পরিচ্ছেদঃ ২৬২ : কথাবার্তা বলা ও বর্ণনা করার সময় যাচাই-তদন্ত করে সাবধানে করার প্রতি উৎসাহ দান
بَابُ بَيَانِ مَا يَجُوْزُ مِنَ الْكَذِبِ
পরিচ্ছেদ - ২৬১ : বৈধ মিথ্যা
জেনে রাখুন যে, নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা মূলত: যদিও হারাম তবুও কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ। যার ব্যাপারে আমি আমার ’কিতাবুল আযকার’ নামক পুস্তকে বিস্তৃতভাবে আলোকপাত করেছি। যার সার-সংক্ষেপ এই যে, কথাবার্তা উদ্দেশ্য সফল হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন সম্ভবপর হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা বৈধ। পরন্তু যদি বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে।
আর যদি অভীষ্ট লক্ষ্য ওয়াজেবের পর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে তা অর্জনের জন্য মিথ্যা বলাও ওয়াজেব হবে। যেমন কোন মুসলিম এমন অত্যাচারী থেকে আত্মগোপন করেছে, যে তাকে হত্যা করতে চায় অথবা তার মাল-ধন ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সে তা লুকিয়ে রেখেছে। এখন যদি কেউ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় [যে তার ঠিকানা জানে], তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে গোপন [ও নিরাপদ] রাখার জন্য তার পক্ষে মিথ্যা বলা ওয়াজেব।
অনুরূপভাবে যদি কারো নিকট অপরের আমানত থাকে, আর কোন জালেম যদি তা বলপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তা গোপন করার জন্য মিথ্যা বলা ওয়াজেব। অবশ্য এ সমস্ত বিষয়ে সরাসরি স্পষ্টাক্ষরে মিথ্যা না বলে ’তাওরিয়াহ’ করার পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম।
’তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়। পক্ষান্তরে যদি উক্ত পরিস্থিতিতে ’তাওরিয়াহ’ পরিহার করে প্রকাশ্যভাবে মিথ্যা বলা হয়, তবুও তা হারাম নয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলার বৈধতার প্রমাণে উলামায়ে কিরাম উম্মে কুলসুম কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি পেশ করেন। উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ’’লোকের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী মিথ্যাবাদী নয়। সে হয় ভাল কথা পৌঁছায়, না হয় ভাল কথা বলে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমে আছে উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তাঁকে মানুষের কথাবার্তায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনি, তিন ক্ষেত্র ছাড়া: [১] যুদ্ধকালে [২] লোকদের ঝগড়া মিটাবার ক্ষেত্রে ও [৩] স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের [প্রেম বর্ধক] কথোপকথনে।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ﴾ [الاسراء: ٣٦]
অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। (সূরা ইসরা ৩৬ আয়াত)
তিনি বলেছেন,
﴿مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾ [ق: ١٨]
অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। [ক্বাফ ১৮ আয়াত)
[এ মর্মে মহান আল্লাহর এ বাণীও অনেকে উল্লেখ করে থাকেন, ’’হে ঈমানদারগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ; যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’’ - সূরা হুজুরাত ৬ আয়াত)
১/১৫৫৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে [বিনা বিচারে] তা-ই বর্ণনা করে।’’ (মুসলিম) [1]
(262) بَابُ الْحَثِّ عَلَى التَّثَبُّتِ فِيْمَا يَقُوْلُهُ وَيَحْكِيْهِ
