১২ সূরাঃ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف - আয়াতঃ ২৩
১২:২৩ وَ رَاوَدَتۡهُ الَّتِیۡ هُوَ فِیۡ بَیۡتِهَا عَنۡ نَّفۡسِهٖ وَ غَلَّقَتِ الۡاَبۡوَابَ وَ قَالَتۡ هَیۡتَ لَكَ ؕ قَالَ مَعَاذَ اللّٰهِ اِنَّهٗ رَبِّیۡۤ اَحۡسَنَ مَثۡوَایَ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۳﴾
و راودته التی هو فی بیتها عن نفسهٖ و غلقت الابواب و قالت هیت لك قال معاذ الله انهٗ ربی احسن مثوای انهٗ لا یفلح الظلمون ﴿۲۳﴾

আর যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে বলল, আল্লাহর আশ্রয় (চাই)। নিশ্চয় তিনি আমার মনিব, তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমগণ সফল হয় না। আল-বায়ান

যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে (মহিলাটি) তার থেকে অসৎ কর্ম কামনা করল। সে দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে (ইউসুফ) বলল, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি। তিনি আমার রবব, তিনি আমার থাকার ব্যবস্থা কত উত্তম করেছেন, যালিমরা কক্ষনো সাফল্য লাভ করতে পারে না। তাইসিরুল

সে যে স্ত্রী লোকের গৃহে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎ কাজ কামনা করল এবং দরজাগুলি বন্ধ করে দিল ও বললঃ চলে এসো (আমরা কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি), সে বললঃ আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি (আযীয) আমার প্রভু! তিনি আমাকে সম্মানজনকভাবে থাকতে দিয়েছেন, সীমালংঘনকারীরা সফলকাম হয়না। মুজিবুর রহমান

And she, in whose house he was, sought to seduce him. She closed the doors and said, "Come, you." He said, "[I seek] the refuge of Allah. Indeed, he is my master, who has made good my residence. Indeed, wrongdoers will not succeed." Sahih International

২৩. আর তিনি যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিলেন সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল, আর বলল, আস(১)। তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি(২), নিশ্চয় তিনি আমার মনিব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমরা সফলকাম হয় না।(৩)

(১) অর্থাৎ যে মহিলার গৃহে ইউসুফ আলাইহিস সালাম থাকতেন, সে তার প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ল এবং তার সাথে কু বাসনা চরিতার্থ করার জন্য তাকে ফুসলাতে লাগল। সে গৃহের সব দরজা বন্ধ করে দিল এবং তাকে বললঃ শীঘ্রই এসে যাও, তোমাকে বলছি। (هَيْتَ لَكَ) শব্দের এক অর্থ, আমার কাছে এস, তোমার কাজ সম্পাদনের জন্য। দ্বিতীয় অর্থ, আমি তোমার জন্য প্রস্তুত। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

প্রথম আয়াতে জানা গিয়েছিল যে, এ মহিলা ছিল আযীযে মিসরের স্ত্রী। কিন্তু এস্থলে কুরআন ‘আযীয-পত্নী’ এই সংক্ষিপ্ত শব্দ ছেড়ে যার গৃহে সে ছিল -এ শব্দ ব্যবহার করেছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ কারণে আরো অধিক কঠিন ছিল যে, তিনি তারই গৃহে- তারই আশ্রয়ে থাকতেন। তার আদেশ উপেক্ষা করা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর পক্ষে সহজসাধ্য ছিল না। [ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিব্বীন: ২৯৭-৩০০]

আর এজন্যই ঐ সমস্ত লোকদেরকে কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে বলে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যারা সুন্দরী-ধনী মহিলার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে। এবং তাকে ভয় করে বলে ঘোষণা দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সাত শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা আরশের নীচে ছায়া দেবেন। তন্মধ্যে ঐ ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন, যাকে কোন ধনাঢ্য-পদস্থ-সুন্দরী মহিলা খারাপ কর্মকাণ্ডের আহবান জানালে সে আল্লাহকে ভয় করে ঘোষণা দিয়ে তা হতে দূরে থাকে। [বুখারীঃ ৬৬০]

(২) এর বাহ্যিক কারণ ঘটে এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম যখন নিজেকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টিত দেখলেন, তখন নবীসুলভ ভঙ্গিতে সর্বপ্রথম আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলেন, তিনি শুধু নিজ ইচ্ছা ও সংকল্পের উপর ভরসা করেননি। এটা জানা কথা যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয় লাভ করে, তাকে কেউ বিশুদ্ধ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। বস্তুতঃ গোনাহ থেকে বাঁচার প্রধান অবলম্বন হল আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

(৩) তিনি নবীসুলভ বিজ্ঞতা ও উপদেশ প্রয়োগ করে স্বয়ং সেই মহিলাকে উপদেশ দিতে লাগলেন যে, তারও উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং মন্দ বাসনা থেকে বিরত থাকা। তিনি বললেনঃ (إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ) তিনি আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে সুখে রেখেছেন। মনে রেখো, অত্যাচারীরা কল্যাণপ্রাপ্ত হয় না। বাহ্যিক অর্থ এই যে, তোমার স্বামী আযীযে-মিসর আমাকে লালন-পালন করেছেন, আমাকে উত্তম জায়গা দিয়েছেন। অতএব তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহকারী। আমি তার ইযযতে হস্তক্ষেপ করব? এটা জঘন্য অনাচার, অথচ অনাচারীরা কখনো কল্যাণপ্রাপ্ত হয় না। [কুরতুবী]

এভাবে তিনি যেন স্বয়ং সেই মহিলাকেও এ শিক্ষা দিলেন যে, আমি কয়েকদিন লালন-পালনের কৃতজ্ঞতা যখন এতটুকু স্বীকার করি, তখন তোমাকে আরো বেশী স্বীকার করা দরকার। এ ব্যাখ্যা অনুসারে সমস্যা হলো, এখানে ইউসুফ আলাইহিস সালাম আযীযে-মিসরকে স্বীয় রব শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত এর কারণ, এখানে ربي বলে سيدي বা আমার মনিব বোঝানো হয়েছে।

তখন সাধারণ নিয়মানুসারে তা ব্যবহার করার ব্যাপক প্রচলন ছিল। এর দ্বারা বাহ্যিক নেয়ামতের মালিক বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ মূলতঃ ইউসুফ আলাইহিস সালাম তখন দাস হিসেবেই আযীযে-মিসরের ঘরে অবস্থান করছিলেন। সে হিসেবে তিনি আযীযের স্ত্রীকে এ কথার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন যে, আমার উপর আমার মনিবের অনেক নেয়ামত রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি আমাকে লালন করছেন, আমার পক্ষে আমার মনিবের খেয়ানত করা সম্ভব নয়। আয়াতের দ্বিতীয় তাফসীর হচ্ছে, এখানে إِنَّهُ শব্দের সর্বনামটির দ্বারা আল্লাহকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম আল্লাহকেই রব বলেছেন। বসবাসের উত্তম জায়গাও প্রকৃতপক্ষে তিনিই দিয়েছেন। সেমতে তার অবাধ্যতা সর্ববৃহৎ যুলুম। এরূপ যুলুমকারী কখনো সফল হয় না। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল, সে তার কাছে (উপযাচিকা হয়ে) যৌন-মিলন কামনা করল এবং দরজাগুলি বন্ধ করে দিয়ে বলল, ‘এস! (আমরা কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি।)’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি (আযীয) আমার প্রভু! তিনি আমাকে সম্মানজনকভাবে স্থান দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা সফলকাম হয় না।’ [1]

[1] এখান থেকে ইউসুফ (আঃ)-এর এক নতুন পরীক্ষা আরম্ভ হল। মিসরের আযীযের স্ত্রী, যাকে তার স্বামী বলেছিল যে, ইউসুফকে সম্মানের সাথে রাখবে, সে ইউসুফ (আঃ)-এর রূপ-সৌন্দর্য দেখে আসক্তা হয়ে পড়ল এবং উপযাচিকা হয়ে তাঁকে ব্যভিচারের দিকে আহবান করতে লাগল। কিন্তু ইউসুফ (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করতে থাকলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান