নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

হিজরতের অনধিক ১৯ মাস পর ২য় হিজরীর ১৭ই রামাযান শুক্রবার সকালে (৬২৪ খৃ. ১১ই মার্চ) ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।[1] এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনছারসহ মোট ১৪ জন শহীদ হন। কাফের পক্ষে ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বন্দী হয় (আর-রাহীক্ব ২২৪ পৃঃ)। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।-

বদর হ’ল মদীনা থেকে ১৬০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রের নাম। যেখানে পানির প্রাচুর্য থাকায় স্থানটির গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। এখানেই সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে তাওহীদ ও শিরকের মধ্যকার প্রথম সশস্ত্র মুকাবিলা। ১৯ মাসের এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মদীনা থেকে বের করে দেবার জন্য নানাবিধ অপচেষ্টা চালায়। যেমনভাবে তারা ইতিপূর্বে হাবশায় হিজরতকারী মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছিল প্রধানতঃ তিনটি কারণে। (১) সেখানে ছিল একজন ধর্মপরায়ণ খ্রিষ্টান বাদশাহ আছহামা নাজাশীর রাজত্ব। যিনি নিজে ইনজীলে পন্ডিত ছিলেন এবং সেকারণে আখেরী নবী হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। (২) মক্কা ও হাবশার মধ্যখানে ছিল আরব সাগরের একটি প্রশস্ত শাখা। যা পেরিয়ে ওপারে গিয়ে হামলা করা সম্ভব ছিল না। (৩) হাবশার লোকেরা ছিল হিব্রুভাষী। তাদের সাথে কুরায়েশদের ভাষাগত মিল ছিল না এবং কোনরূপ আত্মীয়তা বা পূর্ব পরিচয় ছিল না। ধর্ম ও অঞ্চলগত মিলও ছিল না।

পক্ষান্তরে ইয়াছরিব ছিল কুরায়েশদের খুবই পরিচিত এলাকা। যার উপর দিয়ে তারা নিয়মিতভাবে সিরিয়াতে ব্যবসার জন্য যাতায়াত করত। তাছাড়া তাদের সঙ্গে ভাষাগত মিল এবং আত্মীয়তাও ছিল। অধিকন্তু রাস্তা ছিল স্থলপথ, যেখানে নদী-নালার কোন বাধা নেই। দূরত্ব বর্তমানের হিসাবে প্রায় ৪৬০ কিলোমিটার হ’লেও সেখানে যাতায়াতে তারা অভ্যস্ত ছিল। এক্ষণে আমরা বদর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পরোক্ষ কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করব।-

[1]. ওয়াক্বেদী, মাগাযী ১/২; ইবনু সা‘দ ২/৮; ইবনু হিশাম ১/২৪০, ৬২৬; আর-রাহীক্ব ২১২ পৃঃ; মানছূরপুরী ১৭ই রমাযান মঙ্গলবার মোতাবেক ৩রা মার্চ ৬২৪ খ্রিঃ বলেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/৩৬৮ নকশা)।