إْعْلَمْ أنَّ الْكَذب، وَإنْ آَانَ أصْلُهُ مُحرَّما،ً فيَجُوزُ في بعْض الأحْوالِ بشرُوطٍ قد أوْضَحْتُهَا في آتاب: »الأذْآارِ«ومُخْتَصَرُ ذلك أنَّ الكلامَ وسيلةٌ إلى المقاصدِ ، فَكُلُّ مَقْصُودٍ محْمُودٍ يُمْكِن تحْصيلُهُ بغَيْر الْكَذِبِ يَحْرُمُ الْكذِبُفيه، وإنْ لَمْ يُمكِنْ تحصيله إلاَّ بالكذبِ جاز الْكذِبُ. ثُمَّ إن آانَ تَحْصِيلُ ذلك المقْصُودِ مُباحاً آَانَ الْكَذِبُ مُباحاً ،وإنْ آانَ واجِباً ، آان الكَذِبُ واجِباً ، فإذا اخْتَفي مُسْلمٌ مِن ظالمٍ يريد قَتلَه ، أوْ أخْذَ مالِه ، وأخَفي مالَه ،وسُئِل إنسانٌ عنه ، وجب الكَذبُ بإخفائِه ، وآذا لو آانَ عِندهُ وديعة ، وأراد ظالِمٌ أخذَها، وجب الْكَذِبُبإخفائها ، والأحْوطُ في هذا آُلِّه أنْ يُوَرِّي ، ومعْنَى التَّوْرِيةِ : أن يقْصِد بِعبارَتِه مَقْصُوداً صَحيحاً ليْسَ هوآاذِباً بالنِّسّبةِ إلَيْهِ ، وإنْ آانَ آاذِباً في ظاهِرِ اللفظِ ، وبِالنِّسْبةِ إلى ما يفهَمهُ المُخَاطَبُ ولَوْ تَركَ التَّوْرِيةَوَأطْلَق عِبارةَ الكذِبِ ، فليْس بِحرَامٍ في هذا الحَالِ .واسْتَدلَّ الْعُلَماءُ بجَوازِ الكَذِب في هذا الحَال بحدِيث أمِّ آُلْثومٍ رضي اللَّه عنْهَا أنَّها سَمِعَتْ رسول اللَْه صَلّىااللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقولُ : » لَيْس الكَذَّابُ الَّذي يُصلحُ بيْنَ النَّاسِ ، فينمِي خَيْراً أو يقولُ خَيْراً « متفقٌ عليه .زاد مسلم في رواية : » قالت : أمُّ آُلْثُومٍ : ولَم أسْمعْهُ يُرْخِّصُ في شَيءٍ مِمَّا يقُولُ النَّاسُ إلاَّ في ثلاثٍ : تَعْني: الحَرْبَ ، والإصْلاحَ بيْن النَّاسِ ، وحديثَ الرَّجُلَ امْرَأَتَهُ ، وحديث المرْأَةِ زوْجَهَا .
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ كَذِباً أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ». رواه مسلم
(262) Chapter: Ascertainment of what one Hears and Narrates
The learned compiler of this book has put forth some arguments to prove that it is lawful to tell a lie under the stress of circumstances. An example of this is the case of a Muslim who hides himself or his money from a tyrant who is bent on killing him or taking his money from him. If one knows the whereabouts of this Muslim or his money and is asked about it, it is permissible to lie in this case to save a Muslim's life or his property, but it is better to give an equivocal answer, that is one which is not clear or definite in meaning, and that can be interpreted in more than one way in order to shun lying altogether. The sum and substance of discussion has been derived from the narration ascribed to Umm Kulthum (May Allah be pleased with her). She said: The Messenger of Allah (PBUH) said, "A liar is not the one who tries to bring about a reconciliation between the people and speaks good to avert dispute or to convey good.''
[Al-Bukhari].
It may be concluded that falsehood is permissible in the following three cases:
(i) While fighting Jihad in the Cause of Allah.
(ii) To conciliate between people.
(iii) For the husband to please his wife and the wife to please her husband.
Abu Hurairah (May Allah be pleased with him) said:
The Prophet (ﷺ) said, "It is enough for a man to prove himself a liar when he goes on narrating whatever he hears."
[Muslim].
Commentary: We learn from this Hadith that it is not fair to accept everything one hears as true without verifying it. Nor it is right to communicate it to others because it is quite possible that what one has heard is untrue and by communicating it to others, he adds it to his own lies. It is, therefore, necessary that one should make sure that what he is communicating to others is true.
