নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, সকল নবীই নিষ্পাপ ছিলেন। আর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) নবী হওয়ার আগে ও পরে যাবতীয় কুফরী থেকে এবং অহী প্রাপ্তির পরে কবীরা গোনাহের সংকল্প থেকেও নিষ্পাপ ছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ছগীরা গোনাহ জায়েয ছিল। তাঁদের এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, কুফরী ও কবীরা গোনাহ থেকে তিনি নবুঅত লাভের পূর্ব হ’তেই নিষ্পাপ ছিলেন। যেমন

(১) তিনি কুরায়েশদের নিয়ম অনুযায়ী হজ্জের সময় কখনো তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করেননি। বরং অন্যদের সাথে আরাফাতে অবস্থান করতেন। তাঁকে সেখানে দেখে একবার জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম আশ্চর্য হয়ে বলে উঠেছিলেন, وَاللهِ مِنَ الْحُمْسِ فَمَا شَأْنُهُ هَا هُنَا ‘আল্লাহর কসম! এ তো হুম্স-দের সন্তান। তার কি হয়েছে যে, সে এখানে অবস্থান করছে?[1]

(২) তিনি কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। একবার তিনি স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে কা‘বাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন। সে সময় যায়েদ মূর্তিকে স্পর্শ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। দ্বিতীয়বার যায়েদ আরেকটি মূর্তিকে স্পর্শ করেন বিষয়টির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নবুঅত লাভের আগ পর্যন্ত যায়েদ কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। তিনি কসম করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনোই মূর্তি স্পর্শ করেননি। অবশেষে আল্লাহ তাকে অহী প্রেরণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন।[2]

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনোই মূর্তির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত পশুর মাংস কিংবা যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, এমন কোন মাংস ভক্ষণ করেননি’ (বুখারী ফৎহসহ হা/৫৪৯৯)

(৪) কা‘বা পুনর্নির্মাণ কালে দূর থেকে পাথর বহন করে আনার সময় চাচা আববাসের প্রস্তাবক্রমে তিনি কাপড় খুলে ঘাড়ে রাখেন। ফলে তিনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি পাজামা কঠিনভাবে বেঁধে দিতে বলেন’ (বুখারী, মুসলিম)। যদিও বিষয়টি সেযুগে কোনই লজ্জাকর বিষয় ছিল না। ইবনু হাজার আসক্বালানী উক্ত হাদীছের আলোচনায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ স্বীয় নবী-কে নবুঅতের পূর্বে ও পরে সকল মন্দকর্ম থেকে হেফাযত করেন’।[3]

(৫) আল্লাহ তাঁর আগে-পিছের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন (বুখারী হা/৭৪১০)। তাই তিনি ছিলেন আল্লাহর মনোনীত নিষ্পাপ রাসূল[4]- ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহ তাঁর উপরে অনুগ্রহ করুন ও শান্তি বর্ষণ করুন!)।

[1]. বুখারী হা/১৬৬৪; মুসলিম হা/১২২০।

[2]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ।

[3]. মুসলিম হা/৩৪০; বুখারী ফৎহসহ হা/৩৬৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[4]. ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭।