ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল্লাহর দিকে দাওয়াতের সম্বল তৃতীয় সম্বল - হিকমত বা প্রজ্ঞা ইসলামহাউজ.কম
হিকমত বা প্রজ্ঞা

হিকমতের সাথে দাওয়াত দিবে। প্রজ্ঞাহীনকে হিকমতের সাথে আহ্বান করতে হবে। আল্লাহর পথে দাওয়াত শুরু করতে হবে হিকমতের সাথে, অতঃপর সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে, তারপরে জালিম ব্যতীত অন্যান্যদের সাথে উত্তম পন্থায় বিতর্ক করে। তাহলে চারটি স্তরে দাওয়াত দিতে হবে।

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ ١٢٥ ﴾ [النحل: ١٢٥]

“তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন”। [সূরা: আন-নাহাল: ১২৫]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ ۞وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡكُمۡ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمۡ وَٰحِدٞ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ٤٦ ﴾ [العنكبوت: ٤٦]

“আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা যুলুম করেছে। আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী’’। [সূরা : আল্-আনকাবূত: ৪৬]

হিকমত হলো: কোন কিছু নিখুঁতভাবে ও দৃঢ়তার সাথে যথাস্থানে রাখা। তাড়াহুড়া করা হিকমত নয়। মানুষকে তার বর্তমান অবস্থা থেকে পরিবর্তন করে রাতারাতি সাহাবীদের জীবনাদর্শে রূপান্তরিত করতে চাওয়া কোন হিকমত নয়। আর যে ব্যক্তি এরূপ আশা করে সে নিছক মূর্খ, বোকা এবং প্রজ্ঞাহীন। কেননা আল্লাহর হিকমত এ ধরনের কাজ অস্বীকার করে। এর প্রমাণ হলো রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে কুরআন নাযিল হয়েছে যাতে মানুষের অন্তরে তা স্থির হয় ও পূর্ণতা পায়। হিজরতের তিন বছর পূর্বে মিরাজের রাত্রিতে সালাত ফরয হয়েছে। কারো মতে হিজরতের দেড় বছর বা পাঁচ বছর পূর্বে। এতদসত্ত্বেও বর্তমান অবস্থায় আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি তখন সেভাবে পূর্ণরূপে সালাত ফরয হয়নি। প্রথমে যোহর, আসর, ইশা ও ফজরে দু’রাক‘আত করে সালাত ফরয ছিল। মাগরিবে তিন রাক‘আত ফরয ছিল, যেন তা দিনের বেজোড় হয়। রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের বছর মক্কায় কাটানোর পর হিজরতের পরে মুকিম অবস্থায় সালাতের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে যোহর, আসর ও ইশায় চার রাক‘আত ফরয করা হয় এবং ফজরে দু’রাক‘আত পূর্বের মতই অবশিষ্ট থাকে। কেননা ফজরে কিরাত দীর্ঘ করা হয়। মাগরিবে তিন রাক‘আতই থাকে, কেননা তা দিনের বেজোড় সালাত।

দ্বিতীয় হিজরীতে যাকাত ফরয হয়। কারো মতে যাকাত মক্কায় ফরয হয়। কিন্তু তখন যাকাতের নিসাব ও হকদার কিছুই ফরয হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের জন্য নবম হিজরীর আগে কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করেন নি। যাকাত আদায়ের তিনটি ধাপ অতিবাহিত হয়েছে। মক্কায় ফরয হয়েছে,

﴿ ۞ وَءَاتُواْ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۖ ١٤١ ﴾ [الانعام: ١٤١]

“এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও”। [সূরা : আল-আন'আম: ১৪১]

তখন ফরযের বিধান ও পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। বিষয়টি মানুষের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরীতে যাকাতের নিসাব ও হকদার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। নবম হিজরীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশু ও শস্যের মালিকদের কাছে যাকাত আদায়ের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করেন।

আহকামুল হাকেমীন মহান আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শরী‘য়ত প্রণয়নে মানুষের অবস্থা কিভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে তা নিয়ে একটু ভাবুন। এমনিভাবে সিয়ামের বিধান ক্রমবিকাশে মানুষের অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা হয়েছে। প্রথমে সিয়াম পালন করা বা সিয়ামের পরিবর্তে লোকদেরকে খাদ্য দেয়ার ব্যাপারে মানুষকে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। অতঃপর সবার জন্য সিয়াম ফরয করা হয়। আর যারা সিয়াম পালনে অক্ষম শুধু তাদের ক্ষেত্রে সিয়ামের পরিবর্তে খাদ্য প্রদানের বিধান বহাল থাকে।

