বাস্তব সম্মত ছিল, তা পরে প্রমাণিত হয়। মদীনা থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা গোপনে তাদের দুর্গে ১৫০০ তরবারি, ২০০০ বর্শা, ৩০০ বর্ম, ৫০০ ঢাল মওজুদ করেছিল। যার সবটাই মুসলমানদের হস্তগত হয়’ (আর-রাহীক্ব ৩১৬ পৃঃ)।

অতঃপর উক্ত বিষয়ে সূরা আনফালের ৫৫-৫৮ এবং সূরা আহযাবের ২৬ ও ২৭ আয়াত নাযিল হয় (তাফসীর কুরতুবী)। দুর্ভাগ্য একদল বিদ‘আতী লোকقُومُوا إلَى سَيِّدِكُمْ বাক্যটিকে মীলাদের মজলিসে রাসূল (ছাঃ)-এর রূহের আগমন কল্পনা করে তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ক্বিয়াম করার পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। এমনকি অনেকে রূহের বসার জন্য একটা খালি চোখ রেখে দেন।

৪. যাঁর মৃত্যুতে আরশ কেঁপে ওঠে(الذى يهتزّ له العرش) :

বনু কুরায়যার ব্যাপারে ফায়ছালা শেষে আহত নেতা সা‘দ বিন মু‘আযের যখম বিদীর্ণ হয়ে যায়। তখন তিনি মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদেই তার চিকিৎসার জন্য তাঁবু স্থাপন করেন। অতঃপর ক্ষত স্থান দিয়ে রক্তস্রোত প্রবাহিত হওয়া অবস্থায় তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে খন্দক যুদ্ধকালে করা তাঁর পূর্বেকার শাহাদাত নছীব হওয়ার দো‘আ কবুল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,اِهْتَزَّ عَرْشُ الرَّحْمَنِ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ ‘সা‘দ বিন মু‘আযের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে’।[5] ফেরেশতাগণ তার লাশ উত্তোলন করে কবরে নিয়ে যান।[6] অর্থাৎ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর লাশ হালকা অনুভূত হওয়ায় মুনাফিকরা তাচ্ছিল্য করে বলে, তার লাশটি কতই না হালকা! এর দ্বারা তারা বনু কুরায়যার ব্যাপারে সা‘দের কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুলুম করার প্রতি ইঙ্গিত করে। এ খবর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছে গেলে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী)।

[1]. ইবনু হিশাম ২/২৫৪; সনদ ছহীহ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৩৯২, ১৪১৯); বায়হাক্বী হা/১৭৮৮৮।

প্রসিদ্ধ আছে যে, খন্দকের যুদ্ধকালে মদীনার ফারে‘ (فارع) নামক দুর্গে রাসূল (ছাঃ)-এর সভাকবি ও খ্যাতনামা ছাহাবী হাসসান বিন ছাবেত (রাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে মুসলিম মহিলা ও শিশুগণ অবস্থান করছিলেন। একদিন সেখানে চুক্তি ভঙ্গকারী বনু কুরায়যার জনৈক ইহূদীকে ঘুরাফেরা করতে দেখে রাসূল (ছাঃ)-এর ফুফু ছাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্ত্বালিব রক্ষীপ্রধান হাসসানকে বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে এখানে যে কোন সেনাদল নেই, সেকথা এই গুপ্তচর গিয়ে এখুনি তার গোত্রকে জানিয়ে দেবে। এই সুযোগে তারা আমাদের উপরে হামলা করতে পারে। এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কাউকে পাঠানোও সম্ভব নয়। অতএব আপনি এক্ষুণি গিয়ে ঐ গুপ্তচরটিকে খতম করে আসুন। জবাবে হাসসান বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি তো জানেন যে, আমি একাজের লোক নই’। তার একথা শুনে কালবিলম্ব না করে হযরত ছাফিয়া কোমর বেঁধে তাঁবুর একটা খুঁটি হাতে নিয়ে বের হয়ে যান এবং ইহূদীটির কাছে গিয়ে ভীষণ জোরে আঘাত করে তাকে শেষ করে দেন’ (ইবনু হিশাম ২/২২৮)।

সীরাতে ইবনু হিশামের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার আব্দুর রহমান সুহায়লী (মৃ. ৫৮১ হি.) বলেন, উক্ত হাদীছের বর্ণনায় বুঝা যায়, হাসসান অত্যন্ত কাপুরুষ ব্যক্তি ছিলেন। অনেক বিদ্বান এর বিরোধিতা করেছেন। কারণ হাদীছটির সনদ ‘মুনক্বাতি‘। তাছাড়া যদি এটি সঠিক হ’ত, তাহ’লে তাঁর বিরুদ্ধে এজন্য ব্যঙ্গ কবিতা রচিত হ’ত। কেননা তিনি সমকালীন কবি যেরার (ضرار), ইবনুয যিবা‘রা (ابْنُ الزِّبَعْرَى) ও অন্যান্য কবিদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ কবিতা লিখতেন এবং তারাও তার প্রতিবাদে লিখতেন। কিন্তু কেউ তার কাপুরুষতার অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু লিখেননি। এটাই ইবনু ইসহাকের উক্ত বর্ণনার দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। আর যদি এটি ছহীহ হয়, তাহ’লে সম্ভবতঃ ঐ সময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন। যা তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে। আর এটাই তার ব্যাপারে উত্তম ব্যাখ্যা’ (ইবনু হিশাম ২/২২৮ পৃঃ, টীকা-৪)।

উল্লেখ্য যে, কবি হাসসান ৪০ হিজরীতে প্রায় ১২০ বছর বয়সে মারা যান। সে হিসাবে খন্দকের সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮৫ বছর (ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ, হাসসান ক্রমিক সংখ্যা ১৭০৬)। এটাও উল্লেখ্য যে, হাসসান বিন ছাবেত রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বদর, ওহোদ ও হোনায়েনসহ সকল যুদ্ধে যোগদান করেছেন। ভীরু হ’লে তা করতেন না। পক্ষান্তরে খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন ও মাঝে মধ্যে উভয় পক্ষের তীর বর্ষণ ব্যতীত কিছুই হয়নি। যাতে আউস নেতা সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) আহত হন। ফলে এখানে তার মত বৃদ্ধ ছাহাবীকে সম্ভবতঃ যুদ্ধে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি’ (মা শা-‘আ ১৬৬-৬৯ পৃঃ)।

[2]. তিরমিযী হা/১৫৮২; আহমাদ হা/১৪৮১৫ সনদ ছহীহ; ইবনু হিশাম ২/২২৭।

[3]. যাদুল মা‘আদ ৩/১২১; বুখারী হা/৩০৪৩; মুসলিম হা/১৭৬৮; মিশকাত হা/৩৯৬৩, ৪৬৯৫।

[4]. বুখারী হা/৩৮০৪; মুসলিম হা/১৭৬৮; তবে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আসমান সমূহের উপর থেকে’ (مِنْ فَوْقِ السَمَاوَاتِ) হাকেম হা/২৫৭০, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৪৫।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, অবরুদ্ধ বনু কুরায়যা গোত্র আত্মসমর্পণের পূর্বে পরামর্শের উদ্দেশ্যে ছাহাবী আবু লুবাবাহ বিন আব্দুল মুনযির (রাঃ)-কে তাদের নিকটে প্রেরণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে প্রস্তাব পাঠায়। কেননা আবু লুবাবার বাগ-বাগিচা, সন্তান-সন্ততি এবং গোত্রীয় লোকেরা ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তার সাথে তাদের সখ্যতা ছিল। অতঃপর আবু লুবাবাহ সেখানে উপস্থিত হ’লে পুরুষেরা ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসে। নারী ও শিশুরা করুণ কণ্ঠে ক্রন্দন করতে থাকে। এতে তার মধ্যে ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইহূদীরা বলল, হে আবু লুবাবাহ! আপনি কি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন যে, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমরা মুহাম্মাদের নিকটে অস্ত্র সমর্পণ করি’। আবু লুবাবাহ বললেন, হ্যাঁ। বলেই তিনি নিজের কণ্ঠনালীর দিকে ইঙ্গিত করলেন। যার অর্থ ছিল ‘হত্যা’। কিন্তু এতে তিনি উপলব্ধি করলেন যে, একাজটি খেয়ানত হ’ল। তিনি ফিরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে না গিয়ে সরাসরি মসজিদে নববীতে গিয়ে খুঁটির সাথে নিজেকে বেঁধে ফেলেন ও শপথ করেন যে, রাসূল (ছাঃ) নিজ হাতে তার বন্ধন না খোলা পর্যন্ত নিজেকে মুক্ত করবেন না এবং আগামীতে কখনো বনু কুরায়যার মাটিতে পা দেবেন না’। ওদিকে তার বিলম্বের কারণ সন্ধান করে রাসূল (ছাঃ) যখন প্রকৃত বিষয় জানতে পারলেন, তখন তিনি বললেন, যদি সে আমার কাছে আসত, তাহ’লে আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। কিন্তু যেহেতু সে নিজেই একাজ করেছে, সেহেতু আল্লাহ তার তওবা কবুল না করা পর্যন্ত আমি তাকে বন্ধনমুক্ত করতে পারব না’।

আবু লুবাবাহ এভাবে ছয় দিন মসজিদে খুঁটির সাথে বাঁধা থাকেন। ছালাতের সময় তার স্ত্রী এসে বাঁধন খুলে দিতেন। পরে আবার নিজেকে বেঁধে নিতেন। এই সময় একদিন প্রত্যুষে তার তওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে অহী নাযিল হয়। তিনি তখন উম্মে সালামাহর ঘরে অবস্থান করছিলেন। আবু লুবাবাহ বলেন, এ সময় উম্মে সালামা নিজ কক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, يَا اَبَا لُبَابَةَ! اَبْشِرْ فَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَيْكَ ‘হে আবু লুবাবাহ, সুসংবাদ গ্রহণ করো! আল্লাহ তোমার তওবা কবুল করেছেন’। একথা শুনে ছাহাবীগণ ছুটে এসে আমার বাঁধন খুলতে চাইল। কিন্তু আমি অস্বীকার করি। পরে ফজর ছালাতের জন্য বের হয়ে রাসূল (ছাঃ) এসে আমার বাঁধন খুলে দেন’ (ইবনু হিশাম ২/২৩৭; বায়হাক্বী হা/১৩৩০৭; আল-বিদায়াহ ৪/১১৯ সনদ ‘মুরসাল’; তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৮১)।

[5]. বুখারী হা/৩৮০৩; মুসলিম হা/২৪৬৬; মিশকাত হা/৬১৯৭।

[6]. তিরমিযী হা/৩৮৪৯; মিশকাত হা/৬২২৮, সনদ ছহীহ।