আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র দলীলসমূহ এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিচার-বিবেচনা ও মানদণ্ড প্রমাণ করে যে, এমনসব অপরিচিত বা পরপুরুষ থেকে নারী কর্তৃক তার চেহারা ঢেকে রাখাটা বাধ্যতামূলক, যারা তার মাহরাম কেউ নন অথবা তার স্বামীও নন। আর কোনো বিবেকবান ব্যক্তি সন্দেহ পোষণ করে না যে, যখন নারীর ওপর তার মাথা ঢেকে রাখা ও তার পদযুগল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক, যখন তার সজোরে পদচারণা না করাটা ওয়াজিব, যেভাবে করলে তার গোপন সৌন্দর্য, পায়ের অলংকার ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার অধিক সম্ভবনা থাকে, তখন মুখমণ্ডল ঢেকে রাখাটা তো আরও অনেক জোরালোভাবেই ওয়াজিব ও বাধ্যতামূলক, আর এটা এ জন্য যে, তার মাথার চুলসমূহ থেকে কিছু চুল অথবা তার পদযুগলের নখসমূহ থেকে কোনো একটি নখ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অর্জিত ফিতনার চেয়ে চেহারা খোলার কারণে অর্জিত ফিতনার বিষয়টি আরও অনেক বেশি ভয়াবহ। আর যখন বুদ্ধিমান মুমিন ব্যক্তি এ শরী‘আত এবং তার বিধিবিধান ও তাৎপর্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবে, তখন পরিষ্কার হয়ে যাবে -এটা অসম্ভব যে, নারীকে (প্রথমে) মাথা, গর্দান, বাহু, পা ও পায়ের পাতা ঢেকে রাখার ব্যাপারে বাধ্য করা হবে, অথচ নারীর জন্য বৈধ করে দেওয়া হবে তার দুই হাতের তালু প্রকাশ করাকে এবং তার মুখমণ্ডল প্রকাশ করাকে, যা সৌন্দর্য ও রূপমাধুর্যে ভরপুর। কারণ, এটা হিকমত পরিপন্থী। আর আজকের এ যুগে মানুষের মাঝে (নারীর) চেহারা ঢেকে রাখার ব্যাপারে যে অবহেলা দেখা যাচ্ছে, যা এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে যে, নারী অপরাপর বিষয়গুলোকেও অবহেলা করা শুরু করেছে। যেমন, নারী কর্তৃক তার মাথা, গর্দান, বক্ষ ও দুই বাহু খোলা রাখা এবং কোনো ইসলামী দেশে বাজারে বাজারে তার বেপরোয়া চলাফেরা করা ইত্যাদি ইত্যাদি... বিষয়ে যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা করবেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই জানতে ও বুঝতে পারবেন, হিকমত বা প্রজ্ঞার দাবি হলো, নারীগণ কর্তৃক অবশ্যই তাদের চেহারাগুলো ঢেকে রাখতে হবে।

অতএব, হে নারী! তোমার অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হলো, তুমি মহান আল্লাহকে ভয় করবে এবং তোমার ওপর ফরয করা পর্দা যথাযথভাবে পালন করবে, স্বামী ও মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্যান্যদের থেকে সমস্ত শরীর ঢেকে রাখবে, যে ব্যবস্থাপনার সাথে কোনো ফিতনার আশঙ্কা নেই। আর যখন আমরা পরপুরুষের উদ্দেশ্যে নারীর বেপর্দা ও মুখ খুলে রাখার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব, তখন আমরা সে বিষয়টিকে বহু ফিতনা-ফাসাদের উদ্দীপক হিসেবে দেখতে পাব। আর যদি তাতে কোনো কল্যাণ ও উপকার আছে বলে ঠিক করা হয়, তাহলে তা ফিতনা-ফাসাদের তুলনায় খুবই নগণ্য। সে সব ফিতনা-ফাসাদ ও গোলযোগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় নিম্নরূপ:

১. ফিতনা বা সম্মোহন: কারণ, নারী যখন তার চেহারা খুলে ফেলবে, তখন তার কারণে পুরুষগণ ফিতনার শিকার হবে, বিশেষ করে যদি সে যুবতী বা রূপসী হয় অথবা সে যদি এমন কিছু করে, যা তার চেহারাকে সুন্দর ও লাবণ্যময়ী এবং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান করে তুলে। আর এটা অনিষ্টতা, খারাপ পরিবেশ ও ফাসাদ সৃষ্টি অন্যতম বড় একটি কারণ।

২. নারীর লজ্জা-শরমের অবসান, যা ঈমানের অঙ্গ এবং তার স্বভাব-প্রকৃতির অন্যতম দাবি: কারণ, নারী হলো লজ্জা-শরমের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত পেশ করার জায়গা। যেমন বলা হয়: ‘আমি অন্তঃপুরে অবস্থানরত কুমারী থেকে লজ্জা অনুভব করি।’ আর নারীর লজ্জা চলে যাওয়া মানে তার ঈমানের ব্যাপারে ঘাটতি হওয়া এবং এমন স্বভাব-প্রকৃতির গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়া, যে স্বভাব-প্রকৃতির ওপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

৩. তার সাথে পুরুষদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং তাদের কর্তৃক তার পিছনে লাগা: বিশেষ করে সে যখন সুন্দরী হয় এবং তার পক্ষ থেকে যখন তোষামোদ, হাসাহাসি ও রসিকতা জাতীয় আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমনটি সাধারণত অধিকাংশ বেপর্দা নারীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, আর বলা হয়ে থাকে, প্রথমে দেখা, তারপর সালাম বিনিময়, তারপর কথা, তারপর প্রতিশ্রুতি, তারপর একান্ত সাক্ষাৎ। আর শয়তান তো আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় চলমান। সুতরাং অনেক কথা, হাসি ও আনন্দ আছে, যা নারীর সাথে পুরুষের মনের সম্পর্ক এবং পুরুষের সাথে নারীর মনের সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে আবশ্যক করে তুলে, অতঃপর এর ফলে এমন খারাপী ও নষ্টামীর সূচনা হয়, যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর থেকে নিরাপত্তা চাই।

৪. পুরুষদের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা: কারণ, চেহারা খুলে রাখা এবং বেপর্দা অবস্থায় চলাফেরা করার ব্যাপারে নারী যখন নিজেকে পুরুষদের সমান মনে করে, তখন সে পুরুষদের সাথে ধাক্কাধাক্কি ও ঘষাঘষি করা থেকে লজ্জা ও অপমান বোধ করে না, আর এর মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা ও প্রচুর পরিমাণে পাপের ব্যাপার রয়েছে।