৪৪৭১

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৭১-[৫৩] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ নিয়ম ছিল যে, যখন তিনি কোন সফরে বের হতেন, তখন ঘরের সকলের নিকট হতে বিদায় নিয়ে সর্বশেষ বিদায় নিতেন ফাতিমা (রাঃ) হতে। আর যখন তিনি ফিরে আসতেন, তখন সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ করতেন ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে। এভাবে একবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক অভিযান থেকে ফিরে এসে ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরের দিকে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একখানা চট অথবা পর্দা তার ঘরের দরজায় ঝুলানো রয়েছে। আর হাসান ও হুসায়ন তাদের উভয়ের হাতে পরিহিতি রয়েছে দু’খানা রূপার বালা। এটা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের দরজা পর্যন্ত এলেন, কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করলেন না। ফলে ফাতিমা (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, এগুলো দেখার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করেননি।

অতঃপর ফাতিমা (রাঃ) পর্দাখানা ছিঁড়ে ফেললেন এবং ছেলেদের হাত হতে বালা দু’খানা খুলে নিলেন এবং ভেঙ্গে ফেললেন। বালকদ্বয় ভাঙ্গা বালা দু’টি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চলে গেল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা দু’খানা তাদের নিকট হতে নিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ হে সাওবান! এ অলঙ্কার দু’টি নিয়ে যাও এবং অমুক পরিবারস্থ লোকেদেরকে দিয়ে আসো। আর তারা হলো (হাসান ও হুসায়ন-এর দিকে ইঙ্গিত করে) আমার পরিবার-পরিজন। তারা পার্থিব জীবনে সুখন্ডসম্ভার ভোগ করবে, আমি তা পছন্দ করি না। (অতঃপর বললেনঃ) হে সাওবান! যাও ফাতিমার জন্য ’আসবের (বিশেষ পুঁতির) একটি হার এবং হাতির দাঁতের তৈরি দু’টি বালা কিনে নিয়ে আসো। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَافَرَ كَانَ آخِرُ عَهْدِهِ بِإِنْسَانٍ مِنْ أَهْلِهِ فَاطِمَةَ وَأَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ عَلَيْهَا فَاطِمَةَ فَقَدِمَ مِنْ غَزَاةٍ وَقَدْ عَلَّقَتْ مَسْحًا أَوْ سِتْرًا عَلَى بَابِهَا وَحَلَّتِ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ قُلْبَيْنِ مِنْ فِضَّةٍ فَقَدِمَ فَلَمْ يَدْخُلْ فَظَنَّتْ أَنَّ مَا مَنَعَهُ أَنْ يَدْخُلَ مَا رَأَى فَهَتَكَتِ السِّتْرَ وَفَكَّتِ الْقُلْبَيْنِ عَنِ الصَّبِيَّيْنِ وَقَطَعَتْهُ مِنْهُمَا فَانْطَلَقَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِيَانِ فَأَخَذَهُ مِنْهُمَا فَقَالَ: «يَا ثَوْبَانُ اذْهَبْ بِهَذَا إِلَى فُلَانٍ إِنَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي أَكْرَهُ أَنْ يَأْكُلُوا طَيِّبَاتِهِمْ فِي حَيَاتِهِمُ الدُّنْيَا. يَا ثَوْبَانُ اشْتَرِ لِفَاطِمَةَ قِلَادَةً مِنْ عَصْبٍ وَسُوَارَيْنِ مِنْ عَاجٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد

وعن ثوبان قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سافر كان اخر عهده بانسان من اهله فاطمة واول من يدخل عليها فاطمة فقدم من غزاة وقد علقت مسحا او سترا على بابها وحلت الحسن والحسين قلبين من فضة فقدم فلم يدخل فظنت ان ما منعه ان يدخل ما راى فهتكت الستر وفكت القلبين عن الصبيين وقطعته منهما فانطلقا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم يبكيان فاخذه منهما فقال: «يا ثوبان اذهب بهذا الى فلان ان هولاء اهلي اكره ان ياكلوا طيباتهم في حياتهم الدنيا. يا ثوبان اشتر لفاطمة قلادة من عصب وسوارين من عاج» . رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যাঃ (آخِرُ عَهْدِه بِإِنْسَانٍ مِنْ أَهْلِه فَاطِمَةَ) অর্থ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল, সফরে যাওয়ার সময় পরিবারের অর্থাৎ তার স্ত্রী ও মেয়েদের মাঝে সর্বশেষ যার সাথে কথা বলতেন, ওয়াসিয়্যাত করতেন, নির্দেশ দিতেন এবং বিদায় নিতেন তিনি হলেন ফাতিমা (রাঃ)। আবার সফর থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম যার কাছে যেতেন তিনি ফাতিমা (রাঃ)। মোটকথা, যাওয়ার সময় সর্বশেষে ফাতিমা (রাঃ) এবং আসার পর সর্বপ্রথম ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করতেন।

(وَقَدْ عَلَّقَتْ مَسْحًا أَوْ سِتْرًا عَلٰى بَابِهَا) অর্থ- একদিন এক যুদ্ধ থেকে এসে পেলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পশমের মসৃন মোলায়েম কাপড় বা পর্দা ঝুলিয়েছেন। "مسح" মীম হরফে যের দিয়ে পঠিত। অর্থাৎ পশমী কাপড়। অর্থাৎ সাধারণ পর্দা বা পশমী দামী পর্দা দরজায় ঝুলিয়েছেন। দরজায় পর্দা ঝুলানো কোন অবৈধ বা অপছন্দনীয় জিনিস নয়। বরং পর্দার জন্য তা ঝুলানো প্রশংসনীয় বিষয়। তারপরও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা দেখে রাগ করে ঘরে না আসার কারণ হলো, সেই পর্দাটি নিশ্চয় কেবল পর্দার জন্য ছিল না। বরং সৌন্দর্য বা কিছুটা জাগতিক চাকচিক্য অবলম্বনের জন্য ছিল। এটি ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাগের একটি কারণ। আরেকটি কারণ যা তারপর উল্লেখ করা হচ্ছে তা হলো, হাসান ও হুসায়ন-কে রূপার চুড়ি পরানো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগের কারণ না বললেও ফাতিমা (রাঃ) তা বুঝে নিলেন। কেননা পিতার মন মেজাজ বা মানসিক অবস্থা নিশ্চয় তার জানা ছিল। প্রতিবারের মতো এবার তার কাছে না আসার কারণ তিনি সহজেই টের পেয়ে গেলেন। টের পেয়েই পর্দা তুলে ফেললেন এবং ছেলেদের হাত থেকে চুড়ি খুলে ফেললেন।

(فَانْطَلَقَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِيَانِ) অর্থ- তারা দু’জন রসূলের কাছে কেঁদে কেঁদে গেল। পছন্দের কোন জিনিস বাচ্চাদের কাছে দিয়ে আবার তা নিয়ে নিলে স্বাভাবিকত বাচ্চাদের এই অবস্থাই হয়। তাই তারা কাঁদছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাত থেকে তা নিয়ে নিলেন। তা নিয়ে নেয়ার পর আবার তাদের মন ও ফাতিমা (রাঃ) মনোরঞ্জনের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওবানকে নির্দেশ দিলেন-

(يَا ثَوْبَانُ اذْهَبْ بِهٰذَا إِلٰى فُلَانٍ) হে সাওবান! তুমি তাদেরকে অমুকের কাছে নিয়ে যাও। অমুকের কাছে কেন নিয়ে যাবে তা বলার আগেই রসূল তাদের কাছ থেকে এগুলো নিয়ে নেয়া বা পর্দা ঝুলানোর কারণে তা করার কারণটিও বলে দিলেন। রসূলের কথায় ফাতিমা-এর ধারণা একেবারেই সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (إِنَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي أَكْرَهٗ أَنْ يَأْكُلُوا طَيِّبَاتِهِمْ فِي حَيَاتِهِمُ الدُّنْيَا) অর্থ- এরা আমার পরিবার। তারা দুনিয়ার জীবনে তাদের আরাম ভোগ করে নেয়া আমি অপছন্দ করি। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন ভোগের নয়। আমি তাদের সব ভোগ ও আরাম-আয়েশ আখিরাতের জন্য রেখে দিয়ে দুনিয়ার দারিদ্র্যতার জীবন পছন্দ করি। দুনিয়ার জীবনে কষ্ট করে যেন তারা আখিরাতে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারে। জান্নাতের উচ্চ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। তারা যেন তাদের সদৃশ্য না হয় যাদের বেলায় আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ

أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُم

‘‘তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনেই তোমাদের অংশের নি‘আমাতগুলো নিঃশেষ করেছ আর তা ভোগ করেছ।’’ (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ : ৪৬)

এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (اشْتَرِ لِفَاطِمَةَ قِلَادَةً مِنْ عَصْبٍ وَسُوَارَيْنِ مِنْ عَاجٍ) অর্থ- ফাতিমার জন্য একটি কাপড়ের মালা ও হাতির দাঁতের দুটি চুড়ি কিনে দাও। খত্ত্বাবী বলেনঃ এখানে "عصب" অর্থ ইয়ামেনী চাদর না হয়ে আর কি হতে পারে তা আমার জানা নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

চুড়ি মেয়েদের পরিধেয় বস্তু। ফাতিমা হয়ত ছেলেদের জন্য তা পরিধানে বাধা নেই মনে করে পরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ করায় তিনি তা কেটে ফেলেছিলেন। পিতার রাগের কারণে এটি করলে মানুষ হিসেবে তার মনে কিছুটা কষ্ট আসতে পারা অসম্ভব নয়। কষ্ট আসুক বা না আসুক তবু এটি একটি কষ্ট পাওয়ার কারণ। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মনোরঞ্জনের জন্য সাথে সাথে একটি মালা ও দুটি চুড়ি কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। তবে এটি ছিল সাধারণ। আগের মতো জাঁকজমক বা দুনিয়া বিলাসীদের মতো নয়।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )