যে ব্যক্তি বিচক্ষণতার সাথে ব্যয় করে সে অন্যের উপর নির্ভর করা থেকে বাঁচতে পারে। একজন আরব কবি বলেছেন-

اجمع نقودك إنّ العزّ في المال ** واستغن ما شئتَ عن عمّ و عن خال

তোমার ধন-সম্পদকে সঞ্চয় করে রাখ, কেননা সম্পদের মাঝে সম্মান আছে, তাহলেই যতক্ষণ ইচ্ছা চাচা ও মামা থেকে অমুখাপেক্ষী থাকতে পারবে।

যে দর্শন অপব্যয় বাড়ায় তা ভিত্তিহীন বা ভুল এবং তা মানুষের কল্যাণের পক্ষে ক্ষতিকর। এমন ধারণার মূল ভারতে পাওয়া যায় বা এ ধারণা উৎপত্তি মূৰ্খ সূফীদের থেকে। আসলে ইসলাম সৎভাবে অর্থ উপার্জনের প্রতি ও যথাযথভাবে সে অর্থ ব্যয় করার প্রতি উৎসাহ দেয়। এই দুই মূলনীতি মানুষকে তার সম্পদের মাধ্যমে সম্মানিত করে। নিম্নে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীই একথার প্রমাণ বা দলীল-

نعم المال الصالح في يد الرجل الصالح

অর্থাৎ, “সৎ মানুষের হাতে সৎ (সৎভাবে উপার্জিত) সম্পদ কতইনা ভাল!”

ধনীর বিপরীতে আছে ঋণী ও অভাবী, ঋণী ব্যক্তি সর্বদা এ দুশ্চিন্তা করে যে, তার সব সম্পদ তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে আর অভাবী লোকতো সর্বদা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার উপকরণ পাওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফুরি ও অভাব থেকে আশ্রয় চাই।”

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন- “অভাব প্রায় কুফুরীর মতো”

পূর্বোক্ত হাদীস ও (নিম্নোক্ত) ইবনে মাজাহ শরীফের হাদীসের মাঝে কোন বিরোধ নেই-

“দুনিয়াতে অল্পে তুষ্ট হও, তাইলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং অন্যের যা আছে তা পেতে চেও না, তাহলে মানুষেরাও তোমাকে ভালোবাসবে।”

নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে এ হাদীসে কিছুটা সমস্যা আছে, তবুও মনে করুন যে, এটি দুর্বল নয়। আর এ হাদীসের অর্থ হলো যে, প্রয়োজনীয় জিনিস থাকলেই আপনার তৃপ্ত থাকা উচিত এবং আপনার সে পরিমাণ সম্পদ থাকলেই পরিতৃপ্ত থাকা উচিত যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করতে হয় না ও অন্যের সাহায্য চাইতে হয় না। একই সময়ে আপনার মহৎ ও স্ব-নির্ভর থাকা উচিত এবং নিজেকে অন্যের নিকট সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত রাখার মতো যথেষ্ট উপকরণ আপনার থাকা উচিত।

“আর যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী হতে চায় আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী বানিয়ে দেন।”

একজন আরব কবি বলেছেন-

“স্রষ্টা ছাড়া আমি কখনও অন্য কারো কাছে হাত বাড়াইনি,

আর আমি কখনও এমন কারো কাছে একটি টাকাও চাইনি যে তার করুণার কথা অন্যদেরকে মনে করিয়ে দেয়।”

একখানি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় রেখে যাও তবে তারা মানুষের নিকট হাত পাতবে। এর চেয়ে বরং তোমার জন্য এটা ভালো যে, তুমি তাদেরকে ধনী অবস্থায় রেখে যাও।”

আরেকটি সহীহ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে ভালো।” এ হাদীসের অর্থ হলো- দাতা গ্রহীতার চেয়ে ভালো।

“মানুষের নিকট সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে মূৰ্খরা তাদেরকে ধনী মনে করে।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২৭৩)

নিচের আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, অন্যের থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য কারো-তোষামোদ করা কারো উচিৎ নয়, কেননা, আল্লাহ আমাদের রিযিকের নিশ্চয়তা দান করেছেন।”

“তবে কি তারা তাদের নিকট ইজ্জত পেতে চায়? বস্তুত নিশ্চয় সকল ইজ্জত আল্লাহরই।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-১৩৯)

أنا لا أرغب تقبيل يد ٭ قطعها أحسن من تلك القبل

إن جزتني عن صنيع كنت في ٭ رقها أولى فيكفيني الخجل

“অন্যের হাতে চুমু খাওয়ার আমার কোন ইচ্ছে নেই।

আমার জন্য চুমু খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো।

যখন কেহ আমাকে দয়া করে তখন সে আমাকে দাস বানায়।

অথবা, যদি তা না হয়, তবে কমপক্ষে আমি লজ্জিত হই