নবীদের কাহিনী ১১. হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ইউসুফের কৌশল অবলম্বন ও বেনিয়ামীনের মিসর আগমন

সুদ্দী ও অন্যান্যদের বরাতে কুরতুবী ও ইবনু কাছীর বর্ণনা করেন যে, দশ ভাই দরবারে পৌঁছলে ইউসুফ (আঃ) তাদেরকে দোভাষীর মাধ্যমে এমনভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, যেমন অচেনা লোকদের করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং পিতা ইয়াকূব ও ছোটভাই বেনিয়ামীনের বর্তমান অবস্থা জেনে নেওয়া। যেমন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা ভিন্নভাষী এবং ভিনদেশী। আমরা কিভাবে বুঝব যে, তোমরা শত্রুর গুপ্তচর নও? তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা গুপ্তচর নই। আমরা আল্লাহর নবী ইয়াকূব (আঃ)-এর সন্তান। তিনি কেন‘আনে বসবাস করেন। অভাবের তাড়নায় তাঁর নির্দেশে সুদূর পথ অতিক্রম করে আপনার কাছে এসেছি আপনার সুনাম-সুখ্যাতি শুনে। যদি আপনি আমাদের সন্দেহ বশে গ্রেফতার করেন অথবা শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন, তাহ’লে আমাদের অতিবৃদ্ধ পিতা-মাতা ও আমাদের দশ ভাইয়ের পরিবার না খেয়ে মারা পড়বে।[29]

একথা শুনে ইউসুফের হৃদয় উথলে উঠল। কিন্তু অতি কষ্টে বুকে পাষাণ চেপে রেখে বললেন, তোমাদের পিতার আরও কোন সন্তান আছে কি?

তারা বলল, আমরা বারো ভাই ছিলাম। তন্মধ্যে এক ভাই ইউসুফ ছোট বেলায় জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। আমাদের পিতা তাকেই সর্বাধিক স্নেহ করতেন। অতঃপর তার সহোদর সবার ছোট ভাই বেনিয়ামীন এখন বাড়ীতে আছে পিতাকে দেখাশুনার জন্য। সবকথা শুনে নিশ্চিত হবার পর ইউসুফ (আঃ) তাদেরকে রাজকীয় মেহমানের মর্যাদায় রাখার এবং যথারীতি খাদ্য-শস্য প্রদানের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বিদায়ের সময় তাদের বললেন, পুনরায় আসার সময় তোমরা তোমাদের ছোট ভাইটিকে সাথে নিয়ে এসো। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ-

وَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُونِيْ بِأَخٍ لَّكُم مِّنْ أَبِيْكُمْ أَلاَ تَرَوْنَ أَنِّيْ أُوْفِي الْكَيْلَ وَأَنَا خَيْرُ الْمُنْزِلِيْنَ- فَإِن لَّمْ تَأْتُونِيْ بِهِ فَلاَ كَيْلَ لَكُمْ عِنْدِي وَلاَ تَقْرَبُونِ- قَالُواْ سَنُرَاوِدُ عَنْهُ أَبَاهُ وَإِنَّا لَفَاعِلُونَ- (يوسف ৫৯-৬১)-

‘অতঃপর ইউসুফ যখন তাদের রসদ সমূহ প্রস্ত্তত করে দিল, তখন বলল, তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তোমরা কি দেখছ না যে, আমি মাপ পূর্ণভাবে দিয়ে থাকি এবং মেহমানদের উত্তম সমাদর করে থাকি’? (৫৯)। ‘কিন্তু যদি তোমরা তাকে আমার কাছে না আনো, তবে আমার কাছে তোমাদের কোন বরাদ্দ নেই এবং তোমরা আমার নিকটে পৌঁছতে পারবে না’ (৬০)। ‘ভাইয়েরা বলল, আমরা তার সম্পর্কে তার পিতাকে রাযী করার চেষ্টা করব এবং আমরা একাজ অবশ্যই করব’ (ইউসুফ ১২/৫৯-৬১)

এরপর ইউসুফ (আঃ) কৌশল অবলম্বন করলেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, দশটি উটের সমপরিমাণ খাদ্যমূল্য সংগ্রহ করতে ভাইদের সামর্থ্য নাও হ’তে পারে। অথচ ছোট ভাইকে আনা প্রয়োজন। সেকারণ তিনি কর্মচারীদের বলে দিলেন, খাদ্যমূল্য বাবদ তাদের দেওয়া অর্থ তাদের কোন একটি বস্তার মধ্যে ভরে দিতে। যাতে বাড়ী গিয়ে উক্ত টাকা নিয়ে আবার তারা চলে আসতে পারে। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ-

وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوْا بِضَاعَتَهُمْ فِي رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُوْنَهَا إِذَا انْقَلَبُوْا إِلَى أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ- (يوسف ৬২)-

‘ইউসুফ তার কর্মচারীদের বলল, তাদের পণ্যমূল্য তাদের রসদ-পত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে গৃহে পৌঁছে তারা তা বুঝতে পারে। সম্ভবতঃ তারা পুনরায় আসবে’ (ইউসুফ ১২/৬২)

ইউসুফের ভাইয়েরা যথাসময়ে বাড়ী ফিরে এল। বস্তা খুলে পণ্যমূল্য ফেরত পেয়ে তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। তারা এটাকে তাদের প্রতি আযীযে মিছরের বিশেষ অনুগ্রহ বলে ধারণা করল। এক্ষণে তারা পিতাকে বলল, আববা! আমরা যখন পণ্যমূল্য পেয়ে গেছি, তখন আমরা সত্বর পুনরায় মিসরে যাব। তবে মিসররাজ আমাদেরকে একটি শর্ত দিয়েছেন যে, এবারে যাওয়ার সময় ছোট ভাই বেনিয়ামীনকে নিয়ে যেতে হবে। তাকে ছেড়ে গেলে খাদ্যশস্য দিবেন না বলে তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। অতএব আপনি তাকে আমাদের সাথে যাবার অনুমতি দিন। জবাবে পিতা ইয়াকূব (আঃ) বললেন, তার সম্পর্কে তোমাদের কিভাবে বিশ্বাস করব? ইতিপূর্বে তোমরা তার ভাই ইউসুফ সম্পর্কে বিশ্বাসভঙ্গ করেছ’। অতঃপর পরিবারের অভাব-অনটনের কথা ভেবে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে তিনি বেনিয়ামীনকে তাদের সাথে যাবার অনুমতি দিলেন। ঘটনাটি কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ-

فَلَمَّا رَجَعُوْا إِلَى أَبِيْهِمْ قَالُوْا يَا أَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَأَرْسِلْ مَعَنَا أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ- قَالَ هَلْ آمَنُكُمْ عَلَيْهِ إِلاَّ كَمَا أَمِنتُكُمْ عَلَى أَخِيْهِ مِن قَبْلُ فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظاً وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ- وَلَمَّا فَتَحُوْا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوْا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ إِلَيْهِمْ قَالُوْا يَا أَبَانَا مَا نَبْغِي هَـذِهِ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ إِلَيْنَا وَنَمِيْرُ أَهْلَنَا وَنَحْفَظُ أَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيْرٍ ذَلِكَ كَيْلٌ يَسِيْرٌ- قَالَ لَنْ أُرْسِلَهُ مَعَكُمْ حَتَّى تُؤْتُوْنِ مَوْثِقاً مِّنَ اللهِ لَتَأْتُنَّنِيْ بِهِ إِلاَّ أَن يُّحَاطَ بِكُمْ فَلَمَّا آتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللهُ عَلَى مَا نَقُوْلُ وَكِيْلٌ- (يوسف ৬৩-৬৬)-

‘অতঃপর তারা যখন তাদের পিতার কাছে ফিরে এল, তখন বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য খাদ্যশস্যের বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অতএব আপনি আমাদের সাথে আমাদের ভাইকে প্রেরণ করুন, যাতে আমরা খাদ্যশস্যের বরাদ্দ আনতে পারি। আমরা অবশ্যই তার পুরোপুরি হেফাযত করব’ (৬৩)। ‘পিতা বললেন, আমি কি তার সম্পর্কে তোমাদের সেইরূপ বিশ্বাস করব, যেরূপ বিশ্বাস ইতিপূর্বে তার ভাই সম্পর্কে করেছিলাম? অতএব আল্লাহ উত্তম হেফাযতকারী এবং তিনিই সর্বাধিক দয়ালু’ (৬৪)। ‘অতঃপর যখন তারা পণ্য সম্ভার খুলল, তখন দেখতে পেল যে, তাদেরকে তাদের পণ্যমূল্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। তারা (আনন্দে) বলে উঠলো, হে আমাদের পিতা! আমরা আর কি চাইতে পারি? এইতো আমাদের দেওয়া পণ্যমূল্য আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা আবার আমাদের পরিবারের জন্য খাদ্যশস্য আনব। আমরা আমাদের ভাইয়ের হেফাযত করব এবং এক উট খাদ্যশস্য বেশী আনতে পারব এবং ঐ বরাদ্দটা খুবই সহজ’ (৬৫)। ‘পিতা বললেন, তাকে তোমাদের সাথে পাঠাব না, যতক্ষণ না তোমরা আমার নিকটে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার কর যে, তাকে অবশ্যই আমার কাছে পৌঁছে দেবে। অবশ্য যদি তোমরা একান্তভাবেই অসহায় হয়ে পড় (তবে সেকথা স্বতন্ত্র)। অতঃপর যখন সবাই তাঁকে অঙ্গীকার দিল, তখন তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যে কথা হ’ল, সে ব্যাপারে আল্লাহ মধ্যস্থ রইলেন’ (ইউসুফ ১২/৬৩-৬৬)