পরিচ্ছেদঃ ২৬২ : কথাবার্তা বলা ও বর্ণনা করার সময় যাচাই-তদন্ত করে সাবধানে করার প্রতি উৎসাহ দান
২/১৫৫৬। সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’যে ব্যক্তি আমার তরফ থেকে কোন হাদিস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে, তা মিথ্যা, তবে সে দুই মিথ্যুকের একজন।’’ (মুসলিম) [1]
(262) بَابُ الْحَثِّ عَلَى التَّثَبُّتِ فِيْمَا يَقُوْلُهُ وَيَحْكِيْهِ
وَعَنْ سَمُرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ حَدَّثَ عَنِّي بِحَدِيثٍ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الكَاذِبَينَ» . رواه مسلم
(262) Chapter: Ascertainment of what one Hears and Narrates
Samurah (May Allah be pleased with him) reported:
The Messenger of Allah (ﷺ) said, "He who relates from me something which he deems false is one of the liars."
[Muslim]
Commentary: In some of the narrations of this Hadith, the word used is "Kadhibain'' which means "two liars'' One is that person who tells a lie and attributes his statement to the Prophet (PBUH). The second is that person who conveys it to others. Thus, this Hadith has a stern warning for those `Ulama' and preachers who feel no hesitation in relating false and fabricated Ahadith.
পরিচ্ছেদঃ ২৬২ : কথাবার্তা বলা ও বর্ণনা করার সময় যাচাই-তদন্ত করে সাবধানে করার প্রতি উৎসাহ দান
৩/১৫৫৭। আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একটি মহিলা বলল, ’ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এক সতীন আছে, সুতরাং স্বামী আমাকে যা দেয় না, তা নিয়ে যদি পরিতৃপ্তি প্রকাশ করি, তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে কি?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’যা দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারীর ন্যায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[1]
’পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী’ যে প্রকাশ করে যে, সে পরিতৃপ্ত, অথচ আসলে সে তা নয়। এখানে উদ্দেশ্য হল, যে প্রকাশ করে যে, সে মর্যাদা লাভ করেছে, অথচ সে তা লাভ করেনি। আর ’মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারী’ হল সেই, যে লোকচক্ষুতে মেকী সাজে। লোককে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সংসার-বিরাগী, আলেম অথবা ধনবান ব্যক্তির পোশাক পরিধান করে, অথচ সে তা নয়। এ ছাড়া অন্য কিছুও বলা হয়েছে। আর আল্লাহই অধিক জানেন।
(262) بَابُ الْحَثِّ عَلَى التَّثَبُّتِ فِيْمَا يَقُوْلُهُ وَيَحْكِيْهِ
وَعَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ امْرأةً قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِنَّ لِي ضَرَّةً فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ إِنْ تَشَبَّعْتُ مِنْ زَوْجِي غَيْرَ الَّذِي يُعْطِينِي ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم المُتَشَبِّعُ بِما لَمْ يُعْطَ كَلاَبِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ». متفق عَلَيْهِ
(262) Chapter: Ascertainment of what one Hears and Narrates
Asma' (May Allah be pleased with her) reported:
A woman came to the Messenger of Allah (ﷺ) and said: "I have a co-wife. "Is there any harm for me if I give her the false impression of getting something from my husband which he has not in fact given me?" The Messenger of Allah (ﷺ) said, "The one who creates a false impression of receiving what one has not been given is like one who wears two garments of falsehood."
[Al-Bukhari and Muslim].
Commentary: Some people disguise themselves as pious to create a false impression of their piety; some put up the appearance of scholars to establish their scholarship; and some take to highly expensive clothes to give the impression of being rich. Since these things are fabricated and false, they constitute great sins. One should live as one really is. Similarly, the second wife should not invent false stories to give wrong impression of herself to the other wife. Nor should make false claims of greater love and attention of the husband only to incite the jealousy of the other one while the real position is far from that. In fact, even if this is so, she should not expose the weakness of the husband so that the feelings of his other wife are not injured.