জুম‘আর ছালাতের পূর্বে কত রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে, তা হাদীছে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। মুছল্লী যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন থেকে ইমাম খুৎবা আরম্ভ করার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা তত ছালাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু প্রায় মসজিদে মুছল্লীরা পূর্বে মাত্র চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত মর্মে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তা মিথ্যা ও বাতিল।
(أ) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ يَرْكَعُ مِنْ قَبْلِ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا لاَ يَفْصِلُ فِىْ شَىْءٍ مِنْهُنَّ.
(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু এর মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না।[1] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
(ب) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا لا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ.
(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর ছালাতের আগে ও পরে ৪ রাক‘আত করে ছালাত পড়তেন। কিন্তু মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না।[2]
তাহক্বীক্ব : উভয় বর্ণনাই জাল। এই বর্ণনার প্রায় সকল রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। মুবাশশির ইবনু উবাইদ মিথ্যা হাদীছ রচনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর হাজ্জাজ ও আতিইয়াহ দুইজনই যঈফ।[3] বুছাইরী বলেন, বাক্বিয়াহ বিন ওয়ালীদও যঈফ।[4] ইমাম নববী বলেন, হাদীছটি বাতিল।[5]
(ج) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ كَانَ النَّبِىُّ يُصَلِّىْ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا.
(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) জুম‘আর আগে চার রাক‘আত এবং জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[6]
তাহ্ক্বীক্ব : বর্ণনাটি মুনকার বা ছহীহ হাদীছ বিরোধী। ত্বাবারাণী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, আত্তাব বিন বুশাইর ছাড়া এই হাদীছ খুছাইফ থেকে কেউ বর্ণনা করেনি।[7] উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন ছাহাবীর নামে উক্ত মর্মে আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে। তবে কোন বর্ণনাই বিশুদ্ধ নয়।[8]
[2]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১২৬৭৪।
[3]. سنده واه جدا فمبشر بن عبيد معدود في الوضاعين وحجاج وعطية ضعيفان. -নাছবুর রাইয়াহ ২/২০৬ পৃঃ।
[4]. هذا إسناد مسلسل بالضعفاء عطية متفق على تضعيفه وحجاج مدلس ومبشر بن عبيد كذاب وبقية بن الوليد يدلس تدليس التسوية-সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০১।
[5]. إنه حديث باطل-আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামে‘আহ, পৃঃ ৩০।
[6]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯ ও ১৬১৭।
[7]. لم يرو هذا الحديث عن حصيف إلا عتاب بن بشير -মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৯০ ও ১০১৬।