সপ্তদশতম প্রশ্ন: বিদ‘আত কী? বিদ‘আত কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: বিদ‘আত হলো সুন্নাতের বিপরীত কাজ। এটি দু’প্রকার। বিশ্বাসে বিদ‘আত। আর তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা বলেছেন তার বিপরীত বিশ্বাস স্থাপন করা। এটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে,

«وَسَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فرقةً كُلُّها فِي النَّارِ إلا وَاحِدَةً ، قَالُوا: ما هي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «هُوَ مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِي».

“আর আমার উম্মতেরা তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। এদের একটি দল ছাড়া সব দলই হবে জাহান্নামী। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কোন দল? তিনি বললেন: আজ আমি এবং আমার সাহাবীরা যার ওপর প্রতিষ্ঠিত।”[1]

অতএব, যে ব্যক্তি হাদীসে বর্ণিত গুণাবলী অনুযায়ী হবে সে ব্যক্তি শুধু সুন্নাহর অনুসারী, আর যে সুন্নাহর অনুসারী হবে না সে বিদ‘আতী। আর সব বিদ‘আতই গোমরাহী। তবে সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাওয়ার দূরত্ব অনুসারে বিদ‘আতের স্তরও কম বেশি হয়। দ্বিতীয় প্রকার বিদ‘আত হলো আমলী তথা কাজে-কর্মে বিদ‘আত। আর তা হলো শরী‘আত প্রণেতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব ইবাদত করতে আদেশ করেছেন তা ব্যতীত অন্যসব ইবাদাত করা বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলো হারাম করেছেন সেগুলো হালাল করা। অতএব, যে ব্যক্তি শরী‘আত বহির্ভূত কোনো ইবাদাত করল বা শরী‘আত যা হারাম করে নি তা হারাম করল সে বিদ‘আত করল।

>

[1] মুসনাদ আহমাদ, ২/৩৩২; আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, ৫/৪, হাদীস নং ৪৫৯৭; তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, ৫/২৫, হাদীস নং ২৬৪১; ইবন মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, ২/১৩২১, হাদীস নং ৩৯৯২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৭৩১; আল-আজুরী তার শরী‘আহতে, পৃষ্ঠা নং ১৫; মুহাম্মাদ ইবন নসর তার সুন্নাহতে, পৃষ্ঠা নং ১৭-১৮; হাকিম তার মুসতাদরাকে, ১/৬ ও ১/১২৮; আল-ইসফিরায়ী তার ফিরাক বাইনাল ফিরাক, পৃষ্ঠা নং ৪ ও ৫; তারা সকলে মুহাম্মাদ ইবন ‘আমর ইবন ‘আলকামা ইবন ওয়াককাস আল-লাইসী থেকে, তিনি আবু সালমা ইবন আব্দুর রহমান থেকে, তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে তাদের বর্ণনায় নিম্নোক্ত শব্দাবলী নেই।

«كُلُّها فِي النَّارِ إلا وَاحِدَةً ، ................. هُوَ مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِي».

হাদীসের সনদটি হাসান। সনদের সবাই সিকাহ, শুধু মুহাম্মাদ ইবন ‘আমর ইবন ‘আলকামা ব্যতীত। ইমাম যাহাবী রহ. মিযানে ৩/৬৭৩ বলেছেন: তিনি বিখ্যাত শাইখ, হাসানুল হাদীস, আবু সালমা ইবন আব্দুর রহমান থেকে অধিক বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী তার হাদীস মুতাবা‘আ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমাম হাকিম ও ইবন হিব্বান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসটি সাহাবীদের থেকে একদল বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন। দেখুন, মাকাসিদুল হাসানাহ, সাখখাভী, পৃষ্ঠা, ১৫৮; নুযুমুল মুতানাসিরাহ মিনাল হাদীসিল মুতাওয়াতিরাহ, কাত্তানী, পৃষ্ঠা, ৩২-৩৪।

অন্যদিকে হাদীসে অতিরিক্ত:

«كُلُّها فِي النَّارِ إلا وَاحِدَةً وهي الجماعة».

এ অংশটুকু মুসনাদে আহমাদে (৪/১০২) মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে। এ ছাড়াও এ অংশটুকু আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, ৫/৫; আযুরুমীর শরী‘আহ, পৃষ্ঠা ১৮; হাকিমের মুসতাদরাক, ১/১২৮; ও অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ আছে। ইমাম হাকিম এ হাদীসটি বর্ণনার পরে বলেছেন, ‘হাদীসের এ সনদগুলো এ হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ, এ মত ইমাম যাহাবী রহ.ও স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইমাম শাতেবী রহ. আল-ই‘তিসামে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

মুসনাদে আহমাদে (৩/১২০) আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এ অতিরিক্ত অংশটুকু বর্ণিত আছে; আজুরীর আশ-শারী‘আহর পৃষ্ঠা ১৬-১৭ তেও বর্ণিত আছে।

এ ছাড়াও আজুরীর আশ-শারী‘আহর পৃষ্ঠা ১৭-১৮ তে সা‘দ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে।

অন্যদিকে হাদীসের আরেক অতিরিক্ত অংশ,

«كُلُّها فِي النَّارِ إلا وَاحِدَةً ، ................. هُوَ مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِي».

আজুরীর আশ-শরী‘আহর পৃষ্ঠা ১৫-১৬ তে আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তাবরানী রহ. মু‘জামুস সাগীরে (১/২৫৬) আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন।