ষষ্ঠ অধিকার: তাদের জন্য দো‘আ, ইসতিগফার ও রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলা।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এ ব্যাপারে একমত যে, সাহাবীগণের প্রশংসা করা, তাদের জন্য ইসতিগফার করা, তাদের জন্য রহমতের দো‘আ করা এবং তাদের নাম শুনে রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলা ওয়াজিব।[1]

মুসলিমের অন্তর যখন মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ভালোবাসা ও সম্মানে পরিপূর্ণ হয়, তখন তাদের মুখের ভাষায় তাদের জন্য দো‘আ প্রকাশ পায় এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে।

ইবনুল মুবারক রহ. বলেছেন, ‘আমি সর্বদা তাদের (সাহাবীগণের) জন্য মাগফিরাত কামনা করি, যেভাবে আমি প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের জন্য মাগফিরাত কামনায় আদিষ্ট।’[2]

এমনকি তাদের জন্য ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম’ বলে দো‘আ করা ‘উরফী ইজমা তথা আহলে ইলম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।[3]

সাহাবীগণের কারো নাম উল্লেখ করা হলেই ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলে তার সাথে যুক্ত করে তার জন্য দো‘আ করা হয়। এ ব্যাপারে মুসলিমগণ একমত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি তাদের ওপর রাযী ও সন্তুষ্ট হয়েছেন,

﴿رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ٢﴾ [المجادلة: ٢٢]

“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২]

শাওকানী রহ. বলেছেন, ‘এ উম্মতের পূর্বের ও পরের জমহুর মুসলিমের মাঝে এ ব্যাপারটি প্রচলিত হয়ে আসছে যে, তারা সাহাবীগণের নাম উল্লেখ করেই তাদের জন্য “রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু” বলে দো‘আ করেন, তাদের পরে আগত মুসলিমগণ তাদের পূর্বে আগত সাহাবীগণের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলেন, আল্লাহর মাগফিরাত ও ক্ষমার দো‘আ করেন, যেভাবে আল্লাহ আমাদেরকে বলার নির্দেশ দিয়েছেন।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

“আর যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না।” [সূরা : আল-হাশর: ১০]

>
[1] শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, আস-সারিমুল মাসলূল, পৃষ্ঠা ১০৮৫।

[2] দিওয়ানু ইবনুল মুবারক, পৃষ্ঠা ২১, তাহকীক, সা‘দ আল-ফাক্বী।

[3] দেখুন, সিলসিলাতুল আহাদীসুদ দ‘ঈফা, আলবানী রহ., ১১/৭৭০। উল্লেখ্য যে, এখানে ‘উরফী তাখাসসুস তথা আলিমদের খাস পরিভাষা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে আহলে ইলম ও মুসলিমগণ একমত হয়েছেন, যা সকলের কাছেই পরিচিত ও জানা। অন্যদিকে ‘রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ অন্যদের ব্যাপারেও বলা জায়েয। দেখুন, আল-মাজমু‘, ইমাম ইমাম নাওয়াওয়ী রহ., ৬/১৭২।