জুম‘আর দিন দু‘আ চাওয়া একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। অনেক মসজিদে ফরয ছালাত কিংবা জুম‘আর ছালাতের পর কেউ কেউ পিতা-মাতা বা নিজের রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দু‘আ চায়। অনেকে ইমামের নিকট পত্র লিখে দু‘আ চায়। অথচ দু‘আ চাওয়ার এই নিয়মটি সুন্নাত সম্মত নয়। মূলতঃ ছালাতের পরে প্রচলিত মুনাজাত চালু থাকার কারণেই দু‘আ চাওয়ার এই পদ্ধতিও চালু আছে। অনেক মসজিদে অন্যান্য ছালাতের পরে বিদ‘আতী মুনাজাত হয় না কিন্তু জুম‘আর দিনে হয়। কারণ ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ সেদিন ছালাতে হাযির হয় এবং মসজিদে কিছু দান করে দু‘আ চায়। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের থেকে উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দু‘আ চাওয়ার নিয়ম হল- কোন সমস্যায় পড়লে বা রোগাক্রান্ত হলে এলাকার জীবিত পরহেযগার, দ্বীনদার, হক্বপন্থী আলেমের কাছে গিয়ে দু‘আর জন্য আবেদন করা। তখন তিনি প্রয়োজনে ওযূ করে ক্বিবলামুখী হয়ে হাত তুলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন। ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাইতেন।
আউত্বাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে তিনি স্বীয় ভাতিজা আবু মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, তুমি আমার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম পৌঁছে দিবে এবং আমার জন্য ক্ষমা চাইতে বলবে। অতঃপর তাঁর কাছে বলা হল। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,
دَعَا النَّبِىُّ بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِىْ عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنَ النَّاسِ.
নবী করীম (ছাঃ) পানি চাইলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু আমের উবাইদকে ক্ষমা করে দিন। (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন আপনি তাকে আপনার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিন’।[1]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَدِمَ الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرِو الدَّوْسِى عَلَى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ دَوْسًا قَدْ عَصَتْ وَأَبَتْ فَادْعُ اللهَ عَلَيْهَا فَاسْتَقْبَلَ رَسُوْلُ اللهِ الْقِبْلَةَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَظَنَّ النَّاسُ أَنَّهُ يَدْعُوْ عَلَيْهِمْ فَقَالَ اللهُمَّ! اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা তুফাইল ইবনু আমর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! দাউস গোত্র অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন। তখন রাসূল (ছাঃ) ক্বিবলামুখী হলেন এবং দু’হাত তুললেন। লোকেরা ধারণা করল যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদ দু‘আ করবেন। কিন্তু তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি দাউস গোত্রকে হেদায়াত দান করুন এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখান’।[2]
দ্বিতীয়তঃ সবার কাছে দু‘আ চাইতে পারে। তখন সকলে নিজ নিজ ঐ ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে। তা ছালাতের মধ্যে হোক বা ছালাতের বাইরে হোক। ইমামও কারো পক্ষে থেকে সবার নিকট দু‘আ চাইতে পারেন যাতে সকলে নিজ নিজ তার জন্য দু‘আ করে। ইমাম জুম‘আর দিন তার জন্য খুৎবায় দু‘আ করতে পারেন আর বাকীরা আমীন আমীন বলতে পারে।[3]
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৬৩৯৭, ২/৯৪৬ পৃঃ।
[3]. ফাতাওয়া লাজনা ৮/২৩০-৩১ ও ৩০২ পৃঃ; আল্লামা উছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃঃ ৩৯২।