(১৩) জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা না পড়া

অন্যান্য ছালাতের ন্যায় জানাযার ছালাতেও সূরা ফাতিহা পড়া রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অব্যাহত আমল। সূরা ফাতিহা ছাড়া কোন ছালাতই হবে না মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। অথচ রাসূল (ছাঃ) থেকে এর বিপক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। যে সমস্ত বর্ণনা বাজারে প্রচলিত আছে, সেগুলো বিভিন্ন ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈদের নামে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْرَأُ فِى الصَّلَاةِ عَلَى الْجَنَازَةِ.

নাফে’ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জানাযার ছালাতে ক্বিরাআত পড়তেন না।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে,قَالَ سَالِمٌ لاَ قِرَاءَةَ عَلَى الْجِنَازَةِ সালেম বলেন, জানাযার ছালাতে কোন ক্বিরাআত নেই।[2] ইমাম মালেক (রহঃ)-কে সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,لَيْسَ ذَلِكَ بِمَعْمُوْلٍ بِهِ بِبَلَدِنَا إنَّمَا هُوَ الدُّعَاءُ أَدْرَكْتُ أَهْلَ بَلَدِنَا عَلَى ذَلِكَ ‘আমাদের শহরে এর প্রতি আমল নেই। এটা মূলতঃ দু‘আ। আমাদের শহরবাসীকে এর উপরই পেয়েছি’।[3]

জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাবীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে উক্ত বর্ণনাকে পরিবর্তন করে নিম্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে- قراءة الفاتحة ليس معمولا بها فى بلدنا فى صلاة الجنازة। অতঃপর মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। অথচ উক্ত শব্দে কোন বর্ণনাই নেই এবং মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যেও নেই।[4] হাদীছ পরিবর্তনের সাহস থাকার কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْجَنَازَةِ هَلْ يُقْرَأُ فِيْهَ؟ فَقَالَ لَمْ يُوَقِّتْ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ قَوْلًا وَلَا قِرَاءَةً وَفِىْ رِوَايَةٍ دُعَاءً وَلَا قِرَاءَةً كَبِّرْ مَا كَبَّرَ الْإِمَامُ وَاخْتَرْ مِنْ أَطْيَبِ الْكَلَامِ مَا شِئْت وَفِىْ رِوَايَةٍ وَاخْتَرْ مِنْ الدُّعَاءِ أَطْيَبَهُ وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَابْنِ عُمَرَ أَنَّهُمَا قَالَا لَيْسَ فِيْهَا قِرَاءَةُ شَيْءٍ مِنْ الْقُرْآنِ وَلِأَنَّهَا شُرِعَتْ لِلدُّعَاءِ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে একদা জানাযার ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যে, উহাতে ক্বিরাআত করতে হবে কি? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের জন্য কোন কথা ও ক্বিরাআত নির্দিষ্ট করেননি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দু‘আ ও ক্বিরাআত নির্দিষ্ট করেননি। সুতরাং ইমাম যেমন ক্বিরাআত করেন তেমন তুমি ক্বিরাআত করবে এবং তোমার ইচ্ছানুযায়ী উত্তম কথা বলবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উত্তম দু‘আ বলবে। আব্দুর রহমান বিন আওফ ও ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বলেছেন, জানাযার ছালাতে কুরআন হতে কোন ক্বিরাআত নেই। কারণ উহা দু‘আর জন্য বিধিবদ্ধ।[5]

তাহক্বীক্ব : উক্ত মর্মে আরো অনেক বর্ণনা বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যে। কিন্তু কোন বর্ণনা রাসূল (ছাঃ) থেকে আসেনি। এগুলো ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়।

জ্ঞাতব্য : মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার মধ্যে সূরা ফাতিহা পড়ার বিপক্ষে বর্ণনা পেশ করার পূর্বে সূরা ফাতিহা পড়ার পক্ষে ১১টি বর্ণনা পেশ করা হয়েছে।[6] কিন্তু ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে শুধু বিপক্ষের বর্ণনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।[7] অতঃপর লেখা হয়েছে, ‘এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস এবং সাহাবী ও তাবেয়ীদের আছার বর্ণিত আছে যা, এই ছোট্ট কলেবরে উল্লেখ করা সম্ভব না। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় জানাযায় সূরা ফাতিহা না পড়াই সুন্নত। এবং পড়া সুন্নতের পরিপন্থি যা গায়রে মুকাল্লিদগণ করে থাকেন। সম্মানিত পাঠক! আপনারাই ফয়সালা করুন এটা কি হাদীসের উপর আমল? না হাদীসের বিরোধীতা’।[8]

সুধী পাঠক! তথ্য গোপন করে শরী‘আতের নামে এভাবে যদি মিথ্যাচার করা হয়, তাহলে সরলপ্রাণ সাধারণ মুসলিমরা কোথায় যাবে? উদ্ভট বর্ণনাগুলো পেশ করে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি মুসলিমকে এভাবেই ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। নিম্নে বর্ণিত হাদীছ ও আছারগুলো লক্ষ্য করলেই আশা করি তাদের ধোঁকাবাজি আরো প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।

[1]. মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৪৮১, ১/২১।

[2]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১৫৩২, ৩/২৯৯।

[3]. আল-মুদাওয়ানাহ ১/৪৪২ পৃঃ।

[4]. মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ৩১৬।

[5]. বাদায়েউছ ছানাঈ ১/৩১৩; মুগনী ২/২৮৫।

[6]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১৫১১-১১৫২১।

[7]. ঐ, পৃঃ ৩১৬-৩১৯।

[8]. ঐ, পৃঃ ৩১৯।