পরিচ্ছেদঃ

এক. রমযান কাছে এলে আমরা অনেকে নিম্নের দোয়াটি পড়ি, তবে এমন লোক খুব কম আছি যারা এর শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা সম্পর্কে অবগত:

"اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان"

“হে আল্লাহ, আপনি রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত রাখুন এবং আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দিন”।

হাদিসের সনদ:

ইমাম আহমদ তার “মুসনাদ” গ্রন্থে বলেন: আমাদেরকে বলেছে আব্দুল্লাহ, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে উবাইদুল্লাহ ইবনু ওমর, যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ থেকে, তিনি যিয়াদ আন-নুমাইরি থেকে, তিনি সাহাবি আনাস ইবনু মালেক থেকে, তিনি বলেন: রজব আগমন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:... ...

ইবনুস সুন্নি ফিল “আমলিল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ”: (৬৫৯), তিনি এ হাদিস ইবনু মুনি সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে উবাইদুল্লাহ ইবনু ওমর আল-কাওয়ারিরি।

বায়হাকি ফি “শুআবিল ঈমান”: (৩/৩৭৫), তিনি বর্ণনা করেন আবূ আব্দুল্লাহ আল-হাফেয সূত্রে, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে আবূ বকর মুহাম্দ ইবনু মুয়াম্মাল, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে মুহাম্মদ ইবনু শারানি, আল-কাওয়ারিনি থেকে।

আবূ নু’আইম ফিল “হিলইয়াহ”: (৬/২৬৯), তিনি এ হাদিস বর্ণনা করেন হাবিব ইবনু হাসান ও আলি ইবনু হারুন সূত্রে, তারা উভয়ে বলেছেন আমাদেরকে বলেছে ইউসূফ আল-কাদি, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ।

এ হাদিস বাযযার তার “মুসনাদ” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আহমদ ইবনু মালেক আল-কুশাইরি থেকে, সে যায়েদা থেকে।

এ হাদিসের সনদে দু’টি দোষ বা সমস্যা রয়েছে, হাদিস বিশারদগণের নিকট যার পরিভাষিক নাম হচ্ছে ইল্লত, অর্থাৎ হাদিসে দু’টি ইল্লত রয়েছে:

প্রথম ইল্লতঃ এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ, তার সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের মূল্যায়ন দেখুন:

আবূ হাতেম বলেছেন: যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে মারফূ সনদে মুনকার হাদিস বর্ণনা করে, জানি না এ সমস্যা তার থেকে না তার উস্তাদ যিয়াদ থেকে। সে যিয়াদ ব্যতীত অন্য কারো থেকে হাদিস বর্ণনা করেছে কিনা তাও জানি না, যার সূত্র ধরে তার হাদিস যাচাই করব।

বুখারি বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।

আবূ দাউদ বলেছেন: তার হাদিস সম্পর্কে কিছু জানি না।

নাসায়ি বলেছেন: তাকে চিনি না।

যাহাবি “দেওয়ানে দুয়াফাতে” বলেছেন: সে কোন দলিল নয়।

ইবনু হাজার বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।

“মুনকার” হাদিস:

হাদিস বিশারদদের একটি পরিভাষা হচ্ছে “মুনকার”, এর অর্থ সম্পর্কে ইমাম আহমদ বলেন:

(الحديث عن الضعفاء قد يُحْتاج إليه في وقتٍ، والمنكر أبدًا منكر)

“দুর্বল বর্ণনকারীদের হাদিস কখনো প্রয়োজন হয়, কিন্তু মুনকার সর্বদা মুনকার”। দেখুন: “ইলালুল মারওয়াযী”: হাদিস নং: (২৮৭), “মাসায়েল ইবনু হানি”: (১৯২৫-১৯২৬), ইবনু রজব “শারহুল ইলাল”: (১/৩৮৫) গ্রন্থে ইবনু হানি থেকে তা বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদের কথার অর্থ হচ্ছে: মুনকার সর্বদা পরিত্যক্ত, এর বিপরীতে দুর্বল হাদিসের প্রয়োজন হলেও মুনকার কখনো গ্রহণ করা যাবে না।

দ্বিতীয় ইল্লতঃ এ হাদিসের অপর বর্ণনাকারী যিয়াদ ইবনু আব্দুল্লাহ নুমাইরি আল-বিসরি, (যায়েদা ইবনু আবির রাকাদের উস্তাদ): তার সম্পর্কে হাদিস বিশারদদের বক্তব্য শুনুন:

ইয়াহ ইয়া ইবনু মায়িন বলেছেন: তার হাদিস দুর্বল।

আবূ হাতেম বলেছেন: তার হাদিস লেখা যাবে, কিন্তু দলিল হিসেবে পেশ করা যাবে না।

আবূ উবাইদ আজুররি বলেছেন: আমি আবূ দাউদকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি তাকে দুর্বল বলেছেন।

ইবনু হিব্বান ’মাজরুহ’ বা দোষী ব্যক্তিদের আলোচনায় বলেন: তার হাদিস মুনকার। আনাস থেকে সে এমন কিছু বর্ণনা করে, যা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সাথে মিলে না, তার হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ নয়।

দারা কুতনি বলেছেন: সে দলিল নয়।

ইবনু হাজার বলেছেন: সে দুর্বল।


হাদিস সম্পর্কে আলেমদের মতামত:

বায়হাকি তার “শুআবূল ঈমান”: (৩/৩৭৫) গ্রন্থে বলেন: এ হাদিস শুধু যিয়াদ ইবনু নুমাইরি এবং তার থেকে শুধু যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণনা করেছেন।

বুখারি বলেছেন: যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণিত হাদিস মুনকার।

ইমাম নববী তার “আযকার”: (পৃ.২৫৪) গ্রন্থে বলেন: “হিলইয়াতুল আউলিয়া” গ্রন্থে এ হাদিস আমরা দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছি।

ইমাম যাহাবি “মিযানুল ইতিদাল”: (৩/৯৬) গ্রন্থে যায়েদার জীবনী আলোচনায় এ হাদিস উল্লেখ করে বলেন: এ হাদিসও দুর্বল।

হায়সামি তার “মাজমাউয যাওয়ায়িদ”: (২/১৬৫) গ্রন্থে বলেন: “বাযযার এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, এর সনদে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ আছে, ইমাম বুখারি তাকে মুনকারুল হাদিস বলেছেন, আলেমদের একটি জামাত তাকে অপরিচিত বলেছেন”।

তিনি আরো বলেন: “বাযযার ও তাবরানি আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, এর সনদে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ আছে, যার ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন”। “মাজমাউয যাওয়ায়িদ”: (৩/১৪০)

ইবনু আলান ফি “ফুতুহাতির রাব্বানিয়াহ”: (৪/৩৩৫) গ্রন্থে ইবনু হাজার থেকে নকল করে বলেন: ইবনু হাজার বলেছেন এ হাদিস গরিব, ইমাম বাযযার ও আবূ নুআইম তা বর্ণনা করেছেন।

আহমদ আল-বান্না “বুলুগুল আমানি”: (৯/২৩১) গ্রন্থে বলেন: অধ্যায়ের এ হাদিসে যিয়াদ নুমাইরি রয়েছে, সে দুর্বল।

ইমাম সুয়ূতি এ হাদিস তার “জামে সগির” গ্রন্থে বায়হাকি ফি “শুআবিল ইমান” ও ইবনু আসাকের সূত্রে উল্লেখ করে তার দুর্বলতার দিকে ঈঙ্গিত করেছেন, এর অন্যান্য সনদও রয়েছে, যার একটি অপরটি দ্বারা শক্তিশালী হয়”। কিন্তু তিনি সেসব সনদ উল্লেখ করেন নি!? বস্তুত এ হাদিসের সনদ একটি।

আহমদ শাকের “মুসনাদের তাখরিজ”: (৪/১০০-১০১) গ্রন্থে হাদিস নং: (২৩৪৬) এ বলেন: এর সনদ দুর্বল।

শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমদের “তাখরিজ”: (৪/১৮০), গ্রন্থে হাদিস নং: (২৩৪৬) এ বলেন: এর সনদ দুর্বল।

আলবানি “মিশকাতের তাখরিজ”: (১/৪৩২), গ্রন্থে হাদিস নং: (১৩৬৯) এ বলেন: “জামেউস সাগির” গ্রন্থে আল্লামা সুয়ূতি বলেন বায়হাকি তার “শুআবূল ইমান” গ্রন্থে এ হাদিস উল্লেখ করেছেন। মুনাভি তার পশ্চাতে বলেন: লেখকের অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বায়হাকি হাদিস বর্ণনা করে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা এমন নয়, বরং বায়হাকি তার পিছু নিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন: ... অতঃপর বায়হাকির উল্লেখিত কথা নকল করেন। (অর্থাৎ বায়হাকি বলেন: ইমাম বুখারি বলেছেন: যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণিত হাদিস মুনকার।)

ড. আমের হাসান সাবরি বলেন: এর সনদ দুর্বল। দেখুন: “জাওয়ায়েদ আব্দুল্লাহ ইবনু আহমদ ইবনু হাম্বল ফিল মুসনাদ”: (পৃ.১৯৮)

-


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