একবার খলিফা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ‘‘আল্লাহর মাল থেকে আপনি কতটুকু গ্রহণ করা নিজের পক্ষে বৈধ মনে করেন?’’

তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘শীত ও গ্রীষ্মের জন্য দু’ খান কাপড়, হজ্জ-ওমরার জন্য সওয়ারীর জন্তু এবং কুরাইশের কোনো মাঝারি পরিবারের সমমানের খাদ্য আমার ও পরিবারবর্গের জন্য। এরপরে আমি সাধারণ মুসলিমের মতই একজন মুসলিম। তারা যা পাবে আমিও তাই পাব।”

সাধারণত এরকমই তাঁর জীবন ছিল। কখনো কখনো বরং তিনি বৈধ বিষয়েও নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করতেন। একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য মধূ ব্যবহার করতে বলা হলো। বাইতুল মালে প্রচুর মধু ছিল। তিনি মিম্বরে আরোহণ করে মুসলিমদের বললেন, ‘‘তোমরা অনুমতি দিলে মধু ব্যবহার করতে পারি, তা না হলে এটা আমার জন্য হারাম।” তৎক্ষণাৎ উপস্থিত সবাই অনুমতি দিয়ে দিল।

মুসলিমরা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই কঠোরতা দেখে তাঁর কন্যা হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন যে, তিনি যেন তাঁর পিতাকে এই কৃচ্ছতাসাধন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। কারণ এখন মুসলমানরা সচ্ছল ও তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পূর্ণ অনুমোদন রয়েছে। হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা যখন পিতাকে একথা বললেন, তখন তিনি জবাব দিলেন, ‘‘হাফসা, তুমি তোমার জাতির পক্ষপাতিত্ব করছো আর নিজের পিতার সাথে অহিতাকাংখী আচরণ করছো। আমার পরিবারের লোকদের আমার জানে ও মালে অধিকার রয়েছে, কিন্তু আমার ধর্ম ও আমানতদারীতে কোনো অধিকার নেই।”

উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময়ে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন তিনি শপথ করেন যে যতদিন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে, ততদিন তিনি ঘি ও মাংস স্পর্শ করবেন না। তিনি এই প্রতিজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। ফলে তেল খেতে খেতে তাঁর শরীরের চামড়া শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। এর কিছুদিন পরে বাজারে দুটো পাত্রে দুধ ও ঘি বিক্রি হতে দেখা গেল। ওমরের ভৃত্য চল্লিশ দিরহাম দিয়ে তা কিনে এলো। সে এসে তাঁকে বলল, ‘এখন আল্লাহ আপনার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে দিয়েছেন। বাজারে দুধ ও ঘি বিক্রির জন্য এসেছে, আমি তা কিনে এনেছি।” কিন্তু যখন তিনি তার দাম জানতে পারলেন তখন বললেন, ‘‘খুব চড়া দামে কিনেছ, দুটোই সাদাকা করে দাও। আমি অপব্যয় পছন্দ করি না।” তারপর কিছুক্ষণ তিনি মাথা নিচু করে চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, ‘‘জনগণের যে দূরবস্থা হয়, তা যদি আমারও না হয়, তাহলে তাদের সমস্যার গুরুত্ব আমি বুঝব কি দিয়ে?’’

একবার তিনি এক ব্যক্তির সাথে একটি ঘোড়ার দরদস্তুর করেন। তারপর পরীক্ষা করে দেখার জন্য সেটায় সওয়ার হয়ে দৌড়াদৌড়ি করেন। হঠাৎ সেটা ঠোকর খেয়ে পড়ে যায় এবং আহত হয়। তিনি ঘোড়া ফিরিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু মালিক ঘোড়া ফেরত নিতে অসম্মতি জানালো। শেষ পর্যন্ত দুজনে মামলা নিয়ে কাজী শুরাইহের আদালতে গিয়ে হাজির হলেন। শুরাইহ উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে রায় দিলেন, ‘‘আমিরুল মুমিনীন, আপনি যে জিনিস কিনেছেন তা নিয়ে নিন। অথবা যে অবস্থায় ওটা নিয়েছিলেন সে অবস্থায় ফেরত দিন।” উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন, ‘‘একেই বলে ন্যায়বিচার।” তারপর তিনি শুরাইহকে কুফার বিচারপতি নিযুক্ত করেন।