৫৯১৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৩-[৪৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সা.) যায়নাব-এর বিবাহে বর ছিলেন, তখন আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কিছু খেজুর, মাখন এবং পনীরের সংমিশ্রণে ’হায়সা’ তৈরি করলেন। তারপর তাকে তিনি একটি পাত্রে রেখে বললেন, হে আনাস। এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে নিয়ে যাও এবং বল, এগুলো আমার মা আপনার কাছে পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। আর তিনি এটাও বলেছেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমাদের পক্ষ হতে আপনার জন্য খুবই সামান্য হাদিয়্যাহ্! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তা নিয়ে গেলাম এবং আমার মা যা কিছু বলার জন্য আমাকে আদেশ করেছিলেন, আমি তাও বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, এগুলো রাখ। অতঃপর আমাকে কিছু লোকের নাম উল্লেখ করে বললেন, যাও এবং অমুক অমুক ও অমুককে আর তা ছাড়াও যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাদেরকে দাওয়াত দেবে।
অতএব তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদেরকে এবং আমার সাথে যাদের দেখা হয়েছে তাদেরকে দাওয়াত দিলাম। অতঃপর আমি ফিরে এসে দেখলাম পূর্ণ লোকজন। আনাস (রাঃ) প্রশ্ন করা হলো, সেখানে আপনাদের সংখ্যা কতজন ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত। আমি দেখতে পেলাম, নবী (সা.) ’হায়সার পাত্রের মধ্যে স্বীয় হাত রাখলেন এবং আল্লাহর যা ইচ্ছা তা পাঠ করলেন। তারপর দশ দশজনের দলকে তা হতে খাবার জন্য ডাকতে থাকলেন। আর তাদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ সম্মুখ হতে খাওয়া শুরু কর। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা সকলে তুষ্ট হয়ে খেলেন। একদল খেয়ে বের হতেন এবং আরেক দল প্রবেশ করতেন, এভাবে সমস্ত লোকই খাদ্য খেলেন। অতঃপর নবী (সা.) আমাকে বললেন, হে আনাস! পাত্রটি উঠাও। তখন আমি পাত্রটি উঠালাম, কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারছি না, যখন আমি পাত্রটি রেখেছিলাম, তখন পাত্রটিতে ’হায়সা’ বেশি ছিল নাকি এখন যখন আমি তাকে উঠালাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أَنَسٍ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرُوسًا بِزَيْنَبَ فَعَمَدَتْ أُمِّي أُمُّ سُلَيْمٍ إِلَى تَمْرٍ وَسَمْنٍ وَأَقِطٍ فَصَنَعَتْ حَيْسًا فَجَعَلَتْهُ فِي تَوْرٍ فَقَالَتْ يَا أَنَسُ اذْهَبْ بِهَذَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْ بَعَثَتْ بِهَذَا إِلَيْكَ أُمِّي وَهِيَ تُقْرِئُكَ السَّلَامَ وَتَقُولُ إِنَّ هَذَا لَكَ مِنَّا قَلِيلٌ يَا رَسُولَ الله قَالَ فَذَهَبْتُ فَقُلْتُ فَقَالَ ضَعْهُ ثُمَّ قَالَ اذْهَبْ فَادْعُ لِي فُلَانًا وَفُلَانًا وَفُلَانًا رِجَالًا سَمَّاهُمْ وَادْعُ مَنْ لَقِيتَ فَدَعَوْتُ مَنْ سَمَّى وَمَنْ لَقِيتُ فَرَجَعْتُ فَإِذَا الْبَيْتُ غَاصٌّ بِأَهْلِهِ قِيلَ لأنس عدد كم كَانُوا؟ قَالَ زهاء ثَلَاث مائَة. فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ جَعَلَ يَدْعُو عَشَرَةً عَشَرَةً يَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَقُول لَهُم: «اذْكروا اسْم الله وليأكلْ كُلُّ رَجُلٍ مِمَّا يَلِيهِ» قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا. فَخَرَجَتْ طَائِفَةٌ وَدَخَلَتْ طَائِفَةٌ حَتَّى أَكَلُوا كُلُّهُمْ قَالَ لِي يَا أَنَسُ ارْفَعْ. فَرَفَعْتُ فَمَا أَدْرِي حِينَ وَضَعْتُ كَانَ أَكْثَرَ أَمْ حِين رفعت. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (5163) و مسلم (94 / 1428)، (3507) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن انس: كان النبي صلى الله عليه وسلم عروسا بزينب فعمدت امي ام سليم الى تمر وسمن واقط فصنعت حيسا فجعلته في تور فقالت يا انس اذهب بهذا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقل بعثت بهذا اليك امي وهي تقرىك السلام وتقول ان هذا لك منا قليل يا رسول الله قال فذهبت فقلت فقال ضعه ثم قال اذهب فادع لي فلانا وفلانا وفلانا رجالا سماهم وادع من لقيت فدعوت من سمى ومن لقيت فرجعت فاذا البيت غاص باهله قيل لانس عدد كم كانوا؟ قال زهاء ثلاث ماىة. فرايت النبي صلى الله عليه وسلم وضع يده على تلك الحيسة وتكلم بما شاء الله ثم جعل يدعو عشرة عشرة ياكلون منه ويقول لهم: «اذكروا اسم الله ولياكل كل رجل مما يليه» قال: فاكلوا حتى شبعوا. فخرجت طاىفة ودخلت طاىفة حتى اكلوا كلهم قال لي يا انس ارفع. فرفعت فما ادري حين وضعت كان اكثر ام حين رفعت. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (5163) و مسلم (94 / 1428)، (3507) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (فَصَنَعَتْ حَيْسًا) অর্থাৎ তারপর তিনি হায়স' (এক জাতীয় খাবার) তৈরি করলেন।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) সামায়িল’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় (حَيْسًا) এর পরিচয় দিয়ে বলেন, (حَيْسًا) হলো ঘি অথবা পনির মিশ্রিত খেজুর দিয়ে তৈরি খাবার।
উক্ত হাদীসের শেষের দিকে আনাস (রাঃ) বলেন, যখন আমি সেই পাত্রটি শেষে আবার উঠিয়ে আনলাম তখন আমি এটি বুঝতে পারছিলাম না যে, পাত্রটি রাখার সময় ‘হায়স’ পরিমাণে বেশি ছিল নাকি শেষে উঠিয়ে নেয়ার সময় বেশি ছিল?
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পাত্রটি উঠানোর সময় তাতে ‘হায়স’ বেশি ছিল। কারণ তখন তার সাথে স্পর্শ হয়েছিল রাসূল (সা.) -এর হাত এবং তাতে ছিল সম্মানিত সাহাবীদের বরকত।
কেউ কেউ বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল ‘হায়স দিয়ে, যেই ‘হায়স' উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রাসূল (সা.) -কে হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল রুটি ও গোশত দিয়ে। এখানে দুটি বর্ণনার মাঝে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
মিরকাত প্রণেতা উক্ত হাদীস দুটির ব্যাপারে বলেন, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল মূলত রুটি ও গোশত দিয়েই। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেই সময়ে হয়তো ‘হায়সও এসে যায়।
এছাড়াও এমন কোন প্রমাণ নেই যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল ‘হায়স' দিয়ে। অথবা এমনও হতে পারে যে, হায়স সেদিনই ওয়ালীমার পরে রাসূল (সা.) -কে দেয়া হয়েছে। কিংবা তার পরের দিন দেয়া হয়েছে।
অতএব, হাদীস দুটির মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। যায়নাব (রাঃ)-এর বিবাহের সময় রুটি ও গোশত দিয়ে ওয়ালীমাহ করার সময় খাবারের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বৃদ্ধি পাওয়াকে কেউ কেউ অস্বীকার করে বলেছেন যে, সেদিন খাবার বৃদ্ধি পায়নি।
কিন্তু এ কথাটি অবান্তর এবং আশ্চর্যজনক। কারণ তার ওয়ালীমা করা হয়েছিল মাত্র একটি ছাগল ও রুটি দিয়ে। অথচ তা হাজার মানুষ খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়েছিল। এটি কিভাবে সম্ভব এই অল্প খাবার দিয়ে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, অবশ্যই সেই খাবারে বরকত হয়েছিল এবং স্বাভাবিক অবস্থার থেকে তা বৃদ্ধি পেয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)