নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ফেরেশতাগণের যুদ্ধে যোগদান (قدوم الملائكة فى المعركة)

মুসলিম বাহিনীর এই হামলার প্রচন্ডতার সাথে সাথে যোগ হয় ফেরেশতাগণের আগমন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلاَئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ- ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَمَنْ يُشَاقِقِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন যে, আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। অতএব তোমরা ঈমানদারগণের চিত্তকে দৃঢ় রাখো। আমি সত্বর অবিশ্বাসীদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দেব। কাজেই তোমরা গর্দানের উপর আঘাত হানো এবং তাদের প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় মারো’। ‘এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়েছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ (তার জন্য) কঠিন শাস্তিদাতা’ (আনফাল ৮/১২-১৩)। ইকরিমা বিন আবু জাহল (যিনি ঐ যুদ্ধে পিতার সাথে শরীক ছিলেন এবং মক্কা বিজয়ের পরে মুসলমান হন) বলেন, ঐদিন আমাদের লোকদের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যেত, অথচ দেখা যেতো না কে মারলো (তাবাক্বাত ইবনু সা‘দ)। আবুদাঊদ আল-মাযেনী বলেন, আমি একজন মুশরিক সৈন্যকে মারতে উদ্যত হব। ইতিমধ্যে তার ছিন্ন মস্তক আমার সামনে এসে পড়ল। আমি বুঝতেই পারলাম না, কে ওকে মারল’। রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা আববাস যিনি বাহ্যিকভাবে মুশরিক বাহিনীতে ছিলেন, জনৈক আনছার তাকে বন্দী করে আনলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমাকে এ ব্যক্তি বন্দী করেনি। বরং যে ব্যক্তি বন্দী করেছে, তাকে এখন দেখতে পাচ্ছি না। তিনি একজন চুল বিহীন মাথাওয়ালা ও সুন্দর চেহারার মানুষ এবং বিচিত্র বর্ণের একটি সুন্দর ঘোড়ায় তিনি সওয়ার ছিলেন। আনছার যোদ্ধা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই এনাকে বন্দী করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত আনছারকে বললেন, اسْكُتْ فَقَدْ أَيَّدَكَ اللهُ بِمَلَكٍ كَرِيمٍ ‘চুপ কর। আল্লাহ এক সম্মানিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাকে সাহায্য করেছেন’ (আহমাদ হা/৯৪৮)। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, ফেরেশতারা কোন মুশরিকের উপরে আক্রমণ করার ইচ্ছা করতেই আপনা-আপনি তার মস্তক দেহ হ’তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।[1] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ঐ দিন একজন মুসলিম সেনা তার সম্মুখের মুশরিককে মারতে গেলে শাণিত তরবারির ও ঘোড়ার আওয়ায শোনেন। তিনি ফেরেশতার আওয়ায শুনেছেন যে, তিনি বলছেনأَقْدِمْ حَيْزُوْمُ ‘হায়যূম আগে বাড়ো’ (‘হায়যূম’ হ’ল ফেরেশতার ঘোড়ার নাম)। অতঃপর ঐ মুশরিক সেনাকে তিনি সামনে চিৎ হয়ে পড়ে যেতে দেখেন। তিনি দেখলেন যে, তরবারির আঘাতের ন্যায় তার নাক ও মুখমণ্ডল বিভক্ত হয়ে গেছে। উক্ত আনছার ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বলেন, صَدَقْتَ، ذَلِكَ مِنْ مَدَدِ السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ ‘তুমি সত্য বলেছ। ওটি তৃতীয় আসমান থেকে সরাসরি সাহায্যের অংশ’।[2] কেউ কতক ফেরেশতাকে সরাসরি দেখেছেন। ঐদিন ফেরেশতাদের মাথার পাগড়ী ছিল সাদা। যা তাদের পিঠ পর্যন্ত ঝুলে ছিল। তবে জিব্রীলের মাথার পাগড়ী ছিল হলুদ বর্ণের।[3]

উপরোক্ত ঘটনাবলী এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে ফেরেশতাগণ মুসলমানদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তারাও যেন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন।

[1]. আহমাদ হা/৯৪৮, সনদ ছহীহ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৬৬৭৯।

[2]. মুসলিম হা/১৭৬৩ (৫৮); মিশকাত হা/৫৮৭৪।

[3]. ইবনু হিশাম ১/৬৩৩।

প্রসিদ্ধ আছে যে, ইবলীস স্বয়ং বনু কিনানাহর নেতা সুরাক্বা বিন মালেক বিন জু‘শুম আল-মুদলেজীর রূপ ধারণ করে যুদ্ধে উপস্থিত থেকে আবু জাহলকে সর্বদা উৎসাহিত করেছে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সর্বদা প্ররোচিত করেছে। কিন্তু এখন যুদ্ধের ময়দানে ফেরেশতাদের দেখতে পেয়ে সে ভয়ে পালাতে থাকে। হারেছ বিন হেশাম তাকে সুরাক্বা ভেবে আটকাতে চাইলে সে তার বুকে জোরে এক ঘুষি মেরে দ্রুত দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রের মধ্যে ডুব দিয়ে হারিয়ে যায় (আর-রাহীক্ব ২১৯ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (মা শা-‘আ ১০৯ পৃঃ)। মূলতঃ শয়তান কারু রূপ ধরে নয়, বরং অন্তরে খটকা সৃষ্টির মাধ্যমে আবু জাহল ও তার সাথীদের প্ররোচিত করেছিল। যা সূরা আনফাল ৪৮-৪৯ এবং সূরা হাশর ১৬-১৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।