নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ইয়াছরিবে ইহূদী-নাছারাদের অবস্থা (حالة اليهود والنصارى فى يثرب)

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, ইয়াছরিবের অধিবাসী আউস ও খাযরাজগণ ইসমাঈল-পুত্র নাবেত-এর বংশধর ছিলেন। কিন্তু তারা পরে মূর্তিপূজারী হয়ে যায়। সিরিয়া ও ইরাকের পথে ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং মিষ্ট পানি ও উর্বর অঞ্চল বিবেচনায় ইহূদীরা এখানে আগেই আগমন করে। তারা অত্যাচারী রাজা বুখতানছর কর্তৃক কেন‘আন (ফিলিস্তীন) থেকে উৎখাত হওয়ার পরে ইয়াছরিবে এসে বসবাস শুরু করেছিল এই উদ্দেশ্যে যে, তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস হারিয়েছে। অতএব তারা এখন বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী থাকবে এবং নিয়মিত হজ্জ-ওমরাহর মাধ্যমে পরকালীন পাথেয় হাছিল করবে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আখেরী নবীর আবির্ভাব যেহেতু মক্কায় হবে এবং তাঁর আবির্ভাবের সময় আসন্ন, অতএব তারা দ্রুত তাঁর দ্বীন কবুল করবে এবং তাঁর নেতৃত্বে আবার বায়তুল মুক্বাদ্দাস দখল করবে। তবে তাদের ধারণা ছিল যে, আখেরী নবী অবশ্যই তাদের নবী ইসহাক-এর বংশে হবেন। কিন্তু তা না হ’য়ে ইসমাঈল-এর বংশে হওয়াতেই ঘটল যত বিপত্তি।

মদীনায় ইহূদীদের আধিক্য ছিল এবং নাছারা ছিল খুবই কম। তাদের মূল অবস্থান ছিল মদীনা থেকে নাজরান এলাকায়। যা ছিল ৭৩টি পল্লী সমৃদ্ধ খ্রিষ্টানদের একটি বিরাট নগরীর নাম। বর্তমানে সড়কপথে এটি মদীনা থেকে ১২০৫ কি.মি. দক্ষিণে ইয়ামন সীমান্তে অবস্থিত।

ইহূদী ও নাছারাদের মধ্যে তাওরাত-ইনজীলের কোন শিক্ষা অবশিষ্ট ছিল না। তাদের ধর্ম ও সমাজনেতারা(الْأَحْبَارُ وَالرُّهْبَانُ) ভক্তদের কাছে ‘রব’-এর আসন দখল করেছিল। ইহূদীরা ওযায়েরকে ‘আল্লাহর বেটা’ বানিয়েছিল এবং নাছারারা মসীহ ঈসাকে একইভাবে ‘বেটা’ দাবী করেছিল (তওবাহ ৯/৩০-৩১)। বরং তারা মারিয়াম, ঈসা ও আল্লাহকে নিয়ে তিন উপাস্যের সমন্বয়ে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল (মায়েদাহ ৫/৭৩)। তাদের পীর-দরবেশরা ধর্মের নামে বাতিল পন্থায় মানুষের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করত এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতো (তওবাহ ৯/৩৪)। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা হারাম করত না (তওবাহ ৯/২৯)। এক কথায় তাওরাত-ইনজীলের বাহক হবার দাবীদার হ’লেও তারা ছিল পুরা স্বেচ্ছাচারী ও প্রবৃত্তিপূজারী দুনিয়াদার। ঠিক আজকের মুসলিম ধর্মনেতা ও সমাজনেতাদের অধিকাংশের অবস্থা যেমনটি হয়েছে।[1]

[1]. এ যুগের মুসলমানদের অবস্থা বর্ণনা করে ভারতের উর্দূ কবি হালী বলেন,

كرے غير گر بت كى پوجا تو كافر + جو ٹهراے بيٹا خدا كا تو كافر

كہے آگ كو قبلہ اپنا تو كافر + كو اكب ميں مانے كرشمہ تو كافر

مگر مومنوں پر كشاوه ہيں راہيں + پرستش كريں شوق سے جسكى چاہيں

نبى كو جو چاہيں خدا كر د كهائيں + اماموں كا رتبہ نبى سے بڑهائيں

مزاروں پہ دن رات نذريں چڑهائيں + شہيدوں سے جا جا كے مانگيں دعائيں

نہ توحيد ميں كچھ خلل اس سے آئے + نہ اسلام بگڑے نہ ايمان جاے

(১) অন্যেরা যদি মূর্তিপূজা করে, সে হয় কাফের। যে আল্লাহ্র বেটা আছে বলে, সে হয় কাফের। (২) আগুনকে ক্বিবলা বললে, সে হয় কাফের। তারকারাজির মধ্যে যে ক্ষমতা আছে বলে, সে কাফের। (৩) কিন্তু মুমিনদের জন্য রাস্তা রয়েছে খোলা। খুশীমনে সে করে পূজা যাকে সে চায়। (৪) নবীকে যে চায় আল্লাহ বলে দেখায়। ইমামদের সম্মান নবীদের উপর উঠায়। (৫) মাযারগুলিতে দিন-রাত নযর-নিয়ায চড়ায়। শহীদদের কাছে গিয়ে গিয়ে কেবলই দো‘আ চায়। (৬) এতে তাদের তাওহীদে না কোন ত্রুটি আসে। না ইসলাম বিকৃত হয়, না ঈমান যায়’ (আলতাফ হোসায়েন হালী (১২৫৩-১৩৩২ হিঃ/১৮৩৭-১৯১৪ খৃঃ), মুসাদ্দাসে হালী-উর্দূ ষষ্ঠপদী (লাক্ষ্ণৌ, ভারত : ১৩২০/১৯০২) ৪৮ পৃঃ)।