নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

(ক) আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে শেষনবী হিসাবে মনোনীত করেন। তিনি বলেন, مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষনবী’ (আহযাব ৩৩/৪০)।[1] তিনি বলেন, اللهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ ‘আল্লাহ সর্বাধিক অবগত কার নিকটে তিনি রিসালাত সমর্পণ করবেন’ (আন‘আম ৬/১২৪)। কেননা وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَّشَاءُ ‘আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহের জন্য যাকে চান তাকে খাছ করে নেন’ (বাক্বারাহ ২/১০৫)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ مَثَلِى وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِى كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلاَّ وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ ‘আমি ও আমার পূর্বেকার নবীগণের তুলনা ঐ ব্যক্তির ন্যায় যিনি একটি গৃহ নির্মাণ করেছেন। অতঃপর সেটিকে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয় করেছেন। কিন্তু কোণায় একটি জায়গা খালি রেখেছেন। তখন লোকেরা ঐ স্থানটি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে এবং বিস্ময় প্রকাশ করতে থাকে ও বলতে থাকে, কেন এখানে একটি ইট দেওয়া হয়নি? রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমিই সেই ইট এবং আমিই শেষনবী’।[2] لاَ نَبِىَّ بَعْدِى ‘আমার পরে আর কোন নবী নেই’।[3] তিনি বলেন, بُعِثْتُ إِلَى الأَحْمَرِ وَالأَسْوَدِ، وَكَانَ النَّبِىُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً- ‘আমি লাল ও কালো সকলের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। অন্য নবীগণ নির্দিষ্টভাবে স্ব স্ব গোত্রের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। কিন্তু আমি মানবজাতির সকলের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[4] আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ ‘আমরা তোমাকে পুরা মানবজাতির প্রতি প্রেরণ করেছি’ (সাবা ৩৪/২৮)­। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, فَأَرْسَلَهُ إِلَى الْجِنِّ وَالإِنْسِ ‘অতঃপর আল্লাহ তাঁকে জিন ও ইনসানের প্রতি প্রেরণ করেন’।[5] আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ ‘আমাকে পুরা সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমাকে দিয়েই নবীদের সিলসিলা সমাপ্ত করা হয়েছে’।[6]

বর্তমান পৃথিবীর সকল জিন ও ইনসান শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত। যারা তাঁর দ্বীন কবুল করেছে, তারা হ’ল ‘উম্মাতুল ইজাবাহ’ (أُمَّةُ الْإِجَابَةِ) অর্থাৎ মুসলিম। আর যারা তাঁর দ্বীন কবুল করেনি, তারা হ’ল ‘উম্মাতুদ দা‘ওয়াহ’ (أُمَّةُ الدَّعْوَةِ) অর্থাৎ কাফির-মুশরিকগণ, যাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। যেহেতু আর কোন শরী‘আত নিয়ে আর কোন নবী আসবেন না, সেকারণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল জিন-ইনসান শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত। মুসলমানের কর্তব্য হ’ল শেষনবী (ছাঃ)-এর আনীত ইসলামী শরী‘আত নিজেরা মেনে চলা এবং দুনিয়াবাসীকে তা মেনে চলার আহবান জানানো। কেননা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ ‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম করে বলছি, ইহূদী হৌক বা নাছারা হৌক এই উম্মতের যে কেউ আমার আগমনের খবর শুনেছে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার উপরে ঈমান আনেনি, সে ব্যক্তি অবশ্যই জাহান্নামী হবে’।[7]

মূলতঃ খতমে নবুঅতের আক্বীদার মধ্যেই বিশ্ব মুসলিম ও বিশ্ব মানবতার ঐক্য ও অগ্রগতি নির্ভর করে। এই ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য শয়তান শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মতকে সাবধান করে বলেন, ‘অতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সঙ্গে মিশে যাবে এবং মূর্তিপূজা করবে। আর সত্ত্বর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। যাদের প্রত্যেকে ধারণা করবে যে, সে নবী (كَذَّابُونَ ثَلاَثُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ)। অথচ আমি শেষনবী। আমার পরে কোন নবী নেই। আর আমার উম্মতের মধ্যে চিরদিন একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে, বিরোধীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবেই আল্লাহর নির্দেশ (ক্বিয়ামত) এসে যাবে’ (আবুদাঊদ হা/৪২৫২)। রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় ছান‘আর আসওয়াদ ‘আনাসী ও ইয়ামামার মুসায়লামা কাযযাব (মুসলিম হা/২২৭৪) এবং তাঁর মৃত্যুর পরে আরও কয়েকজন সহ এ যুগে মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ খৃ.) তাদের অন্যতম।

(খ) নবীগণের অঙ্গীকার (ميثاق الأنبياء) :

আখেরী নবীর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁকে সর্বতোভাবে সাহায্য করার জন্য পূর্বেই আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। যেমন তিনি বলেন,وَإِذْ أَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِيْنَ- ‘আর যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলেন এই মর্মে যে, আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা দান করেছি, এরপরে যদি কোন রাসূল আসেন, যিনি তোমাদেরকে প্রদত্ত কিতাবের সত্যায়ন করবেন, তাহ’লে অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি এতে স্বীকৃতি দিচ্ছ এবং তোমাদের স্বীকৃতির উপর আমার অঙ্গীকার নিচ্ছ? তারা বলল, আমরা স্বীকৃতি দিলাম। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে অন্যতম সাক্ষী রইলাম’ (আলে ইমরান ৩/৮১)।[8]

(গ) আহলে কিতাব পন্ডিতদের অঙ্গীকার (ميثاق أحبار أهل الكتاب للإيمان على محمد):

আহলে কিতাব পন্ডিতগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয় এই মর্মে যে, তারা যেন সত্য গোপন না করে এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ও তাঁর প্রতি ঈমান আনার বিষয়টি লোকদের নিকট প্রকাশ করে। যেমন আল্লাহ বলেন,وَإِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ ‘আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, তোমরা অবশ্যই (শেষনবী মুহাম্মাদের আগমন ও তার উপর ঈমান আনার বিষয়টি) লোকদের নিকট বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না। অতঃপর তারা তা পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং গোপন করার বিনিময়ে তা স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করল। কতই না নিকৃষ্ট তাদের ক্রয়-বিক্রয়’ (আলে-ইমরান ৩/১৮৭)।

ইবনু কাছীর বলেন, অত্র আয়াতে ইহূদী-নাছারা পন্ডিতদের ধমক দেওয়া হয়েছে ও ধিক্কার জানানো হয়েছে এ কারণে যে, তারা নিকৃষ্ট দুনিয়াবী স্বার্থে পূর্বেকার সেই অঙ্গীকার ভুলে গেছে এবং লোকদের নিকট উক্ত অঙ্গীকারের কথা চেপে গেছে। এই অঙ্গীকারের কথা তাদের নবীগণের মাধ্যমে তাদের ধর্মনেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। কতই না নিকৃষ্ট ছিল তাদের হাতের উপর হাত রাখা এবং কতই না নিকৃষ্ট ছিল তাদের বায়‘আত গ্রহণ করা। তিনি বলেন, এর মধ্যে মুসলিম আলেমদের জন্য সতর্কবাণী রয়েছে, যেন তারা আহলে কিতাবদের মত না হন এবং তারা যেন সৎকর্মের কোন ইলম গোপন না করেন (ঐ, তাফসীর)।

(ঘ) ঈসা (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী (بشارة عيسى ) :

পূর্বের নবীগণের ন্যায় আহলে কিতাবগণের শেষনবী ঈসা (আঃ) স্বীয় কওমকে উদ্দেশ্য করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদের আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ ‘স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা বলেছিল, হে বনু ইস্রাঈলগণ! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূল-এর সুসংবাদ দানকারী, যিনি আমার পরে আগমন করবেন, তার নাম হবে ‘আহমাদ’। অতঃপর যখন তিনি তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ আগমন করলেন, তখন তারা বলল, এটাতো প্রকাশ্য জাদু মাত্র’ (ছফ ৬১/৬)।

(ঙ) তাওরাত ও ইনজীলে ভবিষ্যদ্বাণী(بشارته صـ فى التوراة والإنجيل) :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগমন সংবাদ তাওরাত-ইনজীলেও লিপিবদ্ধ ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, الَّذِيْنَ يَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُوْنَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيْلِ ‘(এই কল্যাণ কেবল তাদেরই প্রাপ্য) যারা এই রাসূলের আনুগত্য করে যিনি নিরক্ষর নবী, যার বিষয়ে তারা তাদের কিতাব তাওরাত ও ইনজীলে লিপিবদ্ধ পেয়েছে’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। সেকারণ তাঁর আগমন বিষয়ে ইহূদী-নাছারা পন্ডিতগণ আগেভাগেই জানতেন (বাক্বারাহ ২/৮৯)। তারা তাঁকে চিনতেন যেমন নিজের সন্তানদের তারা চিনতেন’।[9]

(চ) আহলে কিতাবগণের প্রতীক্ষিত নবী (نبى منتظر لأهل الكتاب) :

মক্কায় অরাক্বা বিন নওফাল, শামে বাহীরা প্রমুখ পন্ডিতগণ তাঁকে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন। সেকারণ হাবশার সম্রাট নাজাশী, রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও মিসররাজ মুক্বাউক্বিস সকলেই তাঁকে সসম্মানে গ্রহণ করেছিলেন। যারা সবাই খ্রিষ্টান ছিলেন। শেষনবীর সন্ধানেই সুদূর পারস্যের ইছফাহান হ’তে অগ্নিপূজক সালমান ফারেসী খ্রিষ্টান পাদ্রীদের কাছে শুনে দীর্ঘদিন সন্ধান শেষে মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ১ম হিজরীতে ইসলাম কবুল করেন।[10] ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আহলে কিতাবদের নিকটে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিচিতি অবিরত ধারায় বর্ণিত ছিল।[11] আহলে কিতাবদের নিকট থেকে ইয়াছরিবের অধিবাসীরা আগে থেকেই শেষনবীর আগমন ও তাঁর নাম-চেহারা ও পরিচিতি সম্পর্কে জানত (ইবনু হিশাম ১/২৩২)। এমনকি তারা শেষনবীর আগমনের পর তাকে সাথে নিয়ে অবাধ্য ইয়াছরেবীদের উপর জয়লাভ করবে ও তাদের হত্যা করবে বলে হুমকি দিত।[12] আর সেকারণেই তারা মক্কায় এসে আগেই ইসলাম কবুল করে এবং তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করেন।

তাদের উক্ত আকাংখার বিষয়টি প্রকাশ করে আল্লাহ বলেন, وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِينَ ‘আর যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হ’তে কিতাব (কুরআন) এসে গেল, যা সত্যায়নকারী ছিল (তওরাত-ইনজীলের), যা তাদের কাছে রয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে তারা (শেষনবীর মাধ্যমে) কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করত। অবশেষে যখন তাদের নিকট পরিচিত সেই কিতাব (কুরআন) এসে গেল তারা তাকে অস্বীকার করল। অতএব কাফেরদের উপরে আল্লাহর অভিসম্পাৎ’ (বাক্বারাহ ২/৮৯)।

এক্ষণে আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুঅতী জীবন বিবৃত করব। যার মধ্যে মাক্কী জীবনের তের বছর ছিল নিরবচ্ছিন্নভাবে দাওয়াতী জীবন এবং শেষ দশ বছরের মাদানী জীবন ছিল তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য দাওয়াত ও জিহাদের সমন্বিত কষ্টকর জীবন।

[1]. পালিত পুত্র যায়েদ বিন হারেছাহ্র তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যয়নাব বিনতে জাহশকে আল্লাহর হুকুমে বিয়ে করার পর কাফির ও মুনাফিকদের অপপ্রচারের প্রতিবাদে অত্র আয়াত নাযিল হয়। এর মাধ্যমে যায়েদ বিন হারেছাহকে ‘যায়েদ বিন মুহাম্মাদ’ বলতে নিষেধ করা হয় (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আহযাব ৪০ আয়াত)। দুর্ভাগ্য এটি এখন বিদ‘আতীদের নিকট মীলাদের আয়াতে পরিণত হয়েছে।

[2]. বুখারী হা/৩৫৩৫; মুসলিম হা/২২৮৬; মিশকাত হা/৫৭৪৫, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে।

[3]. বুখারী হা/৩৪৫৫; মুসলিম হা/১৮৪২; আবুদাঊদ হা/৪২৫২ মিশকাত/৩৬৭৫, ৫৪০৬, ছাওবান (রাঃ) হ’তে।

[4]. আহমাদ হা/১৪৩০৩; বুখারী হা/৩৩৫; মুসলিম হা/ ৫২১; মিশকাত হা/৫৭৪৭।

[5]. দারেমী, ‘ভূমিকা’ হা/৪৬, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৭৭৩।

[6]. মুসলিম হা/৫২৩; মিশকাত হা/৫৭৪৮।

[7]. মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০।

[8]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৮১ আয়াত; ইবনু হিশাম ১/২৩২-৩৪।

[9]. বাক্বারাহ ২/১৪৬; ইবনু হিশাম ১/২০৪।

[10]. ইবনু হিশাম ১/২১৪-২২২; আহমাদ হা/২৩৭৮৮, সনদ হাসান।

[11]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-জাওয়াবুছ ছহীহ লেমান বাদ্দালা দীনাল মাসীহ ১/৩৪০।

[12]. ইবনু হিশাম ১/২১১, সনদ হাসান; সীরাহ ছহীহাহ ১/১২২; ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ৮৯ আয়াত।