নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ- ১৬. রাসূল (ছাঃ)-এর শহীদ হবার খবর ও তার প্রতিক্রিয়া (انتشار خبر استشهاد الرسول صـ وأثره)

মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী মদীনায় প্রেরিত ইসলামের প্রথম দাঈ বীরকেশরী মুছ‘আব বিন ওমায়ের শহীদ হবার পর তাঁকে আঘাতকারী আব্দুল্লাহ বিন ক্বামিআহ ফিরে গিয়ে সানন্দে ঘোষণা করে যে,إِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ ‘মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে’। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারার সাথে মুছ‘আবের চেহারায় অনেকটা মিল ছিল। এই খবর উভয় শিবিরে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মুসলমানগণ ক্ষণিকের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। ফলে পরস্পরকে চিনতে ব্যর্থ হয়ে মুসলমানের হাতেই কোন কোন মুসলমান শহীদ হয়ে যান। এমনই অবস্থার শিকার হ’য়ে খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত হুযায়ফা (রাঃ)-এর বৃদ্ধ পিতা হযরত ইয়ামান (রাঃ) শহীদ হয়ে যান’।[1]


[1]. বুখারী হা/৪০৬৫ ‘যুদ্ধ বিগ্রহ’ অধ্যায়-৬৪ অনুচ্ছেদ-১৮।

(১) মুবারকপুরী লিখেছেন যে, এ সময় একদল অস্ত্র ত্যাগ করলেন। এমনকি মদীনায় পলায়ন পর্যন্ত করলেন। কেউ পাহাড়ে উঠে গেলেন। অন্যদল কাফিরদের মধ্যে মিশে গেলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মাধ্যমে কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের নিকটে সন্ধি প্রস্তাব পাঠানোর চিন্তাও করেন’ (আর-রাহীক্ব ২৬৫ পৃঃ)। বক্তব্যগুলি ভিত্তিহীন।

(২) প্রসিদ্ধ আছে যে, ছাবিত বিন দাহদাহ তার কওমকে ডেকে বলেন, হে আনছারগণ! إنْ كَانَ مُحَمّدٌ قَدْ قُتِلَ فَإِنّ اللهَ حَيّ لاَ يَمُوتُ، فَقَاتِلُوا عَنْ دِينِكُمْ، فَإِنّ اللهَ مُظْهِرُكُمْ وَنَاصِرُكُمْ- ‘যদি মুহাম্মাদ নিহত হন, তাহ’লে আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি মরেন না। তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপরে যুদ্ধ কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে বিজয় দান করবেন এবং সাহায্য করবেন’। তখন তার সাথে একদল আনছার খালেদের অশ্বারোহী বাহিনীর উপরে হামলা করল। যুদ্ধ চলা অবস্থায় খালেদের বর্শা নিক্ষেপে তিনি ও তার সাথীরা নিহত হন’ (আর-রাহীক্ব ২৬৬ পৃঃ; সীরাহ হালাবিইয়াহ ২/৫০৩)। বর্ণনাটি সনদবিহীন।

(৩) প্রসিদ্ধ আছে যে, এ সময় জনৈক মুহাজির একজন আনছার ছাহাবীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তার রক্ত ছাফ করছিলেন। তিনি তাকে বললেন, হে অমুক! তুমি কি জান, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছেন? আনছার বললেন, যদি মুহাম্মাদ নিহত হয়ে থাকেন, তাহ’লে তিনি দ্বীন পৌঁছে দিয়ে গেছেন। অতএব তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপরে যুদ্ধ কর’ (আর-রাহীক্ব ২৬৬ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/১৮৬)। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ (আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৪৬ পৃঃ)।

(৪) প্রসিদ্ধ আছে যে, বিপর্যয়ের পর রাসূল (ছাঃ) নিজ সেনাদলের দিকে অগ্রসর হ’তে থাকেন। তখন ছাহাবী কা‘ব বিন মালেক আনছারী (রাঃ) তাঁকে সর্বপ্রথম চিনতে পারেন ও খুশীতে চিৎকার করে বলে ওঠেন, يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ أَبْشِرُوا هَذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘হে মুসলিমগণ! সুসংবাদ গ্রহণ কর। এইতো আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চুপ থাকতে ইঙ্গিত করেন। যাতে মুশরিকরা তাঁর অবস্থান বুঝতে না পারে। কিন্তু তার আওয়ায মুসলিম বাহিনীর কানে ঠিকই পৌঁছে গিয়েছিল এবং দ্রুত সেখানে ৩০ জনের মত ছাহাবী জমা হয়ে গেলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) সবাইকে নিয়ে ঘাঁটির দিকে যেতে শুরু করেন ও সেখানে গিয়ে স্থির হন’ (আর-রাহীক্ব ২৭৩ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৮৩; আল-বিদায়াহ ৪/৩৫; যাদুল মা‘আদ ৩/১৭২)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১১৩৩)।