সালাফী বা আহলে হাদীস পরিচয় দেওয়া কি শরীয়ত-বিরোধী?

না, যখন ময়দানে রয়েছে শিয়া, খারেজী, মু'তাযেলী, জাহমী, আশআরী, মাতুরীদী, দেওবান্দী, বেরেলী, সূফী, ইখওয়ানী, জামাতে ইসলামী, তবলীগী প্রভৃতি নানা ফিরকা, আর তারা সকলেই দাবিতে মুসলিম, তখন সঠিক মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিমের একটা পৃথক পরিচয় হওয়া দরকার, যাতে তাকে সকলের মাঝে চেনা সহজ হয়।

অনেকে বলেন, পরিচয়ে বলা উচিত, 'আমি সাহাবাদের বুঝে কিতাব ও সুন্নাহর অনুসারী।

জী! কিন্তু পরিচয়টা কি লম্বা হয়ে যায় না? উক্ত কথাটিকে যদি একটি শব্দে বলতে চাই, তাহলে কী বলা বলা যাবে? এক কথায় সালাফী বললে কি দীর্ঘ কথাটি সংক্ষিপ্ত হয় না?

বলবেন, তাতে মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বলব, না, মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা তো সৃষ্টি হয়েই আছে। বলবেন, আপনাদের সে নামকরণের দলীল কী? বলব, দলীল অনেক দেখেছেন। অনেক পড়েছেন। আর এ নাম নিলে কেউ মুসলিম নাম থেকে বের হয়ে যায় না। যেমন এ ছাড়া। অন্য নাম নিলেও মুসলিম ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না।

কেউ যদি নিজেকে ‘মিসরী’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে মুহাজির’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে ‘আনসারী’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে ‘আহলে কুরআন’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম মুসলিম থেকে বের হয়ে যায়?

তাহলে কেউ যদি নিজেকে সালাফী’ বা ‘আহলে হাদীস বলে, সে আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যাবে কেন? আমি একজন ভারতীয়। এ পরিচয় ভারতের বাইরে দিতে হয়। ভারতের ভিতরে অন্য রাজ্যে ‘বাঙ্গালী’ বলে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব?

রাজ্যের ভিতরে অন্য জেলায় বর্ধমানী’ বলে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব? জেলার ভিতরে অন্য শহর বা গ্রামে থানার বা গ্রামের নামের সাথে সম্পর্ক জুড়ে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব?

অনুরূপই আমি মুসলিম। কিন্তু মুসলিমরা যখন শীআহ (শিয়া) হয়ে গেল, তখন আমি আহলে সুন্নাহ। তখনও আমি মুসলিম থাকলাম। বরং আসল মুসলিম থাকলাম।

মুসলিমরা যখন খারেজী (খাওয়ারিজ) হয়ে গেল এবং আরো অনেক খেয়ালখুশির পূজারী ও বিদআতী দলে বিভক্ত হল, তখন আমি আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ। তার মানে আমি খেয়াল-খুশির পূজারী বা বিদআতী নই, আহলে সুন্নাহ। এবং খারেজী নই, আহলে জামাআহ, তখনও আমি মুসলিম থাকলাম বরং আসল মুসলিম থাকলাম।

আবার আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ যখন সহীহ হাদীস ও আষারের ফায়সালা ব্যতিরেকে রায় ও ফিকহের ফায়সালা গ্রহণ শুরু করল, তখন আমি আহলে হাদীস বা আহলে আষার হলাম। তখনও আমি মুসলিম থাকলাম। বরং আসল মুসলিম থাকলাম। অনেকে বলেন, 'তোমরা নিজেদেরকে আহলে হাদীস কেন বল? আমরা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে ‘মুহাম্মাদী’ বা মহামেডান’ বলি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্য থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার জন্য। কিন্তু মহামেডানদের মধ্যে অনেক বিদআতীও আছে। তাই বিদআতী সম্প্রদায় থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার জন্য বলে থাকি, ‘আহলে সুন্নাহ।

আর মহানবী (সা.)-এর ‘সুন্নাহ’ জানা যায় তাঁর হাদীস থেকে, তার সুন্নাহ গ্রহণ করে সহীহ হাদীস থেকে। তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে ‘আহলে হাদীস বলে।

আহলে হাদীস রায় ও কিয়াসের উপর সহীহ হাদীস’কে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

কোন ব্যক্তি বিশেষের অন্ধানুকরণ না করে তার কথার উপর সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

হাদীসের কোন কথা আপাতদৃষ্টিতে জ্ঞানের বাইরে মনে হলেও জ্ঞানের উপর সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

মতবিরোধপূর্ণ ফিক্বহী মাসায়েলে ফুকাহাদের মতামতের উপরে মুহাদ্দিসীনদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

অনেকে বলে থাকেন, হাদীসে নবী (সা.)-এর সুন্নত অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, হাদীস নয়। অতএব ‘আহলে সুন্নত না বলে আহলে হাদীস’ বলা সঠিক নয়।

আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা আমার সুন্নতকে মজবুত করে ধর।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)

“যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী-মুসলিম)

“আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নত।” (হাকেম, সহীহ তারগীব ৩৬নং)

মহানবী (সা.)-এর বাণীকে হাদীস বলা হয়।

এ বাণী আবার দুই প্রকারঃ যে বাণী আল্লাহর অহী-ভিত্তিক, তার উপর আমল করা ওয়াজেব। আর যা অহী-ভিত্তিক নয় (সাংসারিক), তা মান্য করা জরুরী নয়।

তার কর্ম ও মৌন-সম্মতিকেও হাদীস বলা হয়। কিছু কিছু হাদীস আছে, যা উম্মতের জন্য পালন করা বৈধ নয়। সে আমলের হাদীস কেবল মহানবী ঐs-ই করে গেছেন। যেমন একই সাথে নয়টি স্ত্রী রাখার হাদীস। তা কোন উম্মতী করতে পারে না, তা হাদীসে থাকলেও উম্মতীর জন্য পালনীয় সুন্নত নয়। এই জন্য ‘হাদীস’ কথাটি আম। আর ‘সুন্নাহ’ কথাটি খাস। আর সুন্নাহর বিশেষ অর্থ হল তরীকা বা আদর্শ। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, 'তোমরা আমার সুন্নাহ, সুন্নত, তরীকা বা আদর্শকে শক্তভাবে ধারণ কর।” “হাদীসকে ধারণ কর’ বলা হয়নি। যেহেতু তা বলা হলে সকল হাদীসের উপর আমল করা ওয়াজেব হয়ে যেত। আর তা সম্ভব ছিল না।

পক্ষান্তরে তার সুন্নত ও আদর্শ জানার মাধ্যম হল হাদীস। আর হাদীসই বলতে পারে, তার কোন বাণী ও কর্ম আমাদের জন্য সুন্নত বা আদর্শ। হাদীসই হল কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই আহলে হাদীস’ বলা ভুল নয়। কোন সমস্যার সমাধানের সময় মযহাবী উলামাগণ নিজ নিজ ফিকাহ-গ্রন্থ থেকে সমাধান খোজেন, কিন্তু আহলে হাদীস উলামাগণ। সহীহ হাদীস থেকে তার সমাধান খোঁজেন। তাই আহলে ফিক্বহের মোকাবেলায় আহলে হাদীস’ নাম ভুল নয়। মযহাবীগণ নিজেদের ফিকহের মযহাব ও সমাধানকে বহাল রাখতে তার দলীল পেশ করেন হাদীস থেকে। সেটা যয়ীফ বা জাল হলেও মযহাব ও সমাধান পরিবর্তন করতে পারেন না। কিন্তু আহলে হাদীস কোন হাদীস যয়ীফ বা জাল হলে সমাধান পরিবর্তন করে এবং কেবল সহীহ হাদীসের উপর আমল করে। সকল আয়েম্মার নীতি ছিল অনুরূপ। তাই আহলে মযহাবের মোকাবেলায় আহলে হাদীস’ নাম। ভুল নয়। আহলে হাদীস মানে তারা কুরআন মানে না, তা নয়। কারণ হাদীসেই কুরআন মানতে বলা হয়েছে। আর কুরআনের বাণীও এক অর্থে হাদীস। সুতরাং যে হাদীস মানবে, সে কুরআন অবশ্যই মানবে। কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতে গিয়ে আহলে হাদীস’ বলে পরিচয় দেওয়া ভুল নয়।

আহলে হাদীস এ কথা জানে যে, ফিক্বহের অধিকাংশ মাসায়েলে দলীল আছে। কিন্তু সে দলীল যয়ীফ হলে এবং তার মোকাবেলায় সহীহ হাদীস থাকলে, আহলে হাদীস সহীহ হাদীস গ্রহণ করে। দলীলে কোন সাহাবার উক্তি বা আমল থাকলে এবং তার মোকাবেলায় রসূল। ই-এর সরাসরি কোন উক্তি বা কর্ম থাকলে, আহলে হাদীস সাহাবার আষারের মোকাবেলায় রসূল ৫-এর হাদীসকে প্রাধান্য দেয়। এই হিসাবেও ‘আহলে হাদীস’ নাম ভুল নয়।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, 'আমি তো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) তার অপেক্ষা কথায় উত্তম আর কোন ব্যক্তি? (হা-মীম সাজদাহঃ ৩৩)।

إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِي حَرَّمَهَا وَلَهُ كُلُّ شَيْءٍ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎ, আমি তো এ নগরীর প্রতিপালকের উপাসনা করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। সমস্ত কিছু তারই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের একজন হই। (নামলঃ ৯১)।

وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ

অর্থাৎ, সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে যেভাবে সংগ্রাম করা উচিত; তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনতা আরোপ করেননি; এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম এবং এই গ্রন্থেও; যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষী স্বরূপ হও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে অবলম্বন কর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি! (হাজ্জঃ ৭৮)

মহানবী (সা.) বলেছেন,

وأنا آمركم بخمس الله أمرني بهن بالجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد في سبيل الله فإنه من خرج من الجماعة قيد شبر فقد خلع ربقة الاسلام من عنقه الا ان يرجع ومن ومن دعا يدعوی الجاهلية فهو من جثاء جهنم

