জাহান্নামবাসী অধিক হওয়ার কারণ এই নয় যে, অধিকাংশ মানুষের কাছে ইসলাম পৌঁছেনি। বরং অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেনি। যেহেতু যে মানুষের কাছে ইসলামের কথা পৌছেনি, মহান আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন না। তিনি বলেছেন,

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا

অর্থাৎ, আর আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। (বানী ইস্রাঈলঃ ১৫)।

আর তিনি প্রত্যেক জাতির ভিতরে রসূল বা সতর্ককারী পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন,

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۚ وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌ

অর্থাৎ, আমি তো তোমাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; এমন কোন সম্প্রদায় নেই যার নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি। (ফাত্বিরঃ ২৪)

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

অর্থাৎ, অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও তাগূত থেকে দূরে থাক। (নাহলঃ ৩৬)

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولٌ

অর্থাৎ, প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রসূল ছিল। (ইউনুসঃ ৪৭)

কিন্তু আম্বিয়ার দাওয়াত গ্রহণ না করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাহান্নামের উপযুক্ত হয়েছে।

এ গেল প্রত্যেক নবীর অনুসারীর কথা। পক্ষান্তরে শেষ নবীকে অধিকাংশ মানুষ অস্বীকার করল। আবার অনুসারীদের মধ্যেও নানা মতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ৭৩টির মধ্যে ৭২টি জাহান্নামের উপযুক্ত হল। যার কারণ বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে, প্রবৃত্তি ও সন্দেহের বশবর্তী হয়েই অধিকাংশ মানুষ ভ্রষ্ট হয়েছে। যেহেতু মানুষের সৃষ্টিকর্তাই বলেছেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

অর্থাৎ, নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৪)।

আর সেই কারণেই জিবরীলের আশংকা সঠিক ছিল। মহান আল্লাহ যখন তাকে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে বললেন, 'যাও, জাহান্নাম এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর।” তখন তিনি গেলেন এবং দেখলেন, তার আগুনের এক অংশ অপর অংশের উপর চেপে রয়েছে। অতঃপর তিনি ফিরে এসে বললেন, 'আপনার সম্মানের কসম! যে কেউ এর কথা শুনবে, সে এতে প্রবেশ করতে চাইবে না। তারপর জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দিয়ে ঘিরে দিতে আদেশ করলেন এবং পুনরায় তাকে বললেন, 'যাও, জাহান্নাম এবং তার অধিবাসীদের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী দর্শন কর। সুতরাং তিনি গেলেন এবং দর্শন করে ফিরে এসে বললেন, 'আপনার সম্মানের কসম! আমার আশঙ্কা হয় যে, কেউ পরিত্রাণ পাবে না, সবাই তাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, সঃ তারগীব ৩৬৬৯নং)

অবশ্য সেই সাথে আরো একটি কারণ যুক্ত করা যায়, আর তা হল। দাদুপন্থীদের অন্ধানুকরণ। মহান আল্লাহ বলেন,

وَكَذَٰلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّقْتَدُونَ

অর্থাৎ, এভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই ওদের মধ্যে যারা বিত্তশালী ছিল তারা বলত, ‘আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।' (যুখরুফঃ ২৩)।

আর আসলে এ সবে রয়েছে মূলতঃ শয়তানের তাবেদারি। মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۚ أَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطَانُ يَدْعُوهُمْ إِلَىٰ عَذَابِ السَّعِيرِ

অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, আমাদের বাপ-দাদাকে যাতে পেয়েছি, আমরা তো তাই মেনে চলব। যদিও শয়তান তাদেরকে দোখযন্ত্রণার দিকে আহবান করে (তবুও কি তারা বাপ-দাদারই অনুসরণ করবে)? (লুকমানঃ ২১)