আমি বলব, রাতারাতি বিশ্বকে পরিবর্তন করা হিকমতের পরিপন্থী। অবশ্যই এতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হবে। প্রথমে আপনি আপনার ভাই বর্তমান যে মতের উপর আছে তা সত্য মনে করে তার কাছে দাওয়াত নিয়ে যান, আস্তে আস্তে তার ভুল ভ্রান্তি শুধরিয়ে দেন। তবে সব মানুষ এক রকম নয়। অজ্ঞ ও সত্যকে অস্বীকারকারীর মধ্যে তফাত আছে।

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের কিছু নমুনা দেয়াটা উপযোগী মনে করছি।

প্রথম উদাহরণ:

এক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে (মসজিদে নববী) প্রবেশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন। বেদুঈনটি মসজিদের এক পাশে পেশাব করল। সাহাবীগণ তাকে কঠোরভাবে ধমক দিল। কিন্তু আল্লাহর হিকমত প্রাপ্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে পেশাব করতে বারণ না করে লোকদেরকে ধমক দিতে বারণ করলেন। বেদুঈন লোকটি পেশাব শেষ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন লোকটির পেশাবের উপর এক বালটি পানি ঢেলে দিতে। ফলে মসজিদ থেকে ময়লা দূর হলো এবং পবিত্র হয়ে গেল। আর বেদুঈন লোকটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বললেন:

«إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ»

“মসজিদসমূহে কষ্টদায়ক ও অপবিত্রকর কিছু করা উচিত নয়, এগুলো নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের স্থান”। [1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সুন্দর আচরণ লোকটির হৃদয় গলে গেল। এজন্যই কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে লোকটি বলল:

«اللهم ارحمني ومحمداً ولا ترحم معنا أحداً»

“ইয়া আল্লাহ! আমাকে ও মুহাম্মদকে দয়া করো, আমাদের সাথে কাউকে দয়া করো না”।

কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সুন্দর আচরণ করেছেন। পক্ষান্তরে সাহাবীগণ অজ্ঞ লোকটির অবস্থা না বুঝে অন্যায় কাজ দূর করতে এগিয়ে এসেছিল যা হিকমতের পরিপন্থী ছিল।

দ্বিতীয় উদাহরণ: মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ঘটনা।

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ السُّلَمِيِّ، قَالَ: بَيْنَا أَنَا أُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ، فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ، مَا شَأْنُكُمْ؟ تَنْظُرُونَ إِلَيَّ، فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ، فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي، مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ، فَوَاللهِ، مَا كَهَرَنِي وَلَا ضَرَبَنِي وَلَا شَتَمَنِي، قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلَامِ النَّاسِ، إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ» أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম আস-সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছিলাম। ইত্যবসরে আমাদের মধ্যে একজন হাঁচি দিল। আমি ইয়ারহামুকাল্লহ বললাম। তখন লোকেরা আমার দিকে আড়চোখে দেখতে লাগল। আমি বললাম “তার মায়ের পূত্র বিয়োগ হোক”। তোমরা আমার প্রতি তাকাচ্ছ কেন? তখন তারা তাদের উরুর উপর হাত চপড়াতে লাগল। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, তখন আমি চুপ হয়ে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম সালাত শেষ করলেন, আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্য কুরবান হোক! আমি তার মত এত সুন্দর করে শিক্ষা দিতে পূর্বেও কাউকে দেখিনি, তাঁরপরেও কাউকে দেখি নি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, মারলেন না, গালিও দিলেন না। বরং বললেন, “সালাতে কথা কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। বরং তা হচ্ছে- তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্য”। [2]

হাদীসে বর্ণিত, واثكل أمِّياه “তার মায়ের পুত্র বিয়োগ হোক”, বাক্যটি শুধু মুখে উচ্চারণ করা হয়, কিন্তু এর আসল অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয় না। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাটি মু‘য়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছিলেন,

«أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ، وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ».

“এরপর বললেন: এ সব কিছুর মূল পুঁজি সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব কি? আমি বললাম: অবশ্যই, ইয়া রাসূলাল্লাহ!তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেন: এটিকে সংযত রাখ। আমি বললাম: হে আল্লাহর নবী! আমরা যে কথাবার্তা বলি সেই কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন: তোমাদের মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু’আয! লোকদের অধ:মুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য এই যবানের কামাই ছাড়া আর কি কিছু আছে নাকি?” [3]

এ হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন যা মানুষের অন্তর প্রশস্ত হয়ে গেছে এবং তারা উদার চিত্তে সে দাওয়াত কবুল করেছেন।

এ হাদীস থেকে আমরা ফিকহী কিছু মাস’য়ালা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। তাহলো: কেউ যদি না জেনে সালাতে কথা বলে তবে তার সালাত শুদ্ধ।

তৃতীয় উদাহরণ:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: هَلَكْتُ، يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «وَمَا أَهْلَكَكَ؟» قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ، قَالَ: «هَلْ تَجِدُ مَا تُعْتِقُ رَقَبَةً؟» قَالَ: لَا، قَالَ: «فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ؟» قَالَ: لَا، قَالَ: «فَهَلْ تَجِدُ مَا تُطْعِمُ سِتِّينَ مِسْكِينًا؟» قَالَ: لَا، قَالَ: ثُمَّ جَلَسَ، فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ، فَقَالَ: «تَصَدَّقْ بِهَذَا» قَالَ: أَفْقَرَ مِنَّا؟ فَمَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا أَهْلُ بَيْتٍ أَحْوَجُ إِلَيْهِ مِنَّا، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ، ثُمَّ قَالَ: «اذْهَبْ فَأَطْعِمْهُ أَهْلَكَ»

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের নিকট এসে বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। তিনি বললেন কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল আমি রময়াদান মাসে সওমরত অবস্হায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি বললেন তোমার কোন ক্রীতদাস আছে কি যাকে তুমি আযাদ করে দিতে পার? সে বলল, না । তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি ক্রমাগত দুই মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। পুনরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না । তারপর সে বসে গেল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হল। তিনি লোকটিকে বললেন এগুলো সদকা করে দাও। তখন সে বলল আমার চেয়েও অভাবী লোককে সদকা করে দিব? (মদীনার) দুটি কংকরময় ভূমির মধ্যস্হিত স্থানে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবী পরিবার আর একটিও নেই। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম হেসে দিলেন। এমনকি তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন তিনি বললেন, তাহলে যাও এবং তোমার পরিবারকে খেতে দাও”। [4]

ফলে লোকটি ইসলাম ধর্মের প্রতি ও এ ধর্মের সর্বপ্রথম দা‘য়ী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহজ সরলতায় মুগ্ধ হয়ে প্রশান্ত চিত্তে হাসি খুশী মুখে ফিরে গেল। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

চতুর্থ উদাহরণ: এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন গুনাহগারের সাথে কিভাবে আচরণ করেছেন তা লক্ষ্য করুন।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ، وَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»، فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خُذْ خَاتِمَكَ انْتَفِعْ بِهِ، قَالَ: لَا وَاللهِ، لَا آخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

“আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে সোনার আংটি পরিধান করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে আংটিটি খুলে নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর তিনি বললেন:

«يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»

“কেউ কি ইচ্ছাকৃতভাবে আগুনের এক টুকরা পাথর নিয়ে হাতে পরিধান করবে?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে রূঢ় আচরণ করেন নি। বরং তিনি নিজ হাতে আংটিটি যমিনে নিক্ষেপ করে ফেলে দিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে তাকে বলা হলো: “তুমি তোমার আংটিটি নাও। সে তখন বলল: “আল্লাহর কসম, যে আংটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিক্ষেপ করে ফেলে দিয়েছেন সে আংটি আমি নিবো না”।[5]

আল্লাহু আকবর। এটা ছিল সাহাবীদের তাৎক্ষণিক আমলের নমুনা। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।

মূলকথা হলো, দা‘য়ীকে হিকমতের সাথে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে হবে।তবে অজ্ঞ ব্যক্তি আলেমের মত নয়, অস্বীকারকারী আত্মসমর্পণকারীর মত নয়। প্রত্যেক স্তরের লোকের জন্য আলাদা আলাদা কথা এবং মর্যাদা ও অবস্থা অনুসারে তাকে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।

>
[1] বুখারী, হাদীস নং ৬০২৫।

[2] মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭।

[3] তিরমিযি, হাদীস নং ২৬১৬।

[4] বুখারী, হাদীস নং ৬৭০৯, মুসলিম, হাদীস নং ১১১১।

[5] মুসলিম, হাদীস নং ২০৯০।