৩৮ আল-কাবিইর الكبير
অর্থঃ সুমহান, অতি বিরাট
✸ Al-Kabir
- The One who is greater than everything in status.
- The great, the big.

আল-আযীম (মহা মর্যাদাপূর্ণ, অতি বিরাট)[1], আল-কাবীর (সুমহান, অতি বিরাট)[2]

আল-আযীম (মহা মর্যাদাপূর্ণ, অতি বিরাট) নামটিতে সব ধরণের বড়ত্ব, মর্যাদা, অহংকার, সম্মান, সৌন্দর্য যা সকলের অন্তর ভালোবাসে ও রূহসমূহের সম্মান প্রদর্শন সব কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহর পরিচয় লাভকারী সকলেই জানেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য জিনিসের বড়ত্ব ও মর্যাদা যতোই বেশি হোক না কেন, তাঁর বড়ত্ব, সুমহানত্ব, ও সুউচ্চতার কাছে সেগুলো অতি নগণ্য, কিছুই না।[3]

আল্লাহ তাঁর প্রতিটি গুণে ও মানে মহান। তাঁকে সম্মান করা ফরয। কোন সৃষ্টিই তাঁর যথাযথ প্রশংসা করতে সক্ষম নয়, কেউ তাঁর গুণাবলী গুণে শেষ করতে পারবে না; বরং তিনি নিজে নিজেকে যেভাবে প্রশংসা করেছেন তিনি সেরকমই, তিনি বান্দার প্রশংসার ঊর্ধ্বে।

জ্ঞাতব্য যে, আল্লাহর তা‘যীম তথা সম্মান ও মর্যাদা দুধরণের:

প্রথম প্রকার: তিনি প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ পূর্ণতায় গুণান্বিত, সেসব পূর্ণতার সর্বোচ্চ পূর্ণতা, সর্বাধিক পূর্ণতা ও সর্ব প্রশস্ত পূর্ণতা একমাত্র তাঁরই। তাঁর রয়েছে সর্বব্যাপী পরিপূর্ণ জ্ঞান, বাস্তবায়িত কুদরত, অহংকার, বড়ত্ব ও মহত্ব। তাঁর বিরাটত্ব ও বড়ত্বের উদাহরণ হলো, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু[4] ও অন্যদের[5] বর্ণিত হাদীস অনুসারে আসমান ও জমিন রহমানের তালুতে একটি সরিষা দানার চেয়েও ছোট। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِ٦٧﴾ [الزمر: ٦٦]

“আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৬]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُمۡسِكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ أَن تَزُولَاۚ وَلَئِن زَالَتَآ إِنۡ أَمۡسَكَهُمَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِهِ٤١﴾ [فاطر: ٤١]

“নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনকে ধরে রাখেন যাতে এগুলো স্থানচ্যুত না হয়। আর যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়, তাহলে তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে এগুলোকে ধরে রাখবে?” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৪১]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِن فَوۡقِهِنَّ٥﴾ [الشورى: ٥]   

“উপর থেকে আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হয়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫]

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: «الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ».

“মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার আমার চাদর, মহানত্ব আমার লুঙ্গি। কেউ এ দু’টির কোন একটি নিয়ে আমার সাথে বিবাদ করলে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”[6] সুতরাং অহংকার ও মহানত্ব একমাত্র মহান আল্লাহর গুণ, সৃষ্টিকুলের কেউ এগুণের সমপরিমাণ বা কাছাকাছিও অর্জন করতে সক্ষম হবে না।

দ্বিতীয় প্রকার: আল্লাহর মহান সম্মান ও মর্যাদার মতো সৃষ্টিকুলের কেউ সে পরিমাণ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী নয়। আল্লাহ বান্দার অন্তরের দ্বারা, যবানের দ্বারা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। আর সে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার উপায় হচ্ছে তাঁকে যথার্থ রূপে চিনতে ও জানতে, ভালোবাসতে, তাঁর সমীপে বিনয়ী ও নতজানু হতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করা, তাঁর বড়ত্ব ও মহানত্বের কাছে বিনয়ী ও নত হওয়া, তাঁকে ভয় করা, যবানের দ্বারা তাঁর প্রশংসা করা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা তাঁর শুকরিয়া ও ইবাদত করা। তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের আরো উপয় হচ্ছে তাঁকে যেভাবে ভয় করা উচিত সেভাবে ভয় করা, তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর অবাধ্যতা না করা, তাঁর যিকির করা, তাঁকে ভুলে না যাওয়া, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা ও তাঁর নি‘আমতের অকৃতজ্ঞ না হওয়া। তাঁকে সম্মানের আরো পন্থা হলো তিনি যা কিছু হারাম করেছেন ও শরী‘আতসম্মত করেছেন সেগুলোকে সবসময়, সর্বস্থানে সম্মান করা ও মেনে চলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ٣٢﴾ [الحج : ٣٢]    

“এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩২]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِ٣٠﴾ [الحج : ٣٠]

“এটিই বিধান আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তা-ই তার জন্য উত্তম।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩০] তাঁকে সম্মানের আরেকটি মাধ্যম হলো তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন বা শরী‘আতে বিধিবদ্ধ করেছেন সেগুলোর বিরোধীতা না করা। [7]


[1] এ নামের দলিল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,

﴿وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥]

“এবং এ দু’টোর (আসমানসমূহ ও জমিন) সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]

[2] এ নামের দলিল আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,

﴿ذَٰلِكُم بِأَنَّهُۥٓ إِذَا دُعِيَ ٱللَّهُ وَحۡدَهُۥ كَفَرۡتُمۡ وَإِن يُشۡرَكۡ بِهِۦ تُؤۡمِنُواْۚ فَٱلۡحُكۡمُ لِلَّهِ ٱلۡعَلِيِّ ٱلۡكَبِيرِ١٢﴾ [غافر: ١٢]

“[তাদেরকে বলা হবে] এটা তো এজন্য যে, যখন আল্লাহকে এককভাবে ডাকা হত তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে আর যখন তাঁর সাথে শরীক করা হত তখন তোমরা বিশ্বাস করতে। সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহর।” [সূরা গাফের, আয়াত: ১২]  

[3] আত-তাফসীর, ১/৩১৫।

[4] আল-‘আযামাহ, আবু শাইখ, ২/৪৪৫; আদ-দুররুল মানসূর, সুয়ূতী, ৭/২৪৮, তিনি হাদীসটিকে আবদ ইবন হুমাইদ, ইবান আবু হাতিম ও আবু শাইখের দিকে সনদের নিসবত করেছেন।

[5] এ হাদীসটি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, দেখুন, কিতাবুল ‘আযামাহ, ২/৬৩৫-৬৩৬।

[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪১৭৪।

[7] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ২৭-২৮; আল-কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১১৭।