২৯ সূরাঃ আল-আনকাবূত | Al-Ankabut | سورة العنكبوت - আয়াত নং - ১৭ - মাক্কী
‘তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছ এবং মিথ্যা বানাচ্ছ। নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা কর তারা তোমাদের জন্য রিয্ক-এর মালিক নয়। তাই আল্লাহর কাছে রিয্ক তালাশ কর, তাঁর ইবাদাত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। আল-বায়ান
তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রতিমার পূজা করছ আর তোমরা মিথ্যে উদ্ভাবন করছ। আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যে সবগুলোর পূজা করছ তারা তোমাদেরকে রিযক দানের কোন ক্ষমতা রাখে না, কাজেই তোমরা আল্লাহর নিকট রিযক তালাশ কর, আর তাঁরই ‘ইবাদাত কর, আর তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তাইসিরুল
তোমরাতো আল্লাহ ব্যতীত শুধু মূর্তি পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর তারা তোমাদের জীবনোপকরনের মালিক নয়। সুতরাং তোমরা জীবনোপকরণ কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তাঁরই ইবাদাত কর ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান
You only worship, besides Allah, idols, and you produce a falsehood. Indeed, those you worship besides Allah do not possess for you [the power of] provision. So seek from Allah provision and worship Him and be grateful to Him. To Him you will be returned." Sahih International
১৭. তোমরা তো আল্লাহ ছাড়া শুধু মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ।(১) তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তারা তো তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই তোমরা আল্লাহর কাছেই রিযিক চাও এবং তারই ইবাদাত কর। আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।(২)
(১) অর্থাৎ তোমরা এসব মূর্তি তৈরী করছে না বরং মিথ্যা তৈরী করছো। এ মূর্তিগুলোর অস্তিত্ব নিজেই একটি মূর্তিমান মিথ্যা। তার ওপর তোমাদের এ আকীদা-বিশ্বাস যে, এরা দেব-দেবী, আল্লাহর অবতার, তাঁর সন্তান, আল্লাহর সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ও তাঁর কাছে শাফা’আতকারী অথবা এদের মধ্য থেকে কেউ রোগ নিরাময়কারী আবার কেউ সন্তান-দাতা এবং কেউ রিযিকদাতা এসবই মিথ্যা কথা। তোমরা নিজেদের ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে এসব রচনা করেছো। আসল সত্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, এগুলো নিছক হাতে গড়া নিষ্প্রাণ মূর্তি এবং এদের কোন ক্ষমতা ও প্রভাব নেই। এগুলো কখনো ইলাহ হতে পারে না। [দেখুন: সা'দী: মুয়াস্সার]
(২) এ কয়েকটি বাক্যের মধ্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সমস্ত যুক্তি একত্র করেছেন। মনে হয় যেন তিনি বলছেন, যে নিজে অসম্পূর্ণ, অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় তার অস্তিত্বের জন্য, যে মূর্তিগুলো তোমাদের কোন প্রকারের কোন রিযিক দান করতে পারে না, তারা সামান্য- সামান্যতমও কোন প্রকার ইবাদাতের মালিক হতে পারে না। তোমাদেরকে তো আল্লাহর দিকে ফিরে যেতেই হবে। সুতরাং তোমরা তারই ইবাদাত কর। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) তোমরা তো আল্লাহ ব্যতীত কেবল প্রতিমার উপাসনা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ;[1] তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা কর, তারা তোমাদের রুযী দানে অক্ষম। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিকটেই রুযী কামনা কর এবং তাঁর উপাসনা ও কৃতজ্ঞতা কর।[2] তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।[3]
[1] أَوثَان শব্দটি وَثَن এর বহুবচন। যেমন, أَصنَام শব্দটি صَنَم এর বহুবচন। দুয়েরই অর্থ হল প্রতিমা। কেউ কেউ বলেন, স্বর্ণ-রৌপ্য, পিতল ও পাথরের তৈরী মূর্তিকে صَنَم বলা হয়। আর وَثَن মূর্তি এবং চুন-পাথর নির্মিত আস্তানাকেও বলা হয়। تَخلُقُون إِفكًا এর অর্থ تَكذِبُونَ كَذِبًا (মিথ্যা উদ্ভাবন করা)। এর অন্য একটি অর্থ হল, تَعمَلُونها وتَنحِتُونَها لِلإفْك (মিথ্যা উদ্দেশ্য লাভের আশায় তা গড় ও নির্মাণ কর।) ভাবার্থের দিক দিয়ে উভয়ই অর্থ সঠিক। অর্থাৎ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ইবাদত করছ, তারা তো পাথর-নির্মিত মূর্তি মাত্র; না তারা শুনতে পায়, আর না দেখতে, তারা না উপকার করতে পারে, না অপকার। তোমরা নিজেরাই তাদেরকে বানিয়েছ। তাদের সত্য হওয়ার প্রমাণ তো কোন কিছুই তোমাদের নিকট নেই। অথবা এ সকল মূর্তি, যা তোমরা নিজ হাতে তৈরী কর, যখন তা বিশেষ একটি গঠন ও রূপ লাভ করে, তখন তোমরা মনে কর যে, ওর মধ্যে ইলাহী ক্ষমতা এসে গেছে। ফলে তোমরা ওর নিকটে নানা আশা ও কামনা করে থাক। তাদেরকে বিপত্তারণ ও সংকট মোচনকারী হিসাবে মান্য করতে শুরু কর!
[2] যখন এই সকল মূর্তি তোমাদের জীবিকার বা উপার্জনের কোন প্রকার ক্ষমতা রাখে না; তারা না বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে, আর না পৃথিবীতে কোন প্রকার গাছ-পালা উৎপন্ন করতে পারে, না সূর্যের আলো পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে, আর না তোমাদের এমন শক্তি প্রদানে সক্ষম যার দ্বারা প্রকৃতির ঐ সমস্ত জিনিস হতে উপকৃত হতে পার। সুতরাং তোমরা তোমাদের জীবিকা আল্লাহর নিকটেই কামনা কর এবং তাঁরই ইবাদত কর ও তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
[3] অর্থাৎ, মৃত্যুবরণ করার পর পুনর্জীবন লাভ করে যখন তাঁর নিকট ফিরে যেতে হবে, তখন তাকে ছেড়ে অন্যের নিকট নিজের মাথা কেন নত কর? তাঁকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত কেন কর? এবং অন্যকে কেন দুঃখ-কষ্ট নিবারণকারী ও প্রয়োজন পূর্ণকারী মনে কর?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান