মুসলিম পরিবার প্রতিষ্ঠার খুঁটিসমূহ

সম্মানিত পাঠক:

এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার উপর মুসলিম পরিবারের অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে; যার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক এবং যা মেনে চললে তা থেকে দূরে থাকে বিচ্ছিন্নতার ঝড়ো হাওয়া ও ভঙ্গ ও কর্তিত হওয়ার তুফান। সে সব খুঁটিসমূহের অন্যতম হচ্ছে:

১. আল্লাহর উপর পূর্ণ ঈমান ও তাঁর তাকওয়া অবলম্বন:

যে সব খুঁটির উপর মুসলিম পরিবার দাঁড়িয়ে থাকে, তন্মধ্যে সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: ঈমানের রশিকে শক্তভাবে আকড়ে ধরা ... আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান; অন্তর যা লুকিয়ে রাখে, সে বস্তু সম্পর্কে যিনি জানেন তাকে ভয় করা; তাকওয়া ও আত্মপর্যবেক্ষণকে অপরিহার্য করে নেয়া; আর যুলুম থেকে এবং সত্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অন্যায়ের আশ্রয় নেওয়া থেকে দূরে থাকা। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ ... ذَٰلِكُمۡ يُوعَظُ بِهِۦ مَن كَانَ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ ... ٣ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

“ ... এর দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন, আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ...” - (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২ - ৩)।

আর এই ঈমানকে শক্তিশালী করবে: আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের ব্যাপারে চেষ্টা করা, তার ব্যাপারে যত্নবান থাকা এবং সে ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরস্পরকে উপদেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা; তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীটি নিয়ে ভেবে দেখ, তিনি বলেছেন:

« رحم الله رجلا قام من الليل فصلى وأيقظ امرأته فصلت , فإن أبت نضح في وجهها الماء ( يعني : رش عليها الماء رشا رفيقا ) , ورحم الله امرأة قامت من الليل فصلت وأيقظت زوجها فصلى , فإن أبى نضحت في وجهه الماء » . (رواه أحمد و أبو داود و النسائي و ابن ماجه ) .

“আল্লাহ রহম করুন এমন পুরুষ ব্যক্তির প্রতি, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে, অতঃপর সালাত আদায় করে এবং সে তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়, তারপর সেও সালাত আদায় করে; অতঃপর সে (স্ত্রী) যদি ঘুম থেকে উঠতে আপত্তি করে, তাহলে তার মুখমণ্ডলের উপর হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে দেয়। আর আল্লাহ রহম করুন এমন নারীর প্রতি, যে রাতে ঘুম থেকে উঠে, অতঃপর সালাত আদায় করে এবং সে তার স্বামীকে জাগিয়ে দেয়, তারপর সেও সালাত আদায় করে; অতঃপর সে (স্বামী) যদি ঘুম থেকে উঠতে আপত্তি করে, তাহলে তার মুখমণ্ডলের উপর হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে দেয়।”[1]

স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটি পার্থিব ও বস্তুগত কোনো সম্পর্ক নয়; নয় চতুষ্পদ জন্তুর প্রবৃত্তির মত কোনো সম্পর্ক; বরং তা হল আত্মীক ও সম্মানজনক একটি সম্পর্ক; আর যখন এই সম্পর্কটি নির্ভেজাল ও যথাযথ হবে, তখন তা মৃত্যুর পর পরকালীন জীবন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنۡ ءَابَآئِهِمۡ وَأَزۡوَٰجِهِمۡ وَذُرِّيَّٰتِهِمۡۖ ﴾ [الرعد: ٢٣]

“স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও।” - ( সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৩ )।

২. সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপন করা: যে জিনিসটি এ পবিত্র দাম্পত্য সম্পর্ককে হেফাযত ও তত্ত্বাবধান করে, তা হল পরস্পর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপন করা; আর এটা ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হবে না, যতক্ষণ না প্রত্যেক পক্ষ তার ভাল-মন্দ সম্পর্কে বুঝতে পারবে। বস্তুত ঘর ও পরিবারের ব্যাপারে সার্বিক পূর্ণতার বিষয়টি সুদূর পরাহত, তাই পরিবারের সদস্য কিংবা অন্যদের মধ্যে সকল বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতা লাভ করার আশা করাটা মানব স্বভাবে নাগালের বাইরের বিষয়।

>
[1] হাদিসটি সহীহ, যা বর্ণনা করেছেন: আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/২৫০, ৪৩৬; আবূ দাউদ: ১৩০৮; নাসায়ী: ৩/২০৫; ইবনু মাজাহ: ১৩৩৬; আর ইবনু খুযাইমা হাদিসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন (১১৪৮); হাকেম: ১/৩০৯; আর যাহাবী র. তা সমর্থন করেছেন।