উপরের আলোচনায় মনে হচ্ছে যে, দশভাই বাড়ী এসেই প্রথমে তাদের পিতার কাছে বেনিয়ামীনকে নিয়ে যাবার ব্যাপারে দরবার করেছে। অথচ তারা ভাল করেই জানত যে, এ প্রস্তাবে পিতা কখনোই রাযী হবেন না। দীর্ঘদিন পরে বাড়ী ফিরে অভাবের সংসারে প্রথমে খাদ্যশস্যের বস্তা না খুলে বৃদ্ধ পিতার অসন্তুষ্টি উদ্রেককারী বিষয় নিয়ে কথা বলবে, এটা ভাবা যায় না। পণ্যমূল্য ফেরত পাওয়ায় খুশীর মুহূর্তেই বরং এরূপ প্রস্তাব দেওয়াটা যুক্তিসম্মত।

উল্লেখ্য যে, কুরআনী বর্ণনায় আগপিছ হওয়াতে ঘটনার আগপিছ হওয়া যরূরী নয়। যেমন মূসা (আঃ)-এর কওমের গাভী কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা (বাক্বারাহ ৬৭-৭১) শেষে ঘটনার কারণ ও সূত্র বর্ণনা করা হয়েছে (বাক্বারাহ ৭২-৭৩)। এমন বিবরণ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। এখানেও সেটা হয়েছে বলে অনুমিত হয়।

ছেলেদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে বেনিয়ামীনকে তাদের সাথে পাঠাবার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার পর পিতা ইয়াকূব (আঃ) পরিষ্কারভাবে বলেন, فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظاً ‘আল্লাহ্ই উত্তম হেফাযতকারী’ (ইউসুফ ১২/৬৪)। অর্থাৎ তিনি বেনিয়ামীনকে আল্লাহর হাতেই সোপর্দ করলেন। আল্লাহ তার বান্দার এই আকুতি শুনলেন। অতঃপর ইয়াকূব (আঃ) ছেলেদেরকে কিছু উপদেশ দেন, যার মধ্যে তাঁর বাস্তববুদ্ধি ও দূরদর্শিতার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি তাদেরকে একসাথে একই প্রবেশদ্বার দিয়ে মিসরের রাজধানীতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। বরং তাদেরকে পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন দরজা দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে বলেন। কেননা তিনি ভেবেছিলেন যে, একই পিতার সন্তান সুন্দর ও সুঠামদেহী ১১ জন ভিনদেশীকে একত্রে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলে অনেকে মন্দ কিছু সন্দেহ করবে। দ্বিতীয়তঃ প্রথমবার সফরে মিসররাজ তাদের প্রতি যে রাজকীয় মেহমানদারী প্রদর্শন করেছেন, তাতে অনেকের মনে হিংসা জেগে থাকতে পারে এবং তারা তাদের ক্ষতি করতে পারে। তৃতীয়তঃ তাদের প্রতি অন্যদের কুদৃষ্টি লাগতে পারে। বিষয়টি আল্লাহ বর্ণনা করেন এভাবে,

وَقَالَ يَا بَنِيَّ لاَ تَدْخُلُواْ مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُواْ مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ وَمَا أُغْنِيْ عَنكُم مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ ِللهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُوْنَ- (يوسف ৬৭)-

‘ইয়াকূব বললেন, হে আমার সন্তানেরা! তোমরা সবাই একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না। বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। তবে আল্লাহ থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারি না। আল্লাহ ব্যতীত কারু হুকুম চলে না। তাঁর উপরেই আমি ভরসা করি এবং তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত সকল ভরসাকারীর’ (ইউসুফ ১২/৬৭)

অতঃপর পিতার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে বেনিয়ামীন সহ ১১ ভাই ১১টি উট নিয়ে মিসরের পথে যাত্রা করল। পথিমধ্যে তাদের কোনরূপ বাধা-বিঘ্ন ঘটেনি। মিসরে পৌঁছে তারা পিতার উপদেশ মতে বিভিন্ন দরজা দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে শহরে প্রবেশ করল। ইয়াকূবের এ পরামর্শ ছিল পিতৃসূলভ স্নেহ-মমতা হ’তে উৎসারিত। যার ফল সন্তানেরা পেয়েছে। তারা কারু হিংসার শিকার হয়নি কিংবা কারু বদনযরে পড়েনি। কিন্তু এর পরেও আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত তাক্বদীর কার্যকর হয়েছে। বেনিয়ামীন চুরির মিথ্যা অপবাদে গ্রেফতার হয়ে যায়। যা ছিল ইয়াকূবের জন্য দ্বিতীয়বার সবচেয়ে বড় আঘাত। কিন্তু এটা ইয়াকূবের দো‘আর পরিপন্থী ছিল না। কেননা তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারি না। আল্লাহ ব্যতীত কারু হুকুম চলে না’ (ইউসুফ ১২/৬৭)। অতএব পিতার নির্দেশ পালনকরলেও তারা আল্লাহর পূর্বনির্ধারণ বা তাক্বদীরকে এড়াতে পারেনি। আর সেই তাক্বদীরের ফলেই ইয়াকূব (আঃ) তার হারানো দু’সন্তানকে একত্রে ফিরে পান। ইয়াকূবের গভীর জ্ঞানের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, وَإِنَّهُ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُوْنَ، ‘ইয়াকূব বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। যা আমরা তাকে দান করেছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (ইউসুফ ১২/৬৮)

বলা বাহুল্য, ইয়াকূবের সেই ইল্ম ছিল আল্লাহর সত্তা ও তাঁর গুণাবলীর ইল্ম, আল্লাহর অতুলনীয় ক্ষমতার ইল্ম। আর এটাই হ’ল মা‘রেফাত বা দিব্যজ্ঞান, যা সূক্ষ্মদর্শী মুত্তাক্বী আলেমগণ লাভ করে থাকেন। সেজন্যেই তিনি নিজের দেওয়া কৌশলের উপরে নির্ভর না করে আল্লাহর উপরে ভরসা করেন ও তাঁর উপরেই ছেলেদের ন্যস্ত করেন। সেকারণেই আল্লাহ তাঁর নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে ছেলেদেরকে সসম্মানে পিতার কোলে ফিরিয়ে দেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ

উক্ত বিষয়গুলি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে নিম্নরূপে:

وَلَمَّا دَخَلُوْا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوْهُمْ مَّا كَانَ يُغْنِيْ عَنْهُم مِّنَ اللهِ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ حَاجَةً فِيْ نَفْسِ يَعْقُوْبَ قَضَاهَا وَإِنَّهُ لَذُوْ عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُوْنَ- وَلَمَّا دَخَلُواْ عَلَى يُوْسُفَ آوَى إِلَيْهِ أَخَاهُ قَالَ إِنِّي أَنَاْ أَخُوْكَ فَلاَ تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ- (يوسف ৬৮-৬৯)-

‘তারা যখন তাদের পিতার নির্দেশনা মতে শহরে প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা তাদের বাঁচাতে পারল না (অর্থাৎ তাদের সে কৌশল কাজে আসল না এবং বেনিয়ামীন গ্রেফতার হ’ল)। কেবল ইয়াকূবের একটি প্রয়োজন (অর্থাৎ ছেলেদের দেওয়া পরামর্শে) যা তার মনের মধ্যে (অর্থাৎ, স্নেহ মিশ্রিত তাকীদ) ছিল, যা তিনি পূর্ণ করেছিলেন বস্ত্ততঃ তিনি তো ছিলেন একজন জ্ঞানী, যে জ্ঞান আমরা তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম (অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’। ‘অতঃপর যখন তারা ইউসুফের নিকটে উপস্থিত হ’ল, তখন সে তার ভাই (বেনিয়ামীন)-কে নিজের কাছে রেখে দিল এবং (গোপনে তাকে) বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমার সহোদর ভাই (ইউসুফ)। অতএব তাদের (অর্থাৎ সৎ ভাইদের) কৃতকর্মের জন্য দুঃখ করো না’ (ইউসুফ ১২/৬৮-৬৯)

[29]. তাফসীর কুরতুবী, ইবনু কাছীর, ইউসুফ ৫৮-৫৯।