সপ্তম মূলনীতি: আল্লাহর নামগুলো সংক্রান্ত ইলহাদ (অস্বীকার করা) হলো, এ নামসমূহের ব্যাপারে যে অবস্থান গ্রহণ আবশ্যক তা না করে তাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করা।

আর তা কয়েক প্রকার:

প্রথমত: আল্লাহর নামসমূহের কোনো কিছু অস্বীকার করা অথবা নামসমূহ যেসব সিফাত (গুণ) ও হুকুম-আহকাম শামিল করে আছে তার মধ্যে কোনো বিষয় অস্বীকার করা। যেমনটি করেছে জাহমিয়া সম্প্রদায় ও অন্যান্য আহলে তা‘তীল তথা আল্লাহর গুণসমূহ অকার্যকর বলে ধারণাকারী সম্প্রদায়। এটা এ জন্য ইলহাদ (অস্বীকার) যে, আল্লাহর নামসমূহ ও তা যেসব হুকুম-আহকাম এবং আল্লাহর জন্য উপযুক্ত গুণসমূহকে শামিল করছে তার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। অতএব এ সবের মধ্যে কোনো কিছু অস্বীকার করার অর্থ, যা ওয়াজিব তা থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য দিকে ঝুঁকে যাওয়া।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহর নামসমূহ এমন গুণ-নির্দেশক করে দেওয়া যা সৃষ্টিজীবের গুণ সদৃশ। যেমনটি করেছে আহলে তাশবীহ তথা আল্লাহর গুণসমূহকে সৃষ্টিজীবের গুণসদৃশকারী সম্প্রদায়। এটা এ কারণে যে, অর্থগতভাবে তাশবীহ (সাদৃশ্যকরণ) একটি বাতিল বিষয়। কুরআন-সুন্নাহর কোনো ভাষ্য এ বিষয়টিকে নির্দেশ করতে পারে না, বরং কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্যসমূহ এ বিষয়টিকে বাতিল হওয়ার উপর প্র্রমাণবহ। অতএব আল্লাহর গুণসমূহকে সৃষ্টিকুলের গুণের সাথে তাশবীহ তথা সাদৃশ্যবোধক করে দেওয়ার অর্থ আল্লাহর নামের ব্যাপারে যা ওয়াজিব ও যথার্থ তা থেকে বিচ্যুতি।

তৃতীয়ত: আল্লাহ তা‘আলার ওপর এমন নাম প্রয়োগ করা যা আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজের ওপর প্রয়োগ করেননি। যেমন খৃষ্টান সম্প্রদায় আল্লাহর ওপর (পিতা) নাম প্রয়োগ করেছে। আর দার্শনিকরা তাঁর ওপর প্রয়োগ করেছে (কার্যকরী কারণ) নাম। এটা এ জন্য বিচ্যুতি যে, আল্লাহর নামসমূহ ওহীনির্ভর। অতএব আল্লাহ তা‘আলার ওপর এমন নাম প্রয়োগ করা যা তিনি নিজের ওপর প্রয়োগ করেননি, নামের ব্যাপারে যা ওয়াজিব ও যথার্থ তা থেকে বিচ্যুতি। তা ছাড়া এ প্রয়োগকৃত নামগুলো স্বয়ং বাতুলতাপূর্ণ; যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র।

চতুর্থত: আল্লাহর নামসমূহ থেকে উৎকলিত করে কোনো উপাস্য বস্তুর নাম রাখা। যেমন -এক বর্ণনা মতে - মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার ‘আল আযীয’ নাম থেকে উৎকলিত করে তাদের মূর্তি আল উয্যার নাম রেখেছে। আল্লাহ তা‘আলার ‘ইলাহ’ নাম থেকে উৎকলিত করে তাদের মূর্তি ‘লাত’ এর নাম রেখেছে। অতএব তারা আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ থেকে উৎকলিত করে তাদের উপাস্যসমূহের নাম রেখেছে। এটা এ কারণে ইলহাদ যে, আল্লাহর নামসমূহ কেবল তাঁর জন্যই সুনির্দিষ্ট। এর দলিল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। (সূরা আল আরাফ:১৮০)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ لَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ ٨ ﴾ [طه: ٨]

আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। (সূরা তাহা: ২০: ৮)

আরও ইরশাদ হয়েছে:

﴿لَهُ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ﴾ [الحشر: ٢٤]

তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তাঁর। (সূরা আল হাশর: ৫৯: ২৪)

অতএব, যেভাবে ইবাদত ও সত্য উলুহিয়ত আল্লাহর জন্য সুনির্দিষ্ট এবং আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁরই মহিমা বর্ণিত, অনুরূপভাবে সুন্দরতম নামসমূহ তাঁর জন্যই সুনির্ধারিত। সুতরাং এ নামগুলো যেভাবে আল্লাহর জন্য সুনির্দিষ্ট করা হয় সেভাবে এগুলোর দ্বারা অন্য কারও নাম রাখা, নাম বিষয়ে যা ওয়াজিব ও উচিত তা থেকে বিচ্যুতি।

আল্লহর নামসমূহের সব ধরনের বিকৃতিই হারাম: কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিকৃতিসাধনকারীদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন:

﴿وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। (সূরা আল আরাফ: ৭: ১৮০)

এ বিকৃতিকরণের মধ্যে শরীয়তের দলিলের নিরিখে কোনোটি শেরেকী আবার কোনোটি কুফুরী।