১২ সূরাঃ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف - আয়াত নং - ৭০ - মাক্কী
অতঃপর সে যখন তাদেরকে তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিল, তখন তার ভাইয়ের মালপত্রে পানপাত্রটি রেখে দিল। তারপর একজন ঘোষক ঘোষণা করল, ‘ওহে কাফেলার লোকজন, নিশ্চয় তোমরা চোর’। আল-বায়ান
অতঃপর ইউসুফ যখন তাদের রসদপত্র প্রস্তুত করে দিল, তখন সে তার সহোদর ভাইয়ের রসদপত্রের ভিতর পান পাত্রটি রেখে দিল। তখন এক ঘোষক ঘোষণা দিল, ‘হে কাফেলার লোক! তোমরা নিশ্চয়ই চোর।’ তাইসিরুল
অতঃপর সে যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল তখন সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র রেখে দিল, অতঃপর এক ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে বললঃ হে যাত্রীদল! তোমরা নিশ্চয়ই চোর। মুজিবুর রহমান
So when he had furnished them with their supplies, he put the [gold measuring] bowl into the bag of his brother. Then an announcer called out, "O caravan, indeed you are thieves." Sahih International
৭০. অতঃপর তিনি যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন তিনি তার সহোদরের মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র(১) রেখে দিলেন।(২) তারপর এক আহবায়ক চিৎকার করে বলল, হে যাত্রীদল! তোমরা নিশ্চয় চোর।(৩)
(১) কুরআনুল কারীম এ পাত্রটিকে এক জায়গায় السِّقَايَةَ শব্দের দ্বারা এবং অন্যত্র (صُوَاعَ الْمَلِكِ) [সূরা ইউসুফঃ ৭০ ও ৭২] শব্দের দ্বারা ব্যক্ত করেছে। السِّقَايَةَ শব্দের অর্থ পানি পান করার পাত্র এবং صُوَاعَ শব্দটিও এমনি ধরনের পাত্রের অর্থে ব্যবহৃত হয়। [ইবন কাসীর] একে مَلِكٌ তথা বাদশাহর দিকে নির্দেশিত করার ফলে আরো জানা গেল যে, এ পাত্রটি বিশেষ মূল্যবান ও মর্যাদাবান ছিল। এ পাত্রটি যথেষ্ট মূল্যবান ও মর্যাদাবান হওয়া ছাড়াও বাদশাহর সাথে এর বিশেষ সম্পর্কও ছিল। বাদশাহ নিজে তা দ্বারা পান করতেন। [বাগভী]
(২) আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে, সহোদর ভাই বিনইয়ামীনকে রেখে দেয়ার জন্য ইউসুফ আলাইহিস সালাম একটি কৌশল ও তদবীর অবলম্বন করলেন। যখন সব ভাইকে নিয়ম মাফিক খাদ্যশস্য দেয়া হল, তখন প্রত্যেক ভাইয়ের খাদ্যশস্য পৃথক পৃথক উটের পিঠে পৃথক পৃথক নামে চাপানো হল। বিনইয়ামীনের খাদ্যশস্য যে উটের পিঠে চাপানো হল, তাতে একটি পাত্র গোপনে রেখে দেয়া হল।
কোন কোন মুফাসসির মনে করেন, সম্ভবত পেয়ালা রেখে দেবার কাজটা ইউসুফ আলাইহিস সালাম নিজের ভাইয়ের সম্মতি নিয়ে তার জ্ঞাতসারেই করেছিলেন। [বাগভী] আগের আয়াতে এদিকে প্রচ্ছন্ন ইংগিত রয়েছে। ইউসুফ আলাইহিস সালাম ভাইকে রক্ষা করতে চাচ্ছিলেন। ভাই নিজেও এ যালেমদের সাথে ফিরে না যেতে চেয়ে থাকবেন। কিন্তু ইউসুফের নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে তাকে আটকে রাখা এবং তার মিসরে থেকে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর এ অবস্থায় এ পরিচয় প্রকাশ করাটা কল্যাণকর ছিল না। তাই বিনইয়ামীনকে আটকে রাখার জন্য দু’ভাইয়ের মধ্যে এ পরামর্শ হয়ে থাকবে। যদিও এর মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য ভাইয়ের অপমান অনিবার্য ছিল, কারণ তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হচ্ছিল, কিন্তু পরে উভয় ভাই মিলে আসল ব্যাপারটি জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিলেই এ কলংকের দাগ অতি সহজেই মুছে ফেলা যেতে পারবে। [দেখুন, বাগভী]
(৩) অর্থাৎ কিছুক্ষণ পর জনৈক ঘোষক ডেকে বললঃ হে কাফেলার লোকজন তোমরা চোর। এখানে ثم দ্বারা জানা যায় যে, এ ঘোষণা তৎক্ষণাৎ করা হয়নি; বরং কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর করা হয়েছে- যাতে কেউ জালিয়াতির সন্দেহ না করতে পারে। [বাগভী] মোটকথা, ঘোষক ইউসুফ-ভ্রাতাদের কাফেলাকে চোর আখ্যা দিল। তাদের এ ঘোষণার যৌক্তিক কারণ ছিল। কেননা, ঘটনার যে সরল আকৃতিটি সহজেই চোখে ধরা পড়ে তা হচ্ছে এই যে, পেয়ালাটি হয়তো নীরবে রেখে দেয়া হয়েছিল, পরে সরকারী কর্মচারীরা সেটি খুঁজে না পেলে অনুমান করা হয়েছিল, এটা নিশ্চয়ই সেই কাফেলার অন্তর্ভুক্ত কোন লোকের কাজ যারা এখানে অবস্থান করেছিল। সুতরাং কৰ্মচারীরা সেটা না জেনেই তাদেরকে চোর বলেছিল। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) অতঃপর সে (ইউসুফ) যখন তাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিল, তখন সে তার (সহোদর) ভাই-এর মালপত্রের মধ্যে পানপাত্র (সা’) রেখে দিল।[1] অতঃপর এক আহবায়ক চীৎকার করে বলল, ‘হে যাত্রীদল[2] তোমরা নিশ্চয়ই চোর।’ [3]
[1] মুফাসসিরগণ বলেছেন যে, এই سِقَايَة (পানপাত্র)টি স্বর্ণ অথবা রৌপ্যনির্মিত ছিল। পানি পান করা ছাড়া শস্য মাপার কাজও তার দ্বারা নেওয়া হতো। ওটা চুপিসারে বিনয়্যামীনের মালপত্রে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
[2] الْعِيْرُ বাস্তবে সেই উট, গাধা অথবা খচ্চরদলকে বলা হয় যাদের উপর শস্য চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, এখানে এর অর্থ হচ্ছে أصْحَابُ الْعِيْرِ অর্থাৎ যাত্রীদল।
[3] চুরির এই দোষারোপ স্বস্থানে বাস্তবিক ছিল। কেননা আহবায়ক সেবক ইউসুফ (আঃ)-এর পরিকল্পিত কৌশল সম্পর্কে অবগত ছিল না। অথবা এর অর্থ এই যে, তোমাদের অবস্থা তো চোরদের মত, যেহেতু রাজার অনুমতি ছাড়াই তাঁর পানপাত্র তোমাদের মালপত্রের ভিতরে রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান