ঠাট্টা-বিদ্রুপ, কা‘বায় ছালাত আদায়ে বাধা ও নানাবিধ কষ্ট দানের পরেও কোনভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দমিত করতে না পেরে অবশেষে তারা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। যেটা ছিল হিজরতের প্রত্যক্ষ কারণ। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কুরায়েশ নেতাদের একটি দল হিজরে (الْحِجْر) একত্রিত হয়। অতঃপর লাত, মানাত ও ‘উযযার নামে শপথ করে বলে যে, এবার আমরা মুহাম্মাদকে দেখলে একযোগে তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ব এবং হত্যা না করা পর্যন্ত তাকে ছেড়ে আসব না’।
একথা জানতে পেরে ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এলেন এবং উক্ত খবর দিয়ে বললেন যে, ঐ নেতারা আপনাকে হত্যা করে রক্তমূল্য নিজেরা ভাগ করে পরিশোধ করবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, বেটি! আমাকে ওযূর পানি দাও। অতঃপর ওযূ করে তিনি সোজা হারামে চলে গেলেন ও তাদের মজলিসে প্রবেশ করলেন। তারা তাঁকে দেখে বলে উঠল, এই তো সে ব্যক্তি। কিন্তু কেউ তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে বা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে সাহস করল না। এ সময় তিনি তাদের দিকে এক মুষ্টি মাটি ছুঁড়ে মেরে বলেন, شَاهَتِ الْوُجُوهُ ‘চেহারাসমূহ ধূলি মলিন হৌক’! রাবী বলেন, ঐ মাটি যার গায়েই লেগেছিল, সেই-ই বদরের যুদ্ধে কাফের অবস্থায় নিহত হয়েছিল’।[1]
উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ, ইবরাহীম ও মূসা (আঃ) আল্লাহর পথে চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। অন্যদের মধ্যে বহুসংখ্যক নবীকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে। অতঃপর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে হত্যা করতে সক্ষম না হ’লেও তাকে মর্মান্তিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لَقَدْ أُخِفْتُ فِى اللهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِى اللهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَىَّ ثَلاَثُونَ مِنْ بَيْنِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَمَا لِى وَلِبِلاَلٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَىْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بِلاَلٍ ‘আমাকে আল্লাহর পথে যেভাবে ভীত করা হয়েছে এমনটি কাউকে করা হয়নি। আমি আল্লাহর পথে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছি, এমনটি কেউ হয়নি। মাসের ত্রিশটি দিন ও রাত আমার ও আমার পরিবারের কোন খাদ্য জোটেনি। বেলালের বগলে যতটুকু লুকানো সম্ভব ততটুকু খাদ্য ব্যতীত’ (অর্থাৎ খুবই সামান্য)।[2]
বলা বাহুল্য এভাবে চূড়ান্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পরেই আল্লাহ তাঁকে হিজরতের অনুমতি দেন।
[2]. আহমাদ হা/১২২৩৩, ১৪০৮৭; তিরমিযী হা/২৪৭২; ইবনু মাজাহ হা/১৫১; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৫৪।