নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

এ সম্পর্কে বিদ্বানগণের মধ্যে ছয় প্রকার মতভেদ পরিদৃষ্ট হয়। যথা- (১) ১ নববী বর্ষেই মে‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল (২) ৫ নববী বর্ষে (৩) ১০ নববী বর্ষের ২৭শে রজব তারিখে (৪) ১২ নববী বর্ষের রামাযান মাসে (৫) ১৩ নববী বর্ষের মুহাররম মাসে (৬) ১৩ নববী বর্ষের রবীউল আউয়াল মাসে (আর-রাহীক্ব ১৩৭ পৃঃ)

উপরোক্ত ছয়টি মতামতের মধ্যে প্রথম চারটি গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তৃতীয় মতটিই উপমহাদেশে প্রচলিত আছে। কারণ, এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত যে, উম্মুল মুমেনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এটাও সকল বিদ্বান কর্তৃক স্বীকৃত যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১০ নববী বর্ষের রামাযান মাসে। অতএব মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে একথা একপ্রকার নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। এক্ষণে শেষের তিনটি মতামতের মধ্যে কোনটিতেই নিশ্চিত হবার উপায় নেই। তবে সূরা ইসরার শুরুতে মে‘রাজ সম্পর্কিত বর্ণনার পরপরই বনু ইস্রাঈলের অধঃপতন সম্পর্কিত বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, ঈমানী বিশ্বে বনু ইস্রাঈলের দীর্ঘ নেতৃত্বের অবসান এবং মুহাম্মাদী নেতৃত্বের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। অর্থাৎ হিজরতের প্রাক্কালে মাক্কী জীবনের শেষপ্রান্তে মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল। যা ১৩ নববী বর্ষের যেকোন এক রাতে হয়েছিল বলে একপ্রকার নিশ্চিতভাবে বলা যায়। অতঃপর হিজরত শুরু হয়েছিল ১৪ নববী বর্ষের ২৭শে ছফর বৃহস্পতিবার।

মে‘রাজের সঠিক তারিখ উম্মতের নিকটে অস্পষ্ট রাখার তাৎপর্য সম্ভবতঃ এই যে, তারা যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত উম্মতগুলির ন্যায় অনুষ্ঠানসর্বস্ব না হয়ে পড়ে। বরং মে‘রাজের তাৎপর্য অনুধাবন করে আখেরাতে জবাবদিহিতার ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। অতঃপর মে‘রাজের অমূল্য তোহ্ফা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মাধ্যমে গভীর অধ্যাত্ম চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা করে।

আল্লাহ ইচ্ছা করলে মক্কা থেকেই সরাসরি মে‘রাজ করাতে পারতেন। কিন্তু মক্কা থেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস নিয়ে এসে সেখান থেকে মে‘রাজ করানোর মধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবরাহীমী দাওয়াতের দু’টি প্রধান কেন্দ্র কা‘বা ও বায়তুল মুক্বাদ্দাস দুই স্থানের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব এখন থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর উম্মতের উপরেই ন্যস্ত করা হবে। যা ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ১৫ হিজরী সনে সম্পন্ন হয় এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও পাশ্চাত্য বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য বাহির থেকে ইহূদীদের এনে ফিলিস্তীনের একাংশ থেকে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা মুসলমানদের বের করে দিয়েছে এবং সেখানে ইহূদীদের যবরদস্তি বসিয়ে দিয়ে তাকে ‘ইস্রাঈল রাষ্ট্র’ নাম দিয়েছে ১৯৪৮ সালে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অস্থায়ী বিষয়। যার সত্বর অবসান হবে ইনশাআল্লাহ।

অতএব ইসলামী দাওয়াতের প্রথম পর্যায় মাক্কী জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ইয়াছরিবে হিজরতের প্রাক্কালে মে‘রাজ হয়েছিল বলা চলে। অর্থাৎ দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নববী বর্ষের যিলহাজ্জ মাসে অনুষ্ঠিত ১ম ও ২য় বায়‘আত অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী কোন এক রজনীতে মে‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। তবে আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

অতএব মে‘রাজ ছিল ইসলামী বিজয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এবং মাদানী জীবনের নব অধ্যায়ের সূচক ঘটনা।