রাফ‘উল ইয়াদায়েনের গুরুত্ব ও ফযীলত :

(১) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ভূমিকা-

عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَأَى رَجُلًا لَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا رَكَعَ وَإِذَا رَفَعَ رَمَاهُ بِالْحَصَى.

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে না, তখন তিনি তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন।[1]

(২) উক্ববা বিন আমের (রাঃ)-এর দাবী-

قَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ الْجُهَنِىُّ صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرٌّكُوْعِ وَعِنْدَ رَفْعِ رَأْسِهِ مِنَ الرٌّكُوْعِ فَلَهُ بِكُلِّ إِشَارَةٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ.

রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবী উক্ববা ইবনু আমের আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, যখন মুছল্লী রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে।[2] শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেন, একটি হাদীছে কুদসী এই কথার সাক্ষী। আল্লাহ বলেন, .. যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে অতঃপর তা করে ফেলবে, আল্লাহ তার জন্য ১০ থেকে ৭০০ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’।[3]

(৩) ইমাম বুখারীর উস্তায আলী ইবনুল মাদ্বীনী (১৬১-২৩৪ হিঃ) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীছ সম্পর্কে বলেন,

هَذَا الْحَدِيْثُ عِنْدِىْ حُجَّةٌ عَلَى الْخَلْقِ كُلُّ مَنْ سَمِعَهُ فَعَلَيْهِ أَنْ يَعْمَلَ بِهِ لِأَنَّهُ لَيْسَ فِيْ إِسْنَادِهِ شَيْءٌ.

‘এই হাদীছ আমার নিকটে সমগ্র উম্মতের জন্য দলীল স্বরূপ। প্রত্যেকে যে এই হাদীছ শুনবে তার উপরই আমল করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কারণ এই হাদীছের সনদে কোন ত্রুটি নেই’।[4]

(৪) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিঃ) বলেন,

لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ تَرْكُهُ.. قَالَ وَلَا أَسَانِيْدَ أَصَحُّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ .

‘ছাহাবীদের মধ্যে কোন একজনের পক্ষ থেকেও প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সনদের চেয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ আর কোন সনদ নেই’।[5]

(৫) ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,

وَذَكَرَ الْبُخَارِيُّ أَيْضًا أَنَّهُ رَوَاهُ سَبْعَةَ عَشَرَ رَجُلًا مِنَ الصَّحَابَةِ وَذَكَرَ الْحَاكِمُ وَأَبُو الْقَاسِم بْنِ مِنْدَهْ مِمَّنْ رَوَاهُ الْعَشَرَةُ الْمُبَشَّرَةُ وَذَكَرَ شَيْخُنَا أَبُو الْفَضْلِ الْحَافِظُ أَنَّهُ تَتَبَّعَ مَنْ رَوَاهُ مِنْ الصَّحَابَةِ فَبَلَغُوْا خَمْسِيْنَ رَجُلًا.

‘ইমাম বুখারী ১৭ জন ছাহাবী থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। হাকেম ও আবুল ক্বাসেম মান্দাহ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন ছাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয আবুল ফাযল অনুসন্ধান করে ছাহাবীদের থেকে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তার সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছেছে’।[6]

(৬) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন, وَالَّذِيْ يَرْفَعُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّنْ لاَّ يَرْفَعُ فَإِنَّ أَحَادِيْثَ الرَّفْعِ أَكْثَرُ وَأَثْبَتُ ‘যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, ঐ ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয়- ঐ ব্যক্তির চেয়ে, যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না। কারণ রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর হাদীছ সংখ্যায় বেশী ও অধিকতর মযবুত’।[7]

(৭) আলবানী বলেন,

وَهَذَا الرّفْعُ مُتَوَتِرٌ عَنْهُ  وَكَذَلِكَ الرَّفْعُ عِْندَ الْاِعْتَدَالِ مِنَ الرُّكُوْعِ وَهُوَ مَذْهَبُ الْأَئِمَّةِ الثَّلاَثَةِ وَغَيْرِهِمْ مِنْ جَمَاهِيْرِ المُْحَدِّثِيْنَ وَالْفُقَهَاءِ وَهُوَ اَّلذِىْ مَاتَ عَلَيْهِ مَالِكٌ رَحِمَهُ اللهُ.

‘এই রাফ‘উল ইয়াদায়েনের আমল রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের হাদীছ দ্বারা অনুমোদিত। রুকূ থেকে উঠে দাঁড়িয়েও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে। এটা তিন ইমামের মাযহাব এবং অন্যান্য অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহর মাযহাব। ইমাম মালেকও এর উপরই মৃত্যু বরণ করেছেন’।[8]

[1]. ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৪, পৃঃ ১৫; সনদ ছহীহ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৯।

[2]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৯; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১২৯।

[3]. বুখারী হা/৬৪৯১, ২/৯৬০ পৃঃ; মুসলিম হা/৩৪৯-৩৫৫- فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ।

[4]. তালখীছুল হাবীর ১/৫৩৯ পৃঃ।

[5]. ফৎহুল বারী হা/৭৩৬-এর আলোচনা দ্রঃ।

[6]. ফৎহুল বারী হা/৭৩৬-এর আলোচনা দ্রঃ।

[7]. হুজ্জাতুল্ল­া-হিল বালিগাহ ২/১০ পৃঃ।

[8]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১২৮-১২৯।