আর যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তুমি বল, ‘তোমাদের উপর সালাম’। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর লিখে নিয়েছেন দয়া, নিশ্চয় যে তোমাদের মধ্য থেকে না জেনে খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে এবং শুধরে নেয়, তবে তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
আমার আয়াতে বিশ্বাসী লোকেরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বল, ‘‘তোমাদের প্রতি সালাম’’। তোমাদের প্রতিপালক দয়া-রহমাতের নীতি নিজের প্রতি অবধারিত করে নিয়েছেন আর তা হচ্ছে যদি তোমাদের কোন ব্যক্তি না জেনে অন্যায় পাপ করে, অতঃপর তাওবাহ করে ও নিজেকে সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল
আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে বলঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের রাব্ব নিজের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করার নীতি বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ কোন খারাপ কাজ করে, অতঃপর সে যদি তাওবাহ করে এবং নিজেকে সংশোধন করে তাহলে জানবে যে, তিনি হচ্ছেন ক্ষমাপরায়ণ, করুণাময়। মুজিবুর রহমান
And when those come to you who believe in Our verses, say, "Peace be upon you. Your Lord has decreed upon Himself mercy: that any of you who does wrong out of ignorance and then repents after that and corrects himself - indeed, He is Forgiving and Merciful." Sahih International
৫৪. আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে ঈমান আনে, তারা যখন আপনার কাছে আসে তখন তাদেরকে আপনি বলুন তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের রব তার নিজের উপর দয়া লিখে নিয়েছেন(১)। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞতাবশত(২) যদি খারাপ কাজ করে, তারপর তওবা করে এবং সংশোধন করে, তবে নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(৩)
(১) এ বাক্যে উপরোল্লেখিত অনুগ্রহের উপর আরো অনুগ্রহ ও নেয়ামত দানের ওয়াদা করে বলা হয়েছে যে, আপনি মুসলিমদেরকে বলে দিনঃ তোমাদের প্রতিপালক দয়া প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। কাজেই খুব ভীত ও অস্থির হয়ে না। এ বাক্যে প্রথমতঃ رب বা প্রতিপালক শব্দ ব্যবহার করে আয়াতের বিষয়বস্তুকে যুক্তিযুক্ত করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের প্রতিপালক। এখন জানা কথা যে, কোন প্রতিপালক স্বীয় পালিতদেরকে বিনষ্ট হতে দেন না। অতঃপর رب শব্দটি যে দয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছিল, তা পরিস্কারভাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাও এমন ভঙ্গিতে যে, তোমাদের প্রতিপালক দয়া প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন। কাজেই কোন ভাল ও সৎ লোকের দ্বারাই যখন ওয়াদা খেলাফী হতে পারে না, তখন রাব্বুল আলামীন-এর দ্বারা তা কিভাবে হতে পারে? বিশেষ করে যখন ওয়াদাটি চুক্তির আকারে লিপিবদ্ধ করে নেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছু সৃষ্টি করলেন এবং প্রত্যেকের ভাগ্যের ফয়সালা করলেন, তখন একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করে নিজের কাছে আরশে রেখে দিলেন। তাতে লেখা আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধের উপর প্রবল হয়ে গেছে। [বুখারীঃ ৭৪০৪, মুসলিমঃ ২১০৭, ২১০৮]
(২) আয়াতে অজ্ঞতা শব্দ দ্বারা বাহ্যতঃ কেউ ধারণা করতে পারে যে, গোনাহ ক্ষমা করার ওয়াদা একমাত্র তখনই প্রযোজ্য হবে যখন অজ্ঞতাবশতঃ কোন গোনাহ হয়ে যায়, জেনেশুনে গোনাহ করলে হয়ত এ ওয়াদা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কেননা, এ স্থলে অজ্ঞতা বলে অজ্ঞতার কাজ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এমন কাজ করে বসে, যা পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞ বা মূর্খ ব্যক্তিই করে। এর জন্যে বাস্তবে অজ্ঞ হওয়া জরুরী নয়। অর্থাৎ جهالت শব্দটি বাকপদ্ধতিতে কার্যগত অজ্ঞতার অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই কোন কোন আলেম বলেন, যে কেউ আল্লাহর অবাধ্যতা করে সে তা জাহালাত বশতঃই তা করে। [ইবন কাসীর] চিন্তা করলে দেখা যায় যে, যখনই কোন গোনাহ হয়ে যায়, তা কার্যগত অজ্ঞতার কারণেই হয়। এখানে কার্যগত অজ্ঞতাই বুঝানো হয়েছে। এর জন্য অজ্ঞান হওয়া জরুরী নয়। কেননা, কুরআনুল কারীম ও অসংখ্য সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, তাওবা দ্বারা প্রত্যেক গোনাহ মাফ হয়ে যায়- অমনোযোগিতা ও অজ্ঞতাবশতঃ হোক কিংবা জেনেশুনে মানসিক দূর্মতি ও প্রবৃত্তির তাড়নাবশতঃ হোক।
এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, আয়াতে দুটি শর্তাধীনে গোনাহগারদের সম্পর্কে ক্ষমা ও রহমতের ওয়াদা করা হয়েছে- (এক) তাওবা অর্থাৎ গোনাহর জন্য অনুতপ্ত হওয়া। হাদীসে বলা হয়েছে, অনুশোচনার নামই হলো তাওবা। [ইবন মাজাহঃ ৪২৫২ মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৭৬] (দুই) ভবিষ্যতের জন্য আমল সংশোধন করা। কয়েকটি বিষয় এ আমল সংশোধনের অন্তর্ভুক্ত। ভবিষ্যতে এ পাপ কাজের নিকটবর্তী না হওয়ার সংকল্প করা ও সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং কৃত গোনাহর কারণে কারো অধিকার নষ্ট হয়ে থাকলে যথাসম্ভব তা পরিশোধ করা, তা আল্লাহর অধিকার হোক কিংবা বান্দার অধিকার। [সা'দী] আল্লাহর অধিকার যেমন, সালাত, সওম, যাকাত, হজ ইত্যাদি ফরয কর্মে ক্রটি করা। আর বান্দার অধিকার- যেমন, কারো অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে করায়ত্ত করা ও ভোগ করা, কারো ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করা, কাউকে গালি-গালাজের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন প্রকারে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।
(৩) আর তিনি অত্যন্ত দয়ালু। অর্থাৎ ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং নেয়ামতও দান করবেন। এ জন্যই ক্ষমা গুণের সাথে রহমত গুণটিও উল্লেখ করা হয়েছে। বান্দা আল্লাহর নির্দেশ পালনে যতটুকু এগিয়ে আসবে তিনি তার ক্ষমা ও রহমত দিয়ে বান্দাকে ততটুকু ঢেকে দিবেন। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) যারা আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে, তারা যখন তোমার নিকট আসে, তখন তাদেরকে তুমি বলো, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক,[1] তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা নিজ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন।[2] তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞানতাবশতঃ যদি খারাপ কাজ করে অতঃপর তওবা (অনুশোচনা) করে এবং (নিজেকে) সংশোধন করে, তাহলে তো আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’[3]
[1] অর্থাৎ, তাদেরকে সালাম করে অথবা তাদের সালামের উত্তর দিয়ে তাদের সম্মান কর এবং তাদেরকে মর্যাদা দাও।
[2] আর তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, অনুগ্রহ স্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের প্রতি স্বীয় করুণা বর্ষণের ফায়সালা করে রেখেছেন। যেমন, হাদীসে এসেছে যে, যখন আল্লাহ তাআলা বিশ্বজগৎ সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করেন, তখন তিনি আরশে লিখে দেন যে, إِنَّ رَحْمَتِيْ تَغْلِبُ غَضَبِيْ ‘‘অবশ্যই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী।’’ (বুখারী, মুসলিম)
[3] এতেও ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। কেননা, এ গুণ তাদেরই যে, অজানতে অথবা মানবিক চাহিদার দাবীতে তারা কোন পাপ করে বসলে, সত্বর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয়। অব্যাহতভাবে পাপ করে না এবং তাওবা ও প্রত্যাবর্তন থেকেও বিমুখতা অবলম্বন করে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান