ইবনে রজব হাম্বলী (রহ.) ও আরো অনেকেই বর্ণনা করেছেন যে, মক্কায় থাকাকালে এক আবেদের সকল সম্পদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি চরম ক্ষুধার্ত হয়ে গেলেন ও খাদ্যের অভাবে মরণাপন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। একদিন মক্কার চত্বরে হেঁটে বেড়ানোর সময় তিনি একটি হার পেলেন। এটাকে তিনি তার আস্তিনের ভিতরে রেখে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। পথে একজন মানুষের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো যিনি ঘোষণা দিচ্ছিলেন যে তিনি একটি হার হারিয়েছেন। গরীব লোকটি পরে বলেছেন যে, আমি আমার নিকট এর বিবরণ দেয়ার জন্য তাকে বললাম।

আর তিনি এত নিখুঁতভাবে এর বিবরণ দিলেন যে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ রইল না। আমি তার কাছ থেকে কোনরূপ পুরস্কার গ্রহণ না করেই তাকে হারটি দিয়ে দিলাম। আমি বললামঃ হে আল্লাহ! আমি এটাকে তোমার কারণে দিয়ে দিয়েছি, অতএব, যা এর চেয়ে উত্তম তা দিয়ে আমাকে প্রতিদান দিন।

এরপর তিনি সাগরে গিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে যাত্রা শুরু করলেন। অল্প সময় যেতে না যেতেই প্রচণ্ড ঝঞ্জা বায়ুসহ এক ঝড় এল আর (তার) নৌকাটিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল। নৌকাটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো

হয়ে গেল আর লোকটি একটি কাঠের টুকরো ধরে ঝুলে থাকতে বাধ্য হলেন।

প্রচণ্ড ঝঞা বায়ু তাকে ডানে বামে নিয়ে গেল। অবশেষে তিনি ভাসতে ভাসতে একটি দ্বীপের তীরে গেলেন। সেখানে লোকজন ভরা একটি মসজিদ পেলেন- লোকেরা সেখানে সালাত পড়ছিল, তাই তিনিও তাদের সাথে সালাতে যোগ দিলেন। তিনি অংশ বিশেষ লিখিত কিছু কাগজ পেলেন ও সেগুলো পড়তে শুরু করলেন। দ্বীপের লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি কুরআন পড়ছেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” তারা বলল, “আমাদের শিশুদেরকে কুরআন শিক্ষা দিন।” তাই তিনি ওদেরকে শিক্ষা দেয়া শুরু করলেন ও তার কাজের জন্য তিনি একটি ভাতা (বেতন) গ্রহণ করলেন। একদিন তারা তাকে লিখতে দেখল ও জিজ্ঞেস করল, আপনি কি আমাদের শিশুদেরকে লেখা শিখাবেন! আবারও তিনি “হ্যাঁ" বললেন ও একটি বেতনের বিনিময়ে ওদেরকে শিক্ষা দেয়া শুরু করলেন।

কিছুদিন পর তারা তাকে বলল, “আমাদের নিকট একটি এতীম বালিকা আছে। তার পিতা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আপনি কি তাকে বিয়ে করবেন?” তিনি বিয়েতে রাজী হলেন। তিনি পরে বর্ণনা করেছেন, আমি তাকে বিয়ে করে যখন বাসর রাতে তার দিকে তাকালাম তখন আমি দেখতে পেলাম যে, সে হুবহু একই হার পরে আছে। আমি তাকে বললাম আমাকে হারের গল্প বলতে। সে বলল যে, তার পিতা এটাকে মক্কায় হারিয়ে ফেলেছিল এবং একটি লোক এটাকে পেয়ে তার নিকট এটাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। সে বলল যে, তার পিতা সর্বদা সেজদার সময় তার মেয়ের জন্য দুআ করত সে যেন ঐ লোকের মতো সৎ স্বামী পেয়ে ধন্য হয়। আমি তখন তাকে জানালাম যে আমিই সে লোক ছিলাম।”

তিনি আল্লাহর জন্য কোন কিছু ত্যাগ করেছেন, তাই আল্লাহ্ তাকে এমন জিনিস দিয়ে প্রতিদান দিলেন যা ছিল আরো ভালো।

إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبَاً

ভাবাৰ্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম ও পবিত্র এবং তিনি উত্তম ও পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ (কবুল) করেন না।”