২৬১. অন্বেষণকারীর পথের নিশানা

যদি কেউ জানতে চায় যে সে সফলতার দিকে উচ্চস্তরে উঠেছে কি-না তবে তার উন্নতি নির্ধারিত ও নিশ্চিত করতে তাকে সাহায্য করার জন্য কতিপয় নিশ্চিত চিহ্ন ও নির্দেশনা আছে।

১. যে যত বেশি জ্ঞানী সে তত বেশি বিনয়ী ও অন্যদের প্রতি তত বেশি দয়া পরবশ হয়। একটি দামী মুক্তার কথা ভাবুন, এটা যত বেশি ভারী ও দামী হয় তত বেশি গভীর মহাসাগরে এটা থাকে। বিজ্ঞ ব্যক্তি জানেন যে, জ্ঞান যদিও দানস্বরূপ তবুও আল্লাহ যাকে জ্ঞান দান করেছেন তাকে তিনি জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা করেন। যখন কেউ জ্ঞানকে দান স্বরূপ পেয়ে কৃতজ্ঞ থাকে তখন তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (৫৮-সূরা আল মুজাদালাঃ আয়াত-১১)

২. যে যত বেশি আমলে সালেহ করে সে তত বেশি সতর্ক, ভীরু ও মোত্তাকী হয়। এ আশঙ্কায় যে সে ভুল থেকে (নিজেকে) নিরাপদ বা মুক্ত ভাবে না, যেমন নাকি কথার ভুল, অন্তরের পরিবর্তন (পাপ চিন্তা)। সে সর্বদা নিজেকে পাহারা দেয় ও সতর্ক থাকে। সে সতর্ক পাখির মতো; যখনই সে গাছের কোন ডালে বসে তখনই সে দক্ষ শিকারী ও তার গুলির ভয়ে এটাকে ছেড়ে আরেক ডালে উড়ে চলে যায়।

৩. যে যত বেশি বয়স্ক বা বৃদ্ধ হয় এ দুনিয়ার প্রতি তার তত কম লোভী হওয়া উচিত। কেননা সে নিশ্চয় বুঝতে পারছে যে, তার সময় শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।

৪. যে যত বেশি সম্পদশালী হয়, তার অন্যের প্রতি তত বেশি বদান্য ও উদার হওয়া উচত। একজন ধনী মুসলিমের বুঝা উচিত যে, তার সম্পদ তাকে আমানতস্বরূপ দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে সে সম্পদের মাঝে পরীক্ষা করছেন এ মনোভাব পোষণ করা।

৫. সমাজে যার যত বেশি পদমর্যাদা হয়, জনগণের প্রতি বিনয় প্রদর্শন করে ও তাদের প্রয়োজন পূরণ করে তার তত বেশি তাদের নিকটবর্তী হওয়া উচিত।

কিন্তু অবনতির চিহ্নও আছে-

১. যে যত বেশি জ্ঞানার্জন করে সে তত বেশি উদ্ধত হয়। এ ধরনের লোকের জ্ঞান কল্যাণকর নয়। তার হৃদয় শূন্য ও তার সঙ্গ দুর্বিসহ।

২. যে যত বেশি কাজের হয়, তত বেশি সে গর্বিত হয় এবং তত বেশি সে অন্যদেরকে অবজ্ঞা করে। সে শুধুমাত্র নিজেকেই সন্দেহের কল্যাণ (ক্ষতি ও ধ্বংস- অনুবাদক) দান করে। এভাবে সে ভাবে যে, সেই শুধুমাত্র মুক্তি অর্জন করছে। আর অন্যেরা সবাই ধ্বংসে হতে বাধ্য।

৩. যে যত বেশি বয়স্ক হয় তত বেশি কৃপণতা ও অর্থ-লিন্সা তার চরিত্রের অংশ হয়। সে সঞ্চয় করে কিন্তু সে কখনও বিলি করে না। দুর্যোগ-দুর্বিপাক ইত্যাদি তাকে অন্যদের প্রতি বদান্য হতে নাড়া দিতে ব্যর্থ হয়।

৪. সমাজে তার যত মর্যাদা হয়, তার ঔদ্ধত্যের মাত্রাও ততবেশি হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

يحشر المتكبرون يوم القيامة في صورة الذر يطؤهم الناس باقدامهم

ভাবার্থঃ “বিচার দিবসে অহংকারীদেরকে পিঁপড়ার আকারে জমায়েত করা হবে। মানুষেরা তাদেরকে পদদলিত করবে।”

উপরে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়েই আমি আল্লাহর এমন কিছু করুণার কথা উল্লেখ করেছি। যা দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন, সে সব বান্দাদের কিছু বান্দা পরীক্ষায় পাস করবে অন্যরা হবে ব্যর্থ।