সাওম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা সাওম পালনকারীর শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (Inhaler/ইনহেলার বা Puffer/পাফার) ব্যবহারের বিধান ইসলামহাউজ.কম
সাওম পালনকারীর শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (Inhaler/ইনহেলার বা Puffer/পাফার) ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: অনেক মানুষ এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং তাদের অনেকেই স্প্রে ব্যবহার করে। এই স্প্রের বোতলের মধ্যে থাকে তরল ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থ, ঔষধি অন্যান্য উপাদান এবং অক্সিজেন। স্প্রে চেপে ধরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে এই ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। মুখ দিয়ে এটি গলনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে শ্বাসনালী হয়ে যকৃতে চলে যায়। এর কিছু অংশ গলনালীতে থেকে যায়। আবার এর খুব সামান্য পরিমাণ পেটের ভেতরেও প্রবেশ করে। এক্ষণে রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য এই স্প্রে ব্যবহারের বিধান কী?

পর্যালোচনা: আধুনিক যুগের ওলামায়ে কেরাম এই মাসআলায় দুই ধরণের মতামত পেশ করেছেন:

প্রথম মত: রমযানের দিনের বেলায় সাওম পালনকারীর এই স্প্রে ব্যবহারে কোনো দোষ নেই। এটি সাওম ভঙ্গকারী হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা স্প্রের যে অংশ পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, তা খুবই সামান্য। ফলে কুলি করলে ও নাকে পানি দিলে যেমন খুব সামান্য পরিমাণ পানি ভেতরে গেলেও সাওম ভেঙ্গে যায় না, ঠিক তেমনি স্প্রের এই সামান্য অংশও সাওম ভঙ্গকারী গণ্য হবে না।

আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক, শ্বাসকষ্ট উপশমকারী একটি স্প্রের বোতলে সব মিলিয়ে ১০ মি. লি. তরল থাকে, যা দিয়ে ২০০ বার স্প্রে করা যায়। দেখা যায়, প্রত্যেক বার স্প্রেতে এক ফোটারও কম তরল পদার্থ থাকে। এই এক ফোটারও কম তরল পদার্থ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় ভাগটি প্রবেশ করে শ্বাসনালীতে, ছোট ভাগটি থেকে যায় গলনালীতে এবং খুব সামান্য পরিমাণ পেটে প্রবেশ করতে পারে। এই অতি সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ কোনো ব্যাপার না, যেমনিভাবে কুলি ও নাকের সামান্য অংশ পানি ব্যাপার না, বরং কুলি করলে ও নাকি পানি দিলে যে পরিমাণ পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তা স্প্রের ভেতরে প্রবেশকারী অংশের চেয়ে বেশি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্প্রের কিছু অংশ যে পাকস্থলীতে প্রবেশ করবেই তা কিন্তু নিশ্চিত নয়; প্রবেশ করতেও পারে, নাও পারে। নিয়ম হচ্ছে, নিশ্চিত কোনো বিষয় সন্দেহপূর্ণ কোনো বিষয়ের দ্বারা বিদূরিত হবে না (اليقين لا يزول بالشك)। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ডাক্তারগণ বলে থাকেন, আরাক গাছের মিসওয়াকে আট প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা দাঁত ও মাঢ়িকে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করে। পদার্থগুলো লালার সাথে মিশে গলনালীতে প্রবেশ করে। আমের ইবন রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَسْتَاكُ وَهُوَ صَائِمٌ» مَا لاَ أُحْصِي أَوْ أَعُدُّ»

“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন অবস্থায় অসংখ্য বার মিসওয়াক করতে দেখেছি”।[1] মিসওয়াকের ঐ পদার্থ খুব সামান্য পরিমাণ হওয়ার কারণে এবং উদ্দিষ্ট না হওয়ার কারণে পাকস্থলীতে পৌঁছা সত্ত্বেও তা সাওমের কোনো ক্ষতি করে না। অনুরূপভাবে ঠিক একই কারণে স্প্রের যে সামান্য অংশ ভেতরে প্রবেশ করে, তাও সাওমের কোনো ক্ষতি করবে না।

সঊদী আরবের ফাতওয়া বোর্ডের স্থায়ী কমিটি এই মত গ্রহণ করেছেন।

দ্বিতীয় মত: শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (ইনহেইলার) গ্রহণে সাওম ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং যরূরী প্রয়োজনে যদি সাওম অবস্থায় রোগীকে এই স্প্রে গ্রহণ করতে হয়, তাহলে তাকে ঐ দিনের সাওম কাযা আদায় করতে হবে। মুহাম্মাদ তাক্বীউদ্দীন উসমানী এবং ড. ওয়াহবা যুহায়লী এই মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন।তাদের দলীল হচ্ছে, যেহেতু এই স্প্রের উপাদান পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে। তাদের মতে, যারা বলছেন যে, এটি পাকস্থলীতে যায় না; বরং শ্বাসনালীতে সীমাবদ্ধ থাকে, তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। ফলে, এর সামান্য অংশ হলেও যেহেতু পাকস্থলীতে যায়, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে।

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৭২৫। তিনি হাদীসটিকে ‘হাসান সহীহ বলেছেন।