পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৪-[৩৭] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে মুসলিম বান্দা তার ধন-সম্পদ থেকে দু’ দু’টি (জোড়া) আল্লাহর পথে খরচ করে, জান্নাতের সকল প্রহরী তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। তাকে তাদের কাছে রক্ষিত জিনিসের দিকে ডাকবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ’দু’ দু’টি অর্থ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তাঁর কাছে উট থাকে তাহলে দু’ দু’টি করে উট আর যদি গরু থাকে, তাহলে দু’ দু’টি করে গরু (দান করবে)। (নাসায়ী)[1]
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُنْفِقُ مِنْ كُلِّ مَالٍ لَهُ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا اسْتَقْبَلَتْهُ حَجَبَةُ الْجَنَّةِ كُلُّهُمْ يَدْعُوهُ إِلَى مَا عِنْدَهُ» . قُلْتُ: وَكَيْفَ ذَلِكَ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَتْ إِبِلًا فَبَعِيرَيْنِ وَإِنْ كَانَت بقرة فبقرتين» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘‘ফী সাবীলিল্লা-হ’’ বা আল্লাহর পথে বলতে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে দান করাকে বুঝানো হয়েছে। মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) নিকট রয়েছে মহান ও বড় বড় নি‘আমাত (পুরস্কার) এবং জাঁকজমকপূর্ণ উপহার সামগ্রী।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৫-[৩৮] মারসাদ ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী আমাকে এ হাদীসটি শুনিয়েছেন যে, তাঁরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, ’’কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মু’মিনের ছায়া হবে তার দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।’’ (আহমাদ)[1]
وَعَنْ مَرْثَدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: حَدَّثَنِي بَعْضِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ ظِلَّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَة صدقته» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: মূলত দান ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন দানকারীকে গরমের কষ্ট থেকে ছায়া দিয়ে রক্ষা করবে। ক্বারী বলেন, হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ হলো, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন মু’মিন দানকারীর দান তার জন্য ছায়া হবে। যেভাবে সে পৃথিবীতে মানুষকে দান করে ছায়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তার দান শারীরিক আকৃতি ধারণ করেও দানকারীকে ছায়াও দিতে পারে কিংবা দানের সাওয়াবও শারীরিক আকৃতি লাভ করে দানকারীকে ছায়া দিতে পারে। তবে কেউ যদি তার সম্পদ যেমন কাপড়, চাদর/শামিয়ানা ইত্যাদি দান করে তাহলে বাস্তবেই তা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন দানকারীকে ছায়া দিবে, যেমন বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। এ ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে মুসনাদে আহমাদে (খ. ৪, পৃ. ১৪৭) এবং ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান এবং হাকিম (খ. ১, পৃ. ৪২৬) স্ব-স্ব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) যখন মানুষের মাঝে বিচার চলবে তখন দানকারী ব্যক্তি তার দানকৃত বস্ত্তর ছায়ার নিচে অবস্থান করবে।
‘আমীর আল্ ইয়ামানী বলেনঃ বাস্তবিক অর্থেই দানকারী দানকৃত বস্ত্তর ছায়ায় অবস্থান করবে। সেদিন দানকৃত বস্ত্তগুলো একত্রিত করা হবে এবং সেগুলো দানকারী থেকে সূর্যের খড়তাপকে প্রতিহত করবে (অর্থাৎ সূর্যের সেদিনের প্রচন্ড তাপ দানকারীর শরীরে লাগবে না)। লেখক বলেন, হাদীসে বর্ণিত ছায়া বাস্তবিকই হবে, প্রতীকী নয়। এটাই নির্ভরযোগ্য মত।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৬-[৩৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’আশূরার দিন নিজের পরিবার পরিজনের জন্য উদারহস্তে খরচ করবে আল্লাহ তা’আলা গোটা বছর উদারহস্তে তাকে দান করবেন। সুফ্ইয়ান সাওরী বলেন, আমরা এর পরীক্ষা করেছি এবং কথার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি। (রযীন)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ وَسَّعَ عَلَى عِيَالِهِ فِي النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهِ» . قَالَ سُفْيَانُ: إِنَّا قَدْ جربناه فوجدناه كَذَلِك. رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: হাদীসে পরিবার বলতে ব্যক্তির অধীন ঐসব ব্যক্তিবর্গকে বুঝাচ্ছে যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ঐ ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত।
সুফ্ইয়ান আস্ সাওরী বলেনঃ আমি এবং আমার সঙ্গী-সাথীরা এ হাদীসের সঠিকতা/বিশুদ্ধতা অর্থাৎ ‘আশূরার দিন দান করলে দানকারীর ওপর আল্লাহর দান যে প্রশস্ত হয় তা পরীক্ষা করার উদ্দেশে তা করেছি এবং আমরা এর প্রতিদান পেয়েছি অর্থাৎ আমাদের খাদ্য প্রশস্ত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৭-[৪০] এ হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্বী ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), আবূ সা’ঈদ ও জাবির (রাঃ) হতে শু’আবুল ঈমানে নকল করেছেন। তিনি এটি দুর্বল বলেও আখ্যায়িত করেছেন।[1]
وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ عَنْهُ وَعَنْ أبي هُرَيْرَة وَأبي سعيد وَجَابِر وَضَعفه
ব্যাখ্যা: ‘আশূরার দিন নিজ পরিবারের প্রতি প্রশস্ততার সাথে খরচ করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে ‘আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন। ইবনুল জাওযী, ইবনু তায়মিয়্যাহ্, আল ‘উকায়লী, আয্ যারকাশী (রহঃ)-এর মতে হাদীসটি বানোয়াট। তবে বায়হাক্বী (রহঃ)-এর মতে হাদীসটি বহু সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় এটি শক্তিশালী হয়ে ‘হাসান’ হয়েছে। লেখক বলেন, আমার মতে নির্ভরযোগ্য মত হচ্ছে ইমাম বাইহাক্বীর মত। কারণ হাদীসটির বহু সূত্র একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। য‘ঈফ সানাদগুলো একত্র হয়ে শক্তি অর্জন করেছে। আল্লাহই এ ব্যাপারে অধিক জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সদাক্বার মর্যাদা
১৯২৮-[৪১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলুন সদাক্বার সাওয়াব কী? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর সাওয়াব কয়েক গুণ। বরং আল্লাহর কাছে এর সাওয়াব আরও বেশী। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ أَبُو ذَرٍّ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الصَّدَقَةُ مَاذَا هِيَ؟ قَالَ: «أَضْعَافٌ مُضَاعَفَةٌ وَعِنْدَ اللَّهِ الْمَزِيدُ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: এখানে ‘সদাক্বাহ্/দান’ বলতে কী এর সাওয়াব কী তা জিজ্ঞেস করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, দানের সাওয়াব হলো দানের দশ থেকে সাতশ’ গুণ। আল্লাহর নিকট আরো অধিক রয়েছে। যেমন- আল্লাহ বলেছেন,
لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنى وَزِيَادَةٌ
‘‘যারা কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ ও আরো অধিক।’’ (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ২৬)
কোন কল্যাণকর কাজের সাওয়াব আল্লাহ দ্বিগুণ প্রদান করেন এবং তার নিকট থেকে মহা পুরস্কারও দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
‘‘আর কোন পুণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৪০)
অত্র আয়াতে (مِنْ لَّدُنْهُ) অর্থাৎ ‘তাঁর নিকট হতে’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি নিজ পক্ষ থেকে অতিরিক্তের উপর অতিরিক্ত দেন।