১। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا

অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর রশিকে (ধর্ম বা কুরআন)কে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিছিন্ন হয়ে পড়ো না। (সূরা আলে ইমরান ১০৩ আয়াত)

২। তিনি আরো বলেন,

وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ * مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

অর্থাৎ, আর অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানামতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। (সূরা রুম ৩২ আয়াত)।

৩। রসূল (সা.) বলেন, “আমি তোমাদেরকে আল্লাহ-ভীতি এবং (নেতার নেতৃত্ব) মান্য ও আনুগত্য করতে অসিয়ত করছি; যদিও তোমাদের নেতা একজন হাবশী ক্রীতদাস হয়। যেহেতু তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পরও জীবিত থাকবে সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত (আদর্শ) এবং সুপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত (আদর্শ) অবলম্বন করো, তা শক্ত করে ধারণ করো এবং দন্ত দ্বারা দৃঢ়ভাবে ধরো। আর অভিনব কর্মাবলী হতে দূরে থেকো। যেহেতু প্রত্যেক অভিনব কর্ম বিদ্আত, প্রত্যেক বিদ্আত ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিয়ে যায়।” (হাদীসটিকে নাসাঈ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)

৪। তিনি আরো বলেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ইয়াহুদী ৭১ ও খ্রিষ্টানরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছে, আর এই মিল্লাত (উম্মত) ৭৩ দলে বিভক্ত হবে; ৭২ টি দল জাহান্নামে যাবে এবং একটি যাবে জান্নাতে আর সেটি হল জামাআত।” (হাদীসটিকে আহমদ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন এবং হাফেয হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।

দ্বিতীয় এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “কেবল একটি দল ব্যতীত সবগুলি জাহান্নামে যাবে; যে দলটি আমি ও আমার সাহাবার মতানুসারী হবে।” (হাদীসটিকে তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহুল জামে' (৫২১৯)তে এটিকে হাসান বলেছেন।)।

৫৷ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) আমাদের জন্য স্বহস্তে একটি রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “এটি আল্লাহর সরল পথ।” অতঃপর ঐ রেখার ডাইনে ও বামে কতকগুলি রেখা টেনে বললেন, “এগুলি বিভিন্ন পথ। এই পথগুলির প্রত্যেটির উপর একটি করে শয়তান আছে; যে ঐ পথের প্রতি মানুষকে আহ্বান করে।” অতঃপর তিনি আল্লাহ তাআলার এই বাণী পাঠ করলেন,

وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

অর্থাৎ, এবং নিশ্চয় এটি আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথের অনুসরণ করো না। করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এ ভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত) (হাদীসটি সহীহ এটিকে আহমদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।)

৬। শায়খ (পীর) আব্দুল কাদের জীলানী তাঁর গ্রন্থ গুনয়্যাহ’তে বলেন, আহলে সুন্নাহ অল জামাআতই ফির্কাহ নাজিয়াহ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল)। আর আহলে সুন্নাহর একটি নাম ছাড়া অন্য কোন নাম নেই। আর তা হল আসহাবুল হাদীস।

৭। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদেরকে আদেশ করেন যে, আমরা যেন কুরআন করীমকে শক্তভাবে ধারণ করি এবং সেই মুশরেকিন (পৌত্তলিক)দের দলভুক্ত না হই যারা স্বধর্মে বিভিন্ন দল ও জামাআত সৃষ্টি করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রসূল করীম ঐ আমাদেরকে জানান যে, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা বহু দলে বিভক্ত হয়েছে আর মুসলিমরা তাদের চেয়ে আরো অধিক দলে বিভক্ত হবে। সত্য পথ হতে বিচ্যুত হওয়ার কারণে এবং আল্লাহর কিতাব ও নবী (সা.)র সুন্নাহ হতে দূরে থাকার ফলে এই সকল ফির্কাহগুলি জাহান্নামের শিকার হবে। এদের। মধ্যে একটি ফির্কাহই জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করে জান্নাত প্রবেশ করবে; আর এই ফির্কাহ হল সেই জামাআত, যে কিতাব ও সহীহ সুন্নাহ এবং রসূল (সা.)-এর চরিত্রকে (নিজেদের আদর্শরূপে) শক্তভাবে ধারণ করবে।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে ফির্কাহ নাজিয়াহর দলভুক্ত কর এবং সমগ্র মুসলমানকে ঐ দলভুক্ত হওয়ার তওফীক দান কর।