ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার ছহীহ হাদীছ সমূহ

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার ছহীহ হাদীছ সমূহ :

ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয। কারণ কেউ ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করলে তার ছালাত হয় না।

(1) عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

(১) উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার ছালাত হয় না’।[1] ইমাম বুখারী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, بَابُ وُجُوْبِ الْقِرَاءَةِ لِلْإِمَامِ وَالْمَأْمُوْمِ فِى الصَّلَوَاتِ كُلِّهَا فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ وَمَا يُجْهَرُ فِيْهَا وَمَا يُخَافَتُ ‘প্রত্যেক ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ের জন্য ক্বিরা‘আত (সূরা ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফর অবস্থায় হোক, জেহরী ছালাতে হোক বা সের্রী ছালাতে হোক’।[2]

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ পেশ করে ব্যাখ্যা দেয়া হয় যে, এই হাদীছ একাকী ছালাতের জন্য। অথচ উক্ত দাবী সঠিক নয়; বরং বিভ্রান্তিকর। দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময় যোহর ও আছর ছালাতে এবং মাগরিবের শেষ রাক‘আতে ও এশার ছালাতের শেষ দুই রাক‘আতেও কি সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না? কারণ মুক্তাদী তো একাকী নয়, ইমামের সাথে আছে? অথচ যোহর ও আছরের ছালাতে মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরাও পাঠ করতে পারবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[3]

তাছাড়া একাকী বলতে মৌলিক কোন ছালাত আছে কি? ফরয ছালাত তো জামা‘আতেই পড়তে হবে। এমনকি কোথাও দুইজন থাকলেও জামা‘আত করে ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[4] কখনো কখনো ফরয ছালাত একাকী পড়া হয়। তাহলে ঐ হাদীছটি কি শুধু কখনো কখনো একাকী ছালাতের জন্য প্রযোজ্য? না শুধু নফল ছালাতের জন্য? আর নফল ছালাত তো কেউ না পড়লেও পারে। তাহলে উক্ত হাদীছের ব্যাপারে এ ধরনের দাবী কিভাবে যথার্থ হতে পারে? এ জন্য ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য প্রায় সকল মুহাদ্দিছ জামা‘আতে পড়ার পক্ষেই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন।[5] অতএব উক্ত হাদীছ জামা‘আত ও একাকী উভয় অবস্থার সাথেই সম্পৃক্ত।

(2) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهْىَ خِدَاجٌ ثَلاَثًا غَيْرُ تَمَامٍ فَقِيْلَ لأَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ تَعَالىَ قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ اللهُ حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ قَالَ اللهُ تَعَالى أََثْنَى عَلَىَّ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ قَالَ مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ قَالَ هَذَا بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ قَالَ هذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ.

(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ছালাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। তখন আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি চুপে চুপে পড়। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি ছালাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার জন্য আর প্রার্থনা বান্দার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে, যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায য-ল্লীন (আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে তা তার জন্য’।[6] (আমীন)।

উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম-মুক্তাদী সকলেই সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সূরা ফাতিহা শুধু ইমামের জন্য নয়। কারণ আল্লাহর বান্দা শুধু ইমাম নন, মুক্তাদীও আল্লাহর বান্দা। আর আবু হুরায়রাহ (রাঃ) সেটা বুঝানোর জন্যই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন। অতএব ইমামের পিছনে মুক্তাদীও সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

(3) عَن رِفَاعَةَ بْنِ رَافعٍ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ فَقَالَ النَّبِيُّ أَعِدْ صَلَاتَكَ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَقَالَ عَلِّمْنِىْ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَيْفَ أُصَلِّي؟ قَالَ إِذَا تَوَجَّهَتَ إِلَى الْقِبْلَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَمَا شَاءَ اللهُ أَنْ تَقْرَأَ..

(৩) রিফা‘আ বিন রাফে‘ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে আসল এবং ছালাত আদায় করল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি ছালাত ফিরিয়ে পড়। নিশ্চয় তুমি ছালাত আদায় করনি। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে ছালাত শিক্ষা দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি ক্বিবলামুখী হবে তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আরো কিছু অংশ পাঠ করবে..। [7]

[1]. ছহীহ বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৫; ছহীহ মুসলিম ১/১৬৯ পৃঃ, মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ৯০৬, ৯০৭ (ইফাবা হা/৭৫৮, ৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); মিশকাত পৃঃ ৭৮, হা/৮২২ ও ৮২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৫, ৭৬৬, ২/২৭২ পৃঃ, ‘ছালাতে ক্বিরআত পাঠ করা’ অনুচ্ছেদ।

[2]. ছহীহ বুখারী ১/১০৪ পৃঃ, হা/৭৫৬-এর অনুচ্ছেদ দ্রঃ।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬।

[4]. বুখারী হা/৬৫৮, ১/৯০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬২৫, ২/৬২ পৃঃ); মুসলিম হা/১৫৭০, ১/২৩৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪০৭); তিরমিযী হা/২০৫; মিশকাত হা/৬৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩১, ২/২০৭ পৃঃ, ‘আযানের সংশ্লিষ্ট’ অনুচ্ছেদ।

[5]. ইবনু মাজাহ হা/৮৩৭।

[6]. ছহীহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ।

[7]. আবুদাঊদ হা/৮৫৯, ১/১২৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৮০৪, পৃঃ ৭৬; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৭৮৪, সনদ ছহীহ।