ইউসুফ (আঃ) ১২০ বছর বয়সে মিসরে ইন্তেকাল করেন। তিনিও কেন‘আনে সমাধিস্থ হওয়ার জন্য অছিয়ত করে যান। তাঁর দুই ছেলে ছিল ইফরাঈম ও মানশা।[36] কেন‘আনের উক্ত স্থানটি এখন ফিলিস্তীনের হেবরন এলাকায় ‘আল-খলীল’ নামে পরিচিত। আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُوْلِي الأَلْبَابِ، ‘নিশ্চয়ই নবীগণের কাহিনীতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ রয়েছে’ (ইউসুফ ১২/১১১)।
ঐতিহাসিক মানছূরপুরী (মৃ: ১৩৪৯/১৯৩০ খৃ:) বলেন, ইউসুফ (আঃ)-এর অবস্থার সাথে আমাদের নবী (ছাঃ)-এর অবস্থার পুরোপুরি মিল ছিল। দু’জনেই সৌন্দর্য ও পূর্ণতার অধিকারী ছিলেন। দু’জনকেই নানাবিধ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ’তে হয়েছে। দু’জনের মধ্যে ক্ষমা ও দয়াগুণের প্রাচুর্য ছিল। দু’জনেই স্ব স্ব অত্যাচারী ভাইদের উদ্দেশ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেছিলেন, لاَتَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই’। দু’জনেই আদেশ দানের ও শাসন ক্ষমতার মালিক ছিলেন এবং পূর্ণ কামিয়াবী ও প্রতিপত্তি থাকা অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছেন’।[37]
পূর্বে বর্ণিত ঐতিহাসিক বর্ণনা সমূহের সাথে মানছূরপুরীর বর্ণনার মধ্যে কিছু গরমিল রয়েছে। ঐতিহাসিকগণের মধ্যে এরূপ মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য এই যে, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বাইরে সকল বক্তব্যের উৎস হ’ল ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ। সেখানে বক্তব্যের ভিন্নতার কারণেই মুসলিম ঐতিহাসিকদের বক্তব্যে ভিন্নতা এসেছে। এই সঙ্গে এটাও জানা আবশ্যক যে, ইহুদীরা ছিল আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকারকারী, অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যাকারী, আল্লাহর কিতাবসমূহকে বিকৃতকারী ও তার মাধ্যমে দুনিয়া উপার্জনকারী এবং নবীগণের চরিত্র হননকারী। বিশেষ করে ইউসুফ, দাঊদ, সুলায়মান, ঈসা ও তাঁর মায়ের উপরে যে ধরনের জঘন্য অপবাদ সমূহ তারা রটনা করেছে, ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। অতএব ইউসুফ (আঃ) সম্পর্কে তাদের বর্ণিত অভব্য ও আপত্তিকর বিষয়াবলী থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
[37]. সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী, রহমাতুল লিল আলামীন (সুইওয়ালাঁ দিল্লী-২ : ই‘তিক্বাদ পাবলিশিং হাউস, ১ম সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ), ৩/১৩৩ পৃঃ।