-(-২ “আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের আদেশ করছি, যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন। রাষ্ট্রনেতার কথা শুনবে, তার আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরত করবে এবং একই রাষ্ট্রনেতার নেতৃত্বে) জামাআতবদ্ধভাবে বসবাস করবে। যেহেতু যে ব্যক্তি বিঘত পরিমাণ জামাআত থেকে দুরে সরে যায়, সে আসলে ফিরে না আসা পর্যন্ত ইসলামের রশিকে নিজ গলা থেকে খুলে ফেলে দেয়। আর যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাক ডাকে, সে আসলে জাহান্নামীদের দলভুক্ত।”

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে? তিনি বললেন,

وإن صام وإن صلى وزعم أنه مسلم فادعوا المسلمين بأسمائهم بما سماهم الله عز وجل المسلمين الممؤمنين عباد الله عز وجل

“যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা আল্লাহর (নামে) ডাকে ডাকো, যিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম, মু’মিন।” (আহমাদ ১৭ ১৭০, তিরমিযী ২৮৬৩, ত্বাবারানী ৩৩৫০, আবু য়্যা’লা ১৫৭১, ইবনে হিব্বান ৬২৩৩নং) কিন্তু তিনি এ কথাও বলেছেন,

من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنی وستة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة

---তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার সুন্নাহ (পথ ও আদর্শ) এবং আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, দাতে কামড়ে ধরো। আর দ্বীনে। নবরচিত কর্ম থেকে সাবধান থেকো। কারণ প্রত্যেক নবরচিত (দ্বীনী) কর্মই হল 'বিদআত'। আর প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ ১৭ ১৪৪, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৮ ১৫ নং, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৬৫নং)

افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة وستفترق أمتي على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة قالوا من هي يا رسول الله؟ قال الجماعة وفى رواية ما أنا عليه واصحابى

“ইয়াহুদী একাত্তর দলে এবং খ্রিষ্টান বাহাত্তর দলে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। আর এই উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকী সব ক’টি জাহান্নামে যাবে।” অতঃপর ঐ একটি দল প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন, “তারা হল জামাআত।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আমি ও আমার সাহাবা যে মতাদর্শের উপর আছি তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” (সুনান আরবাআহ মিশকাত ১৭১১৭২, সিলসিলাহ সহীহাহ ২০৩, ১৪৯২নং)

تفترق أمتي على بضع وسبعين فرقة أعظمها فتنة على أمتي قوم يقيسون الأمور برأيهم فيحلون الحرام ويحرمون الحلال

“আমার উম্মত সত্তরাধিক (তিয়াত্তর) ফিকায় বিভক্ত হবে। এদের মধ্যে আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা (ও ক্ষতির কারণ হবে একটি এমন সম্প্রদায়, যারা নিজ রায় দ্বারা সকল ব্যাপারকে ‘কিয়াস’ (অনুমান) করবে; আর এর ফলে তারা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে।” (আল-ইবানাহ ইবনে বাত্ত্বাহ ১/৩৭৪ হাকেম ৪/৪৩০, মাজমাউয যাওয়াইদ ১১৭৯)

আর সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্যরূপে প্রকাশও পেয়েছে। পরবর্তী যুগে ‘মুসলিম নাম নিয়ে জাতির মধ্যে অনেক অমুসলিম’ বা ‘নামধারী মুসলিম’-দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কেবল মুসলিম’ বললে নকল ও ভেজালমার্কা মুসলিমদের মধ্য থেকে প্রকৃত মুসলিমকে পার্থক্য করা যেত না। পরবর্তীতে ফির্কাবন্দির জালে ইসলাম বন্দী হয়ে পড়লে মূল। ইসলামের অনুসারীদেরকে (শিয়া প্রভৃতি) আহলে বিদআর মোকাবেলায় আহলে সুন্নাহ’ নাম নিতে হয়েছে এবং ইসলামী রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী খাওয়ারিজদের মোকাবেলায় আহলে সুন্নাহ অল-জামাআহ’ বলে পরিচয় দিতে হয়েছে। তেমনি পরবর্তীতে হাদীসের উপর ব্যক্তির আক্কেল, রায়, কিয়াস, যুক্তি, জাল ও যয়ীফ হাদীস প্রাধান্য পাওয়ার যুগে সহীহ হাদীসের উপর আমলকারীদেরকে ‘আহলে হাদীস’ নাম নিতে হয়েছে।

অবশ্যই সালাফী বা আহলে হাদীস মানে প্রকৃত সালাফী ও আহলে হাদীস। যার আকীদা, আমল, কথা, দাওয়াত, চরিত্র, ব্যবহার ইত্যাদি জীবনের সকল ক্ষেত্রে সালাফী বা আহলে হাদীস। সকল ক্ষেত্রে সে কুরআন ও হাদীসকে সলফে সালেহীনের বুঝ অনুসারে বুঝে তাদের মতো সাধ্যমতো আমল